মুম্বই: কিনেছিলেন গ্যাংস্টার দাউদ ইব্রাহিমের সম্পত্তি। আর সেই সম্পত্তি নিজের নামে করতে কালঘাম ছুটল উত্তর প্রদেশের এক ব্যক্তির। ২৩ বছর আইনি লড়াই লড়তে হল হেমন্ত জৈন নামে ওই ব্যক্তিকে। ২০০১ সালে মুম্বইয়ে কেনা দাউদের দোকান এতদিন পর তাঁর নামে হল।
মুম্বইয়ের নাপাদা এলাকায় দাউদের একটি দোকান ছিল। ২০০১ সালে ১৪৪ স্কয়্যার ফুটের ওই দোকানের নিলামে অংশ নেন হেমন্ত। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর। হেমন্ত বলেন, “খবরের কাগজ পড়ে জানতে পারি, দাউদের সম্পত্তি কিনতে ভাল ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।” তখনই তিনি নিলামে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে আয়কর দফতর ওই দোকানের নিলাম ডাকে। জয়রাজ ভাই স্ট্রিটে ওই দোকানের জন্য ২ লক্ষ টাকা দেন হেমন্ত। এরপর থেকেই একের পর এক সমস্যা পেরোতে হয় তাঁকে। হেমন্ত বলেন, “সম্পত্তি কেনার পর আধিকারিকরা আমাকে ভুল বোঝান। তাঁরা বলেন, কেন্দ্রের অধীনস্থ এই সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরে জানতে পারি, এরকম কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।”
এমনকি, আয়কর দফতরের আধিকারিকরা তাঁকে বলেন, সম্পত্তির আসল ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দোকানটি হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। এরপর গত ২৩ বছরে তিন প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি লিখেছেন হেমন্ত। তবে সমস্যা কাটেনি।
হেমন্ত বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর অফিসে অনেক চিঠি লিখেছি। কখনও কখনও জবাব পেয়েছি। কিন্তু, দোকানের রেজিস্ট্রেশন করাতে পারিনি। এর প্রধান কারণ, আয়কর দফতর থেকে দোকানের আসল ফাইল নিখোঁজ হওয়া।”
২০১৭ সালে তাঁকে বলা হয়, সম্পত্তির ফাইল উধাও হয়ে গিয়েছে। ফলে সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে তাঁকে স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হবে। আর তা ২৩ লক্ষ টাকা।
হেমন্ত বলেন, “যেহেতু নিলাম থেকে সম্পত্তি কিনেছিলাম। ফলে স্ট্যাম্প ডিউটি সম্পত্তির বাজারমূল্য হিসেবে ধরা যায় না। রেজিস্ট্রার অফিসের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে যোগাযোগ রেখে চলেছি। কিন্তু, কোনও জবাব পাইনি।”
সম্পত্তি নিজের নামে করতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। আদালতের নির্দেশে ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। স্ট্যাম্প ডিউটি এবং জরিমানা হিসেবে দেড় লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে।
দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ে তাঁর নামে দোকানটি হয়েছে। দোকানের দখল কি নিতে পারবেন? হেমন্ত নিজেই বলছেন, তাঁকে আরও একটা লড়াই লড়তে হবে। কারণ, ওই দোকান দখল করে রেখেছে দাউদের গ্যাংয়ের ছেলেরা। হেমন্ত বলেন, “সরকারি আধিকারিকরা আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে ওই সম্পত্তির কথা ভুলে আমি যেন শান্তিতে বাস করি। কিন্তু, আমরা গ্রামের লোকেরা ভয় কী জিনিস জানি না। গ্রামের ব্যক্তি কলাগাছের মতো। সমস্ত ঝড়ঝাপ্টা সইতে পারে।”
দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বছর সাতান্নর হেমন্ত বললেন, “লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালাব না। এখন সম্পত্তি আমার নামে হয়েছে। আমি এর দখল নিয়েই ছাড়ব।”