কলকাতা: একটা বিয়ে। তাকে ঘিরেই থাকে হাজারো স্বপ্ন, আশা-প্রত্যাশা। ছোট থেকেই অনেকে বুনতে শুরু করেন নিজের সন্তানের বিয়ের স্বপ্ন। বিয়ে মানে এখন আর চারহাত এক হওয়া নয়, বরং স্টেটাস সিম্বল হয়ে উঠেছে বিয়ে। কে কত ধুমধাম করে বিয়ে দিতে পারেন, তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। আগে যেমন বিয়েতে পণ দিতে হত, এখন সেটাই ‘উপহার’ হয়ে গিয়েছে। লাখ টাকার গাড়ি থেকে কোটি টাকার বাড়ি- সবই এই উপহারের আওতায় পড়ে। মন্দার বাজারেও ভাঁটা পড়েনি বিয়ের খরচে। বর্তমানে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শিল্প হল বিয়ে।
আপাতচোখে দেখে মনে হতেই পারে যে একটা বিয়ের পিছনে কতই বা খরচ হতে পারে? কিন্তু যারা সদ্য বিয়ে করেছেন বা বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন যে খরচ কীভাবে বেড়েছে। শুধু অনুষ্ঠানবাড়ি ভাড়া, খাওয়া-দাওয়ারই খরচ নয়। সঙ্গে রয়েছে দুই পরিবারের একে অপরকে উপহার দেওয়া থেকে শুরু করে বাড়ি সংস্কার বা নতুন বাড়ি তৈরির মতো খরচও। এক একটি পরিবারে সঞ্চয়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই খরচ হয়ে যায় বিয়েতে।
সম্প্রতিই ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র বিয়ে থেকেই বছরে লক্ষ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। ২০২৩ সালে এখনও অবধি দেশে ৩৫ লক্ষ বিয়ে হয়েছে, যা রেকর্ড। এই বিয়েকে কেন্দ্র করেই চলতি বছরে ৪.২৫ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। গত বছর দেশে বিয়ে হয়েছিল ৩২ লক্ষ। এতে আয় হয়েছিল ৩.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা।
চলতি বছরে দেশে প্রায় ১২ লক্ষ বিয়েতে গড়ে খরচ করা হচ্ছে ১০ টাকা। প্রায় ৬ লক্ষ বিয়েতে পাত্র ও পাত্রী পক্ষ মিলিয়ে খরচ করা হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। প্রায় ৫০ হাজার বিয়ের বাজেট ৫০ লক্ষ টাকা। ৫০ হাজারেরও বেশি বিয়ের বাজেট কোটি টাকার উপরে।
কেপিএমজি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সালেই ভারতে বিয়েকে কেন্দ্র করে ৩.৬৮ ট্রিলিয়নের ব্যবসা হয়েছিল। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বিয়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের মাসিক আয় ৪২.৫ শতাংশ বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় ৩১ শতাংশ ব্যবসায়ীরাই তাদের চার্জ প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। বেড়েছে শ্রমিকদের খরচও।
গহনা– প্রতি বছর আমাদের দেশে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার গহনা কেনা হয়।
পোশাক– প্রত্যেকেরই বিয়ে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন থাকে, তাই বিয়ের পোশাক কেনার ক্ষেত্রে কার্পণ্য রাখা হয় না। প্রতি বছর বিয়েতে আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকার পোশাক কেনা হয়।
হোটেল– প্রতি বছর বিয়ের জন্য যে হোটেল বুকিং হয়, তার পিছনেই খরচ হয় ৫ হাজার কোটি টাকা।
আগামী দুই মাসে একাধিক বিয়ের তারিখ রয়েছে। প্রায় কয়েক হাজার বিয়ে হবে হাতে গোনা কয়েকটি বিয়ের ডেটেই। এছাড়া আগামী বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে যাদের বিয়ে রয়েছে, তাদেরও বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় সেরে ফেলা হয়েছে। বিয়েবাড়ি বুকিং থেকে কেটারিং, লাখো টাকার ব্যবসা আগেই হয়ে গিয়েছে। বাকি প্রস্তুতি শুরু হলে এই টাকার অঙ্কই কোটিতে পৌঁছবে। এক কথায় বলতে গেলে, চার হাত এক করাকে ঘিরে মালামাল হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।