Dawood Ibrahim: শারজায় ভারত-পাক ম্যাচে দাউদকে খুনের পরিকল্পনা, পিছনে এই মহিলা
Dawood Ibrahim: কেন তাঁর স্বামীকে খুন করা হল, এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই দাউদ ইব্রাহিমের কথা জানতে পারেন আশরাফ। জানতে পারেন, দাউদের নির্দেশ অমান্য করায় তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়। একথা জানার পরই আশরাফ ঠিক করেন, দাউদকে খুন করাই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
মুম্বই: ছিলেন সাধারণ এক গৃহবধূ। চোখের সামনে খুন হতে দেখলেন স্বামীকে। তারপরই বদলে গেল তাঁর জীবন। হয়ে উঠলেন মুম্বইয়ের মহিলা ডন। যাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, তাঁর স্বামীকে যিনি খুনের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁকে নিকেশ করা। আর সেই লক্ষ্যে এমন একজনের পিছু ধাওয়া করলেন, যিনি তখন মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ডের বেতাজ বাদশা। যাঁকে খুঁজছেন ভারতীয় গোয়েন্দারাও। ১৯৯৩ সালের মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্ত। সেই গ্যাংস্টার দাউদ ইব্রাহিমকে খুনের লক্ষ্যেই মহিলা ডন হয়ে ওঠা ‘স্বপ্না দিদি’-র। কেন হঠাৎ দাউদ ইব্রাহিমকে খুনের লক্ষ্য নিলেন তিনি? কীভাবে হয়ে উঠলেন মহিলা ডন?
সাংবাদিক হুসেন জাইদি তাঁর ‘মাফিয়া কুইনস অব মুম্বই’ বইয়ে স্বপ্না দিদির ডন হয়ে ওঠার কাহিনি লিখেছেন। কেন দাউদ ইব্রাহিমকে খুন করতে চেয়েছিলেন স্বপ্না দিদি? জাইদি লিখেছেন, স্বপ্না দিদির আসল নাম আশরাফ। একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। অল্প বয়সে মেহমুদ খান নামে এক গ্যাংস্টারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু, মেহমুদ খানের যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগ রয়েছে, বিয়ের সময় জানতেন না আশরাফ। মুম্বই বিমানবন্দরে চোখের সামনে স্বামীকে খুন হতে দেখেন তিনি। দুবাই থেকে মুম্বই বিমানবন্দরে নামতেই মেহমুদকে গুলি করা হয়।
কেন তাঁর স্বামীকে খুন করা হল, এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই দাউদ ইব্রাহিমের কথা জানতে পারেন আশরাফ। জানতে পারেন, দাউদের একটি নির্দেশ অমান্য করায় তাঁর স্বামীকে খুনের নির্দেশ দেওয়া হয়। একথা জানার পরই আশরাফ ঠিক করেন, দাউদকে খুন করাই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
এই খবরটিও পড়ুন
হুসেন উসতারা নামে এক গ্যাংস্টারের সঙ্গে পরিচয় হয় আশরাফের। মুম্বইয়ের দাউদের গ্যাংয়ের বিরোধী এই হুসেন। তাঁর কাছ থেকে বন্দুক চালানো শেখেন আশরাফ। নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন স্বপ্না। ধীরে ধীরে মহিলা গ্যাংস্টার হয়ে ওঠেন তিনি। জিন্স, শার্ট পরতে শুরু করেন। বাইক চড়া শেখেন। তাঁর গ্যাংয়ের লোকেদের কাছে হয়ে ওঠেন স্বপ্না দিদি। স্বপ্না ও হুসেন মিলে দাউদের গ্যাংয়ের অস্ত্র চোরাচালানের একাধিক কনসাইনমেন্ট ভেস্তে দেন। দাউদের গ্যাংয়ের কাছে আতঙ্ক হয়ে ওঠেন তিনি।
দাউদকে খুনের পরিকল্পনা-
ব্যক্তিগত জীবনে স্বপ্নার সঙ্গে হুসেনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু, নিজের লক্ষ্য থেকে সরেননি মহিলা এই ডন। শারজায় ভারত-পাক ম্যাচে দাউদকে খুনের পরিকল্পনা করেন তিনি। নয়ের দশকের প্রথম দিকে শারজায় একাধিক ভারত-পাক ম্যাচে দাউদকে ভিআইপি বক্সে দেখা গিয়েছে। তেমনই এক খেলার সময় মাঠেই দাউদকে খুনের ছক কষেন স্বপ্না। তাঁর গ্যাংয়ের লোকেদের ম্যাচের দিন স্টেডিয়ামে ভাঙা বোতল, ছাতা নিয়ে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেন। ম্যাচের কোনও একসময় দাউদের লোকজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সেই সুযোগে খুন করতে হবে দাউদকে। তবে স্বপ্নার এই পরিকল্পনা কথা জানতে পেরে যান দাউদ। এর কিছুদিন পর ১৯৯৪ সালে মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতে খুন স্বপ্না। তাঁকে ২২ বার ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। সাহায্যের জন্য তিনি চিৎকার করেন। কিন্তু, প্রতিবেশীরা ভয়ে এগিয়ে আসেনি। নিজেই হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
স্বপ্না ‘দিদি’-র কোনও ছবি কারও কাছে নেই। মুম্বইয়ের এই মহিলা ডনকে সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু, স্বপ্নার কাহিনি শুনে কোনও সিনেমার কথা কি মনে পড়ছে? ১৯৭৮ সালে অমিতাভ বচ্চনের ‘ডন’ সিনেমায় দেখা গিয়েছিল, হেলেন অভিনীত কামিনি তাঁর স্বামীকে খুনের বদলা নিতে ডনকে মারতে গিয়েছিলেন। তিনিও ব্যর্থ হয়েছিলেন। কী আশ্চর্য, সিনেমাটি বাস্তবের ঘটনার ১৬ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল।