কলকাতা: সকলেই জানেন ব্যাঙ্ক হল টাকা সঞ্চয়ের জায়গা। ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে, তা শুধু সুরক্ষিতই থাকে না, সেই আমানতের উপর সুদও পাওয়া যায়। কিভাবে এই সুদ দেয় ব্যাঙ্কগুলো? তারা আয় করে কোথা থেকে, কীভাবে? আসলে, ব্যাঙ্কগুলি মুনাফাভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেলে চলে। অন্য যে কোনও ব্যবসার মতোই, তাদেরও আয় ও ব্যয়ের উৎস রয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে অর্থ ধার করা এবং ধার দেওয়া জড়িত। আসুন জেনে নেওয়া যাক, ব্যাঙ্কগুলি কীভাবে অর্থ উপার্জন করে –
ব্যাঙ্কের মুনাফা অর্জন
বিভিন্ন উপায় ব্যাঙ্কগুলি অর্থ উপার্জন করে। এর মধ্যে রয়েছে –
নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন
ব্যাঙ্কগুলি কম সুদের হারে তহবিল ধার করলেও, তারা যখন ঋণ দেয় তখন কিন্তু তুলনামূলকভাবে উচ্চ হারে সুদ নেয়। এই সুদের হারের পার্থক্যকে নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন বলা হয়। এটি ব্যাঙ্কগুলির আয়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য উৎস। গ্রাহকরা তাদের সেভিংস অথবা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে যে টাকা জমা করেন, সেটা হল সেই অর্থ যা ব্যাঙ্কগুলি ধার করে। এর পাশাপাশি, ব্যাঙ্কগুলি ফিক্সড ডিপোজিট বা রেকারিং ডিপোজিটের মতো পরিষেবার উপর মোটা ঋণ আদায় করে। এছাড়া, হোম লোন, পার্সোনাল লোন, কার লোন, এবং অন্যান্য আর্থিক পণ্যের উপরও সুদ নিয়ে আয় করে ব্যাঙ্কগুলি। এই দুই সুদের হারের মধ্যে পার্থক্যই ব্যাঙ্কগুলির আয়ের প্রধান উৎস।
ইন্টারচেঞ্জ ফি
ব্যাঙ্কিং সেক্টরের আয়ের আরেকটি প্রধান উৎস হল ইন্টারচেঞ্জ ফি। ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বাড়তি টাকা নিয়ে থাকে। কিছু কেনাকাটার সময় যখন একজন গ্রাহক তার কার্ড সোয়াইপ করেন, তখনই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর উপর একটি নির্দিষ্ট চার্জ ধার্য করা হয়। লেনদেনের বেশিরভাগ মূল্যই গ্রাহকের ব্যাঙ্কে যায়। বাকিটা যায় ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্কে।
অ্যাকাউন্ট এবং এটিএম ফি
লেনদেনের এই মূল্য ছাড়াও, প্রতিটি ব্যাঙ্ক তাদের বিভিন্ন পরিষেবার জন্য আলাদা আলাদা মূল্য নিয়ে থাকে।
এটিএম ফি
যে ব্যআঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এটিএম কার্ড,তাদের ছাড়া অন্য ব্যাঙ্কগুলির এটিএম থেকে গ্রাহকদের প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক লেনদেন করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই সীমার বাইরে এটিএম থেকে টাকা তুললে গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট মূল্য দিতে হয়। কিছু কিছু ব্যাঙ্ক আবার নির্ধারিত সীমার বাইরে নিজেদের এটিএম থেকেও টাকা তোলার জন্য অতিরিক্ত মূল্য নেয়।
ন্যূনতম ব্যালেন্স মূল্য
কিছু কিছু ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালেন্স রাখতে হয়। যদি গ্রাহকের ব্যালেন্স এই সীমার নিচে নেমে যায়, তবে তাঁকে একটি নির্দিষ্ট মূল্য জরিমানা দিতে হয়।
লেট পেমেন্ট ফি
ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধের সময়সীমা পেরিয়ে গেলে, গ্রাহকদের লেট পেমেন্ট ফি দিতে হয়। এই জরিমানার পরিমাণ বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বিভিন্ন রকম থাকে।
বিনিয়োগ মূল্য
যে ব্যাঙ্কগুলিতে বিনিয়োগ পরিষেবা আছে, তারা বিনিয়োগ ফি-ও আরোপ করে থাকে। তারা ক্লায়েন্ট বিনিয়োগ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত পরিষেবা পরিচালনার জন্য এই ধরনের ফি আরোপ করে।
অন্যান্য উত্স
ব্যাঙ্কের আয়ের অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে –
বিনিয়োগের উপর সুদ
কখনও কখনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বিভিন্ন সরকারি এবং রেটেড সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে। তারা এই বিনিয়োগের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সুদ অর্জন করে।
ফোরেক্স অপারেশন
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বৈদেশিক মুদ্রার দালাল হিসেবে কাজ করে। এই কর্মকাণ্ড থেকেও ব্যাঙ্কগুলির আয় হয়।
থার্ড পার্টি প্রোডাক্টের উপর কমিশন
ব্যাঙ্কগুলি তাদের উপভোক্তাদের কাছে মিউচুয়াল ফান্ড বা বীমা পণ্য বিতরণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কমিশনও অর্জন করে।