বিশ্লেষণ : বিটকয়েনেরও এটিএম ! ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করলে জেনে রাখুন আপনিও

TV 9 Explain on Cryptocurrency : গোটা বিশ্বে যত বিটকয়েন এটিএম রয়েছে, তার বেশিরভাগই উত্তর আমেরিকায়। আমেরিকা আর কানাডা মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার বিটকয়েন এটিএম রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে এমন এটিএমের সংখ্যা দেড় হাজারের আশেপাশে।

বিশ্লেষণ : বিটকয়েনেরও এটিএম ! ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করলে জেনে রাখুন আপনিও
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে যাঁরা নাড়া চাড়া করেন, তাঁদের অবশ্যই জেনে রাখা দরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএমের খুঁটিনাটি। (প্রতীকী ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 11, 2021 | 5:40 PM

নয়াদিল্লি : ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার এটিএম তো আমরা সবাই জানি। লম্বা লাইন দিয়ে টাকা তোলার হাঙ্গামা এড়াতে এটিএম-ই আমাদের প্রথম পছন্দ। কিন্তু তাই বলে বিটকয়েনের এটিএম… এমনটাও আবার হয় নাকি! শুনলে অবাক হবেন, তবে এটাই সত্যি। গোটা বিশ্বে এমন ২৭ হাজার এটিএম রয়েছে।

যত দিন এগোচ্ছে, তত ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে ঝুঁকতে শুরু করছে বিশ্ব। বিনিয়োগ বাড়ছে। এখন শুধু বিটকয়েনই নয়, আরও অনেক ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে এসে গিয়েছে। ইথেরিয়াম, ডগিকয়েনের মতো বেশ কিছু ক্রিপ্টো কারেন্সি ইতিমধ্যেই বাজারে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিজিটাল মুদ্রার ভারতীয় বাজারও। বিশেষ করে ব্যাঙ্কগুলিতে জমানো টাকার উপর সুদের হার কমতে শুরু করায়, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় অনেকেই বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টো কারেন্সিগুলিতে বিনিয়োগ লাভজনক বলে মনে করছেন। আর ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে যাঁরা নাড়া চাড়া করেন, তাঁদের অবশ্যই জেনে রাখা দরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএমের খুঁটিনাটি।

বিটকয়েনের রমরমা বাজার উত্তর আমেরিকা

কয়েন এটিএম ব়্যাডারের হিসেব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে যত বিটকয়েন এটিএম রয়েছে, তার বেশিরভাগই উত্তর আমেরিকায়। আমেরিকা আর কানাডা মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার বিটকয়েন এটিএম রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে এমন এটিএমের সংখ্যা দেড় হাজারের আশেপাশে। এছাড়া দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা মিলিয়ে ১৩৩ টি বিটকয়েন এটিএম রয়েছে। সম্প্রতি এল সালভাডরে বিটকয়েন লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই এল সালভাডরও মধ্য আমেরিকারই একটি দেশ। সেখানে এখনও পর্যন্ত এমন চারটি এটিএম রয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশে রয়েছে ২০ টি। আর গোটা এশিয়া মহাদেশ মিলিয়ে বিটকয়েন এটিএমের সংখ্যা ৩০০-র আশেপাশে। তার মধ্যে সবথেকে বেশি রয়েছে পূর্ব এশিয়ায়। সেখানে এমন এটিএমের সংখ্যা ১৫৪। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ৬৬ টি বিটকয়েন এটিএম আছে।

বিটকয়েন এটিএম কী?

ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম হল আদতে একটি কিয়স্কের মতো। এই কিয়স্কগুলিতে থেকে নগদ টাকা কিংবা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে বিটকয়েন অথবা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি কেনা যায়। দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ ব্যাঙ্কিং এটিএমের মতোই। তবে এগুলি থেকে আপনি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারবেন না। যাঁরা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করেন, তাঁদের যাতে ঝক্কি কম পোহাতে হয়, সেইজন্যই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম। এগুলির মাধ্যমে ব্যবহারকারী বিটকয়েন কেনা এবং বেচা উভয়ই করতে পারবেন। আর এর জন্যে আগে থেকে রেজিস্ট্রেশনেরও দরকার হয় না।

কীভাবে ব্যবহার করবেন বিটকয়েন এটিএম?

