কলকাতা: জীবন বীমা প্রকল্পে অনেকেই সঞ্চয় করেন। কিন্তু, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স বা ভ্রমণ বীমা করাটা অধিকাংশ ভারতবাসীই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বলে মনে করেন। ভ্রমণ বমা করাটা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার মধ্যে পড়ে না। কিন্তু এই বীমা যে কতটা দরকারি তা উপলব্ধি করা যায়, বিদেশ-বিভুঁইয়ে কোনও বিপদে পড়লে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও জরুরি অবস্থা যে কোনও সময় বেড়ানওর আনন্দ মাটি করে দিতে পারে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারি আসার পর থেকে, কখন কী হবে কিছুই বলা যায় না। বাড়ির বাইরে সাহায্য পাওয়াও কঠিন। তখন আর পস্তানো ছাড়া উপায় থাকে না। তার থেকে আগে ভাগে ব্যবস্থা নেওয়া ভাল নয় কি? আর ঠিক এই অবস্থা থেকে পর্যটকদের সুরক্ষা দিতেই বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে ভ্রমণ বীমার। কেন এই বীমা এত গুরুত্বপূর্ণ জানেন?
১. পাসপোর্ট, মালপত্র, বা অন্য কোনও নথি হারিয়ে যাওয়া
বেড়াতে গিয়ে এর থেকে খারাপ পরিস্থিতি আর কিছু হতে পারে না। ভ্রমণ বীমা করা থাকলে কিছুটা অন্তত সাহায্য পাওয়া যায়। পাসপোর্ট হারালে ডুপ্লিকেট পাসপোর্ট তৈরির খরচ বীমা সংস্থা পরিশোধ করবে। হারানো মালপত্রের ক্ষেত্রে, একটি অনুমোদিত পরিমাণ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মালপত্র দেরিতে পৌঁছনোর জন্য যা যা কিনতে হতে পারে, সাধারণত তার প্রতিদান দেওয়া হয়। অনেক বীমা সংস্থা কিছু জরুরী তহবিলও মঞ্জুর করে।
২. দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা
বেড়াতে গিয়ে অসুস্থ পড়তে কেউই চায় না। কিন্তু, এই মহামারির সময়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা যে কোনও সময়ে দেখা দিতে পারে। কিংবা গুরুতর শারীরিক আঘাতও লাগতে পারে। ভ্রমণ বীমা করা থাকলে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত হবে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার খরচ থেকে শুরু করে নিকটাত্মীয়দের ওই স্থানে উড়িয়ে নিয়ে আসা – বিভিন্ন সংস্থার ভ্রমণ বীমা এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের সুবিধা দিয়ে থাকে। অনেক ভ্রমণ বীমায় নগদহীন হাসপাতালে ভর্তির সুবিধাও দেওয়া হয়।
৩. ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব
ইদানিং এই সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয়। এয়ারলাইন্সের কোনও সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উড়ান বাতিল বা দেরি হতে পারে। আবার ব্যক্তিগত কোনও সমস্যার কারণেও যাত্রা বাতিল করতে হতে পারে। অধিকাংশ বীমা সংস্থাই পলিসির সময়সূচী অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত দেয়। একেবারে শেষ মুহূর্তে যাত্রা বাতিল করতে হলে, প্লেনের টিকেট, হোটেল বুকিং-এর খরচও পরিশোধ করে থাকে ভ্রমন বীমা। বিলম্বিত ফ্লাইটের ক্ষেত্রে, ভ্রমণ বীমাই অতিরিক্ত খরচ বহন করে। এর মধ্যে কোনও হোটেলে রাত্রিযাপন এবং খাবারও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৪. জরুরীভিত্তিতে স্থানত্যাগ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে আকস্মিকভাবে দেশত্যাগের চাহিদার কারণে বিমানের টিকিটের দাম কীভাবে বেড়েছিল, তা সকলেই দেখেছে। ভ্রমণ বীমা করা থাকলে, এই বিমান ভাড়ার অতিরিক্ত খরচ ফেরত পাওয়া যায়। একইভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও অতিরিক্ত টিকিটের মূল্য দিতে হতে পারে। সেই টাকাও পরিশোধ করে বীমা সংস্থা। কিংবা বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসার দরকার পড়লেও, অতিরিক্ত খরচ-খরচা ভ্রমণ বীমা থেকেই পাওয়া যায়।
৫. প্রতারণা
বেড়াতে গিয়ে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড হারিয়ে যাওয়াটাই দুঃস্বপ্নের। তার উপর যদি দেখা যায়, সেই কার্ড অন্য কেউ ব্যবহার করছে, তার থেকে ভয়ের আর কী হতে পারে? তবে ভ্রমণ বীমা করা থাকলে, ঘটনার প্রথম রিপোর্ট করার ১২ ঘন্টা আগে থেকে কার্ডের মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত দেবে বীমা সংস্থা।