কোভিড মহামারি কাটিয়ে দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্র। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালের বাজেট পেশ হবে। কোভিডকালে এবং কোভিড পরবর্তী সময়ে একেবারে থেমে না গেলেও ভারতীয় অর্থনীতির গতি কিছুটা মন্থর হয়েছিল। তবে এখন মহামারি কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিলছে অর্থনীতি। এই আবহে সরকারের মূল লক্ষ্যই হবে বিনিয়োগ ও সঞ্চয় বাড়ানো। সেই উদ্দেশ্যে সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে পারে।
আয়কর কাঠামোর পুনর্বিবেচনা (Revision of Tax Slab Rates):
বর্তমান আয়কর নিয়ম অনুযায়ী,সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার বেশি আয়ের জন্য ভারতে কর দিতে হয় ৪২.৭৪৪ শতাংশ। এশিয়া মহাদেশের অন্য়ান্য যেকোনও দেশের তুলনায় এই আয়করের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। হংকংয়ে আয়করের পরিমাণ ১৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে তা ২২ শতাংশ এবং মালয়েশিয়াতে তা ৩০ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, নতুন কর ব্যবস্থা ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে আয়করের হারে কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই এই ২০২৩ এর বাজেটের দিকে অনেকেই তাকিয়ে রয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, আয়করদাতাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই বাজেটে কিছুটা কর ছাড় দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। আশা করা হচ্ছে ৩০ শতাংশের আয়করের হার কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। এবং আয়করের আওতায় পড়ার সর্বনিম্ন সীমাও বাড়ানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগে যেখানে ১০ লক্ষ টাকা ছিল তা বেড়ে ২০ লক্ষ হতে পারে। এর ফলে সর্বোচ্চ আয়করের হার ৪২.৭৪৪ শতাংশ থেকে ৩৫.৬২ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। নয়া আয়কর ব্যবস্থাও একইরকম পরিবর্তন আনা হতে পারে।
বিভিন্ন ছাড়ের ক্ষেত্রে সীমা বৃদ্ধি:
কোভিড সময়ে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এবার এই শ্রেণিকে কিছুটা রেহাই দিতে বর্তমানের ছাড় নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে এই ছাড়ের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যেরকম সেকশন ৮০ডি অনুযায়ী, স্বাস্থ্য বিমাতে প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ছাড়ের সীমা হল ২৫,০০০ বা ৫০,০০০ টাকা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে খরচ বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এই সীমা পুনর্বিবেচনা করতে পারে কেন্দ্র।
ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রে ত্রাণ প্রদান:
কোভিডের কারণে কাজের জায়গার সংজ্ঞা অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। অফিসে গিয়ে কাজ করার পরিবর্তে একাধিক সংস্থাই পুরোপুরি বা হাইব্রিড ওয়ার্ক ফ্রম হোমের পথে হেঁটেছে। তাই নিয়োগকারী সংস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনিক পদ থেকে শুরু করে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কর্মীরা যাতে ভালভাবে বাড়ি থেকে কাজ করতে পারেন। অফিস থেকে কাজের ক্ষেত্রে তাঁদের যে সকল সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে তা বাড়ি থেকে কাজের ক্ষেত্রেও কর্মীদের সংস্থার তরফে প্রদান করা উচিত। এই সুবিধাগুলি কর ছাড়ের মধ্যে পড়ে কি না সেই বিষয়ে ভারতের আয়কর আইনে স্পষ্টভাবে কোনও উল্লেখ নেই। কোনওরকম আইনি জটিলতা এড়াতে বাজেটে এর উল্লেখ করা উচিত। যে বিষয়ে আলোচনা করা হতে পারে:
বাড়ি থেকে কাজ করার জন্য চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, কম্পিউটার, পাওয়ার ব্য়াকআপের জন্য সংস্থার তরফে দেওয়া খরচ। এবং ইন্টারনেটের খরচ, ইলেকট্রিসিটি বিল বা মোবাইলের খরচের মতো বিষয়গুলিকে সংস্থার তরফে প্রদত্ত সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয় এবং করের আওতায় ফেলা উচিত হবে না। বরং সংস্থার তরফে এটিকে ভাতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
DTAA-র সুবিধাগুলি:
কোভিড পরবর্তী সময়ে অনেককেই আবার কর্মক্ষেত্রে ফিরতে হয়েছে। ফলে বহু কর্মীই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করছেন। ফলে তাঁদের ডাবল ট্যাক্সেশন এড়াতে ডাবল ট্যাক্সেশন অ্যাভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট (Double Taxation Avoidance Agreement)-র শরণাপন্ন হতে হবে। ডিটিএএ হল একটি চুক্তি যা দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির অধীনে কোনও এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে গিয়ে কাজ করলে তাঁদের যেকোনও একটি দেশেই কর দিতে হবে কর্মীদের। এদিকে এই আইনের ১৯২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, টিডিএস হিসেব করার সময় DTAA দাবি করার কোনও জায়গা রাখে না। ফলে এই বাজেট অধিবেশনে DTAA-র অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার কর ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করুক কেন্দ্রীয় সরকার।