নয়া দিল্লি: ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে রাফাল যুদ্ধ বিমান তৈরির জন্য ডাসল্ট অ্যাভিয়েশনের ভারতীয় অংশীদার হিসেবে অনিল অম্বানীর রিলায়েন্স ডিফেন্সকে বেছে নেওয়ার জন্য, নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিল বিরোধীরা। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা ‘হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড’ বা ‘হ্যাল’কে বঞ্চিত করে দেশীয় সংস্থাটিকে দুর্বল করে দিচ্ছে মোদী সরকার। অন্যদিকে, বিরোধীদের অভিযোগের পাল্টা জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের জেরে শক্তিশালী হবে হ্যাল। ৫ বছর পর দেখা যাচ্ছে হ্যাল মোটেই ডুবে যায়নি। বরং, সম্প্রতি আর্জেন্টিনা সরকার হ্যালের তৈরি হালকা এবং মাঝারি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার বা এলএমইউ হেলিকপ্টার ক্রয়ের জন্য চুক্তি করার পর, হ্যালের শেয়ার সোমবার এক শতাংশের বেশি বাড়ল। ফলে গত ৫ বছরে হ্যালের স্টকের মূল্য প্রায় ৫ গুণ বাড়ল।
গত শুক্রবার, বাজার বন্ধের সময় হ্যালের শেয়ারের দর ছিল ৩৮৫৪.৭০ টাকা। সোমবার (২৪ জুলাই), বাজার খোলে ৩৮৬৯.৯৫ টাকায়। সকাল ১১টায়, হ্যালের শেয়ারের দর ৪৮.৫৫ টাকা বা ১.২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৯০৩.০০ টাকা। গত পাঁচ বছরে, স্টক মার্কেটে হ্যালের শেয়ারের দর বেড়েছে ৩৯৪.৭২ শতাংশ। লেখক তথা কলামিস্ট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেছেন, “গত পাঁচ বছরে হ্যালের স্টক মূল্য প্রায় ৫ গুণ বেড়েছে। মনে আছে, ২০১৯ সালে বিরোধীরা পুরো প্রচারপর্ব জুড়ে বলেছিল, মোদী সরকার হ্যালকে ধ্বংস করছে।”
গত বৃহস্পতিবার, আর্জেন্টিনার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য হালকা এবং মাঝারি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার ক্রয়ের বিষয়ে হ্যালের সঙ্গে একটি ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ বা এলওআই স্বাক্ষর করেছে। বেঙ্গালুরুতে হ্যালের সদর দফতরে আর্জেন্টিনার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ তাইনা এবং হ্যালের চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিবি অনন্তকৃষ্ণাণ এই এলওআই স্বাক্ষর করেন। হ্যালের বিমানবন্দরে আর্জেন্টিনার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তাইনা এবং তার সঙ্গে আসা প্রতিনিধি দলের সামনে, সংস্থার তৈরি বিভিন্ন বিমান, কপ্টার ও ড্রোন উড়িয়ে দেখানো হয়। জানা গিয়েছে, হ্যালের তৈরি এলসিএ অর্থাৎ লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্টগুলির প্রতি আর্জেন্টাইন দলটি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে।
২০১৯ সালে কংগ্রেস এবং বিরোধী নেতারা ফ্রান্সের ডাসল্ট অ্যাভিয়েশনের তৈরি ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তির ক্ষেত্রে বেনিয়মের অভিযোগ তুলেছিল। এই নিয়ে উত্তাল হয়েছিল সংসদ। এরপর, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বেও উঠে এসেছিল রাফাল প্রসঙ্গ। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাকে বঞ্চিত করে অনিল অম্বানির সংস্থাকে এই বিমান তৈরির বরাত দিয়েছে মোদী সরকার। যেখানে অনিল অম্বানীর সংস্থার এর আগে সামরিক বিমান তৈরির কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। অনিল অম্বানীর সংস্থাকে আর্থিক চাপ থেকে মুক্ত করার জন্যই তাঁর সংস্থাকে রাফাল তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাকে মোদী সরকার এই ভাবে ধ্বংস করছেন বলে অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। তবে, তাদের সেই প্রচার কাজে লাগেনি। আরও শক্তিশালী হয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল মোদী সরকার।