বিটকয়েন এটিএম (কিয়স্কে) প্রবেশ করলে আপনাকে প্রথমেই দু’টি অপশন দেখাবে। স্ক্রিনের বাঁ দিকে থাকবে বিটকয়েন কেনার অপশন। সেখানে আপনার বাজেট অনুযায়ী, কত মূল্যের বিটকয়েন কিনবেন, তা বেছে নিতে হবে। ধরুন, তিনটি অপশন রয়েছে। ৫০০ ডলার বা তার কম, ৫০০ ডলার বা ১০০০ ডলার পর্যন্ত অথবা আপনার বাজেট যদি আরও বেশি হয়, তাহলে ১০০০ ডলারের বেশি। এবার আপনাকে আপনার পছন্দ মতো অপশনটি বেছে নিতে হবে।

এবার ক্রিনে একটি কিউআর কোড আসবে। আপনার মোবাইলে যে বিটকয়েন ওয়ালেটটি রয়েছে সেটির মাধ্যমে, কিউআর কোডটি স্ক্যান করতে হবে। আপনি যে বিটকয়েন কিনবেন, সেটি এই ওয়ালেটেই জমা হবে। যদি আপনার কাছে ওয়ালেট না থাকে, তাহলে পেপার ওয়ালেট প্রিন্ট করার সুবিধাও থাকবে কিয়স্কে। পরে আপনাকে বিটকয়েন ওয়ালেটের অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোড করে, যে বিটকয়েন কিনছেন তা ট্রানস্ফার করে নিতে হবে।

এবার আপনাকে নগদ অর্থ এটিএমে (কিয়স্কে) জমা করতে হবে। আপনি যত পরিমান টাকা জমা করছেন এবং তার পরিবর্তে আপনি কত বিটকয়ন পাবেন, দু’টিই আপনাকে কিয়স্কের স্ক্রিনে দেখিয়ে দেবে। শেষে ‘কনফার্ম পারচেজ়’ অপশনে ক্লিক করলেই আপনার বিটকয়েন কেনা হয়ে যাবে। কিয়স্ক ছাড়ার আগে ‘ডান’ অপশনে ক্লিক করার অর্থ, আপনার লেনদেন সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে এবং আপনি একটি রশিদ পেয়ে যাবেন। ঠিক ব্যাঙ্কের এটিএমগুলির মতো।

ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির এটিএম

আমাদের দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির এটিএম প্রথম তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে। তখন সবে ভারতীয় বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। বিটকয়েন সবে বাজার ধরতে শুরু করেছে। সেই সময় বেঙ্গালুরুর ওল্ড এয়ারপোর্ট রোডের উপর কেম্পফোর্ট মলে তৈরি হয় প্রথম ক্রিপ্টো এটিএম। ভারতীয় বাজারে ক্রিপ্টো কারেন্সির ব্লকচেন সংস্থা ইউনোকয়েন এই এটিএম বা কিয়স্কটি তৈরি করেছিল। জমা করা বা তোলা উভয়ক্ষেত্রেই ন্যূনতম এক হাজার টাকা আবশ্যিক।

তবে সেই ক্রিপ্টো এটিএমের বেশিদিন টেকেনি। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত গাইডলাইন থাকার কারণে চালু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই এটিএম গুটিয়ে ফেলতে হয়। বেঙ্গালুরুর এই কিয়স্ক থেকে বিটকয়েন সহ ৩০ টি পৃথক ডিজিটাল মুদ্রা কেনা যেত। তবে বেঙ্গালুরুর ক্রিপ্টো কিয়স্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্রিপ্টো এটিএম তৈরি হয়নি

২০১৮ সালের পর মাঝে অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। এখন ক্রিপ্টো কারেন্সিতে বিনিয়োগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। দেশ বেশ কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জও তৈরি হয়েছে। ক্রিপ্টোর উপর থেকে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও। আর এই পরিস্থিতিতে ফের একবার ভারতে ডিজিটাল মুদ্রার এটিএম তৈরি হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন : এই প্রথম ‘মুদ্রার’ স্বাদ পেল ক্রিপ্টোকারেন্সি! বিনিয়োগ করলে জেনে নিন বাজার দর

আরও পড়ুন : তড়তড়িয়ে বাড়ছে ক্রিপটোর বাজার, বছর শেষে বিটকয়েনের দর উঠতে পারে ৭০ লাখ