রিয়াধ: গোটা বিশ্বের মোট তেল উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। বিশ্বের মোট তেল ভান্ডারের ৪৮.৩ শতাংশ রয়েছে এই অঞ্চলেই। শনিবার থেকে ইজরায়েল এবং হামাস বাহিনীর মধ্যে নাটকীয় সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। যার জেরে নতুন করে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বেড়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে দাম বাড়ল তেলের। সোমবার এশিয় বাজারে বাণিজ্যিক তেলের দাম ব্যারেল প্রতি বেড়েছে ৪ মার্কিন ডলারেরও বেশি। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৪.১৮ মার্কিন ডলার বা ৪.৯৪ শতংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৮৮.৭৬ মার্কিন ডলার হয়েছে। আর, ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি বেড়েছে ৪.২৩ মার্কিন ডলার বা ৫.১১ শতাংশ। ফলে ব্যআরেল প্রতি এই তেলের দাম হয়েছে ৮৭.০২ মার্কিন ডলার।
অথচ, গত সপ্তাহ পর্যন্ত তেলের দাম ছিল নিম্নমুখী। এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছিল প্রায় ১১ শতাংশ। আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম কমেছিল ৮ শতাংশ। গত মার্চ মাসের পর, এক সপ্তাহে তেলের দামে এতটা পতন দেখা যায়নি। কিন্তু, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ এই তেলের দামের নিম্নমুখী এই প্রবণতাকে পুরোপুরি উল্টে দিয়েছে।
শনিবার, গাজা ভূখণ্ড থেকে প্যালেস্টাইনপন্থী হামাস গোষ্ঠী ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছে। প্রায় ৭০০ ইসরায়েলি নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। শতাধিক মানুষকে অপহরণ করা হয়েছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে ইজরায়েল এত বড় মাপের হামলা দেখা যায়নি বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। এর জবাবে, গাজা ভূখণ্ডে আকাশপথে ইদানিংকালের বৃহত্তম হামলা শুরু করেছে তেল আবিব। গাজাতেও অন্তত ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে, সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা সবে শুরু। এই যুদ্ধ চলতে পারে দীর্ঘ সময় ধরে। কাজেই, এর মধ্যে তেলের দাম কমার বিশেষ সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে বাণিজ্য মহল। বরং আগামী কয়েক মাসে আরও এই ক্ষেত্রে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরেই তেলের সরবরাহে টান পড়েছিল। এর মূল কারণ ছিল, বিশ্বের দুই প্রধান তেল উৎপাদক দেশ সৌদি আরব এবং রাশিয়ার উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া। মার্কিন মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির ফলে, আগামী বছর তেল উৎপাদন বাড়ানো হবে বলে সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছিল সৌদি আরব। কিন্তু, হামাসের হামলা সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়াকে জোর ধাক্কা দিয়েছে। ফলে, তেলের বাজারে এই দ্বন্দ্বের দীর্ঘস্থায়ী এবং অর্থবহ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তেল সরবরাহ বা পরিবহনের মাত্রা অনেকটাই কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে, হামাসের হামলার পিছনে ইরানের ভূমিকা নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলি যদি সরকারিভাবে অভিযোগ করে, সেই ক্ষেত্রে ইরানের তেল সরবরাহ এবং রফতানিও ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে, আখেরে বড় ক্ষতি হবে তেলের বাজারে। এদিনই ইরানের পক্ষ থেকে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন বা ওআইসি-র জরুরি বৈঠক ডেকেছে।