শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে কিন্তু একটা সময় পরে সে’ই টাকা থেকে তারা লাভ ঘরে তুলতে পারে না। ফলে তাদের অনেক ক্ষতি হয়। অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা অ্যাভারেজিং ডাউন করে অনেকক্ষেত্রে লাভ করে। কিন্তু তাতেও ফাঁক থেকে যায় কিছু সময়। কারণ এমন অনেক কোম্পানি থাকে যাদের শেয়ারের দাম হয়তো টানা কয়েক বছর ধরে কমতে থাকে। আর কোনও ভাবে সেই কোম্পানি যদি দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে বিনিয়োগকারীর সব টাকাই বলা যায় জলে চলে যায়।
তবে অনেক এমন কোম্পানি রয়েছে যেখানে বিনিয়োগ করে একসময় অনেক বিনিয়োগকারীই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সেই সব কোম্পানির শেয়ারের দাম হুহু করে বাড়ছে। আর এই তালিকার সবচেয়ে উপরে রয়েছে সুজলন এনার্জি। বিনিয়োগকারীদের কাছে এই সুজলন এনার্জি একসময় তার ওঠা-পড়ার কারণে ‘পাগলা ঘোড়া’ নামেও পরিচিত ছিল।
সুজলনের হেডকোয়ার্টার পুনেতে অবস্থিত। গুজরাটের ৩ মেগাওয়াট শক্তি সম্পন্ন একটি বায়ুকল প্রজেক্টের মাধ্যমে ১৯৯৫ সালে এই কোম্পানির যাত্রা সুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তুলসী তাঁতি। পরবর্তীতে এই কোম্পানি বায়ুকলের টার্বাইন তৈরিতে মন দেয়। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এই কোম্পানি শেয়ার বাজারে লিস্টিং করা হয়। সেই বছর ২১ অক্টোবর বাজার খোলার সময় প্রতি শেয়ারের দাম ছিল ১২৩ টাকা ৭৫ পয়সা। পরবর্তীতে সুজলনের শেয়ারের দাম বাড়তে বাড়তে ২০০৮ সাল আসতে আসতে ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
সুজলন ধাক্কা খায় ২০০৮ সালে। ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেয়ারের দাম ছিল ৩৭৩ টাকা ৫২ পয়সা। তা ৩১ অক্টোবর ২০০৮-এর মধ্যে কমে দাঁড়ায় ৪০ টাকা ৭৭ পয়সা। মাত্র ১০ মাসে শেয়ারের দামে ধ্বস নামে। ৮৯.০৮ শতাংশ বা ৩৩২.৭৫ টাকা পড়ে যায় শেয়ারের দাম। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে এই শেয়ারের দাম নেমে আসে ১ টাকার কাছাকাছি।
সুজলনের জীবন ফিরে পাওয়ার গল্প শুরু হয় ২০১৯ সালে। ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর সুজলনের দাম ছিল ১ টারা ৭৯ পয়সা যা আসলে গত ৫ বছরে সর্বনিম্ন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে দাম বাড়তে থাকে সুজলনের। ২০২২ সালের ১৫ জুলাই অর্থাৎ প্রায় ২ বছর ৬ মাস পরে সুজলনের দাম হয় ৫ টাকা ৮৩ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ার পিছু দাম বাড়ে ৪টাকা ৪০ পয়সা বা ২২২.৭ শতাংশ। আর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মার্কেট বন্ধ হওয়ার সময় পর্যন্ত সুজলনের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ টাকা ৭৫ পয়সায়। যা ২৭ ডিসেম্বরের দামের তুলনায় প্রায় ১,৩৩৮.৫৫ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, কেউ যদি ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর সুজলনে ১০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে থাকে তাহলে সেই টাকার বর্তমান মূল্য হবে প্রায় ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮৫৫ টাকা।
২৪ অগস্ট ২০২৩-এ সুজলন যা বর্তমানে সবচেয়ে বড় অচিরাচরিত শক্তি কোম্পানি, ইন্টিগ্রাম এনার্জি ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানির একটি ৩১.৫ মেগাওয়াট শক্তি সম্পন্ন বায়ুকল প্রজেক্টের অর্ডার পেয়েছে। আর তারপর থেকেই হুহু করে বাড়তে থাকু সুজলনের দর। পর পর কয়েকদিন আপার সার্কিট ছুঁয়ে ফেলে এই কোম্পানি। আর এভাবেই একটা কোম্পানি যা একসময় প্রায় ‘দেউলিয়া’ হয়ে গিয়েছিল, প্রায় ১৫ বছর পর আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।