কলকাতা : রাজ্যে থাবা বসিয়ে দিয়েছে ওমিক্রন। করোনার বিধিনিষেধ নিয়েও যথেষ্ট সচেতন রাজ্য প্রশাসন। ১৫ ডিসেম্বরের পর ফের এক দফা বেড়েছে কড়াকড়ি। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জারি থাকবে করোনার বিধিনিষেধ। জারি রয়েছে অতিমারি আইন। সব সময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। মেনে চলতে হবে শারীরিক দূরত্ববিধি। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই পালন করতে হবে। নতুন নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে কথাগুলি। কিন্তু নিয়ম কি শুধু আম জনতার জন্য? আর রাজনেতাদের সব ছাড়? ভোটের কলকাতার ছবিটা তো অন্তত সেই কথাই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে।
তপ্ত কলকাতার রাজনীতি। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দেখ। কোনও পক্ষই একে অন্যকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। আর এরই মধ্যে অনেকেই বেমালুম ভুলেছেন করোনা বিধি। প্রথম সারির নেতা থেকে শুরু করে, মাঝারি সারি… বিধিভঙ্গকারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রত্যেকেই। এর আগেও বিধানসভা ভোটের সময় এমনই এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছিল বাংলা। সেই সময় রাজ্যের শাসক দল অবশ্য একটি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিল। বলা হয়েছিল, বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসা হচ্ছে। আর তারা করোনা ছড়াচ্ছে।
কিন্তু এবার? এবার তো সেই তালিকায় শাসক দলের নেতারাও রয়েছেন। শেষ বেলার প্রচারে ঝোড়ো ব্যাটিং করতে নেমে মাস্ক দেখা গেল না তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। মাস্কের কথা বেমালুম ভুলেছেন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। এই যদি নেতাদের অবস্থা হয়, তাহলে নিচু তলার কর্মীদের অবস্থা কী হবে, তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রিয় নেতার প্রচারে ভিড় জমানো কর্মী, সমর্থকদের অবস্থা দেখলে বোঝার উপায় নেই রাজ্যে অতিমারি আইন চলছে। শারীরিক দূরত্ববিধির যেন কোনও বালাই নেই, মাস্ক তো বাদই দেওয়া যাক।
এই নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য মেনে নেন খামতির কথা। বলেন, “সব জায়গায় যে করোনা বিধি রক্ষা হয়েছে এমনটা নয়। তবে আমাদের আন্তরিকতায় কোনও অভাব ছিল না।”
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষে বলছেন, গোটা বিষয়টাই নির্বাচনী বাধ্যবাধ্যকতা। তাঁর কথায়, “যতটা সম্ভবত মেনে চলা হচ্ছে। কিছুক্ষেত্রে রোড শো, প্রচার করার সময় পরা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু সবরকমভাবে সতর্ক থাকা হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ টিকা পেয়ে গিয়েছেন। সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার রাখা হচ্ছে। মাস্কও ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা ঠিক যে হয়ত সবসময় হয়ে উঠছে না। কিন্তু আমরা মানুষকে বলছি, সবসময় মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করার জন্য।”
বামেরা অবশ্য পুরো দায়টাই ঠেলতে চাইছে রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের উপর। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এটা যাদের দেখার কথা, সেই নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের বর্ধিত অংশ হিসেবে কাজ করছে, তা সে কোভিড বিধি দেখাই হোক, বা ভিভিপ্যাট দেখা হোক, বা কেন্দ্রীয় বাহিনী। তৃণমূলের মূল লক্ষ্য ভিড় দেখানো, তারা সেটাই করেছে। আমরা যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেছি। আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের সময়েও আমরা বেশি লোক নিয়ে ঘুরিনি। কমিশনের গাইডলাইন মেনে প্রচার করেছি।”