সান ফ্রান্সিসকো: বিগত এক সপ্তাহ ধরে তোলপাড় টুইটার সংস্থা (Twitter)। ইলন মাস্ক টুইটারের মালিকানা অধিগ্রহণের পরই একাধিক বদল এসেছে টুইটার সংস্থায়। কাজ হারানোর ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন কর্মীরা। ইতিমধ্যেই শুক্রবার টুইটার সংস্থার ৫০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। যারা এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছেন, তারাও ভীত। রাতভর অফিসে বসে কাজ করছেন তারা। ঘুমোচ্ছেনও অফিসে। শুক্রবার যারা চাকরি খোয়ালেন, এবার তারা মুখ খুলতে শুরু করলেন। নিজেদের ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টুইটারের এক সদ্য প্রাক্তন কর্মী বলেন, “অদ্ভুত এক সপ্তাহ ছিল এটা। এগজেকিউটিভরা রাতারাতি চাকরি হারাচ্ছিলেন। কেউ আবার নিজেই ইস্তফা দিচ্ছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার আগে সংস্থার তরফে নিশ্চিতভাবে কর্মী ছাঁটাই নিয়ে কোনও তথ্য়ই জানানো হয়নি।”
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার টুইটারের সমস্ত কর্মীদের কাছে ইমেইল আসে। তাতে জানানো হয়, শুক্রবারের মধ্যেই সমস্ত কর্মীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে। কার চাকরি থাকবে, আর কারা চাকরি খোয়াবেন, তা ইমেইল মারফত জানিয়ে দেওয়া হবে। টুইটার কর্মীদের মধ্যে যাদের ছাঁটাই করা হবে না, তাদের ইমেইল করে জানানো হবে। অন্যদিকে, যাদের ছাঁটাই করা হবে, তাদের ব্যক্তিগতভাবে ইমেইল করা হবে। সেই ইমেইলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে।
টুইটারের কর্মীদের সুরক্ষা, টুইটারের সিস্টেম ও গ্রাহকদের তথ্যের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে শুক্রবার টুইটারের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেড়ে নেওয়া হয় কর্মীদের অফিসে ঢোকার ব্যাজ। এরপর শুক্রবার রাত সাড়ে নটার দিকে ইমেইল আসা শুরু হয়। জানানো হয়, সংস্থার ৫০ শতাংশ কর্মীকেই ছাঁটাই করা হয়েছে।
সবথেকে বেশি সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে টুইটারের মার্কেটিং বিভাগে। ডিজাইন বিভাগের দুই-তৃতীয়াংশ কর্মীকেও ছাঁটাই করা হয়েছে। ৭৫ শতাংশ ম্য়ানেজাররাই কাজ হারিয়েছেন রাতারাতি। তবে কনটেন্ট মডারেশন, যারা টুইটারের যাবতীয় বিষয়বস্তু পরিচালন করেন, তাদের মধ্যে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। মাত্র ১৫ শতাংশ কর্মীদেরই এই বিভাগ থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গে টুইট করেন সংস্থার মালিক ইলন মাস্কও। তিনি টুইটেই বলেন, ” যখন সংস্থা দৈনিক ৪ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে, তখন এছাড়া (কর্মী ছাঁটাই) আর কোনও উপায় থাকে না।”
তবে টুইটারের কর্মীদের কথায় ছাঁটাইয়ে সিদ্ধান্তে তারা খুব একটা আশ্চর্য না হলেও, যে নির্মমভাবে কর্মীদের চাকরি খোয়ানোর কথা জানানো হয়েছে, তাতে তারা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। টুইটারে কর্মরত এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “কোনও ফোন বা ইমেইলের মাধ্যমে নয়, কর্মীরা হঠাৎ তাদের ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যেতে দেখে বুঝতে পারেন যে তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। কাজ করতে করতে হঠাৎই তাদের ল্যাপটপ রিবুট হয়ে যায় নিজে থেকে, তারপরই স্ক্রিন সম্পূর্ণ কালো হয়ে যায়।”
টুইটারের এভাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে কম্পানির একাধিক নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে। একাধিক কর্মী সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তাভাবনা করছেন।