Kolkata Municipal Election: ‘দলে অহংকারের জায়গা নেই, ৬ মাস পরই রিপোর্ট কার্ড নেব’, কড়া বার্তা মমতার

Kolkata Municipal Election 2021: ফিরহাদ হাকিম আবারও মহানাগরিক পদে বসলেন। ডেপুটি মেয়র হলেন অতীন ঘোষ, মালা রায় চেয়ারপার্সন।

Kolkata Municipal Election: 'দলে অহংকারের জায়গা নেই, ৬ মাস পরই রিপোর্ট কার্ড নেব', কড়া বার্তা মমতার
কলকাতা পুরসভার নির্বাচিত মেয়র হলেন ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 23, 2021 | 6:22 PM

কলকাতা: শহরের মহারাষ্ট্র নিবাস হলে বৃহস্পতিবারই ঘোষণা হল কলকাতার মেয়র, চেয়ার পার্সন, ডেপুটি মেয়র-সহ নতুন মেয়র পারিষদদের নাম। ফিরহাদ হাকিম আবারও মহানাগরিক পদে বসলেন। ডেপুটি মেয়র হলেন অতীন ঘোষ, মালা রায় চেয়ারপার্সন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কলকাতা পুরসভার নতুন বোর্ডের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। এই মঞ্চ থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কী বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রইল তারই বিস্তারিত…

আমাদের জয়টা মা মাটি মানুষকে নিবেদিত করছি…

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৩৪ জন কাউন্সিলরকেই আমার অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই জয় তৃণমূল কংগ্রেসের জয় নয়। তৃণমূলের সম্পর্ক মাটির সঙ্গে। যেদিন আমি তৃণমূল তৈরি করি, আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিল মা মাটি মানুষ। একটা আদর্শ, একটা কর্মধারা দিয়ে, একটা প্রাণধারা দিয়ে দলটা তৈরি করেছি। অনেকের কুৎসা, চরিত্র হননের পরও মানুষ আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন। সেই দাম দিতেই হবে। আমাদের এই জয় আমি মা মাটি মানুষকেই উৎসর্গ করছি।”

সুব্রতদাকে খুব মিস করছি…

“আজ আমি সুব্রতদাকে (সুব্রত মুখোপাধ্যায়) খুব মিস করছি। সুব্রতদা এক সময় যখন মেয়র হলেন আমাদের, আমার মনে আছে কাউন্সিলরদের তিন দিন, ৭২ ঘণ্টা নিজাম প্যালেসে কাউন্সিলরদের আমাকে রাখতে হয়েছিল। এত কম ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতা, যাতে বোর্ড ছিনিয়ে না নেয়, তার জন্য পাহারাদার হিসাবে সুব্রতদা ও আমাকে থাকতে হয়েছিল।”

পুলিশ-কমিশনের প্রশংসা…

কমিশন ও পুলিশ খুব ভাল করে কাজ করেছে। বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্র নিবাস হলে আরও একবার বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। এত শান্তিপূর্ব নির্বাচন ভারতে কেউ করে দেখাতে পারবে না। অনেক কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এসে বিধানসভা যে ভোট করেছে তাতে আমাদের ১৬ জন তৃণমূল কর্মী মারা গিয়েছেন। আর বদনাম দিল আমাদের। আমরা ভায়োলেন্স করেছি। আমরা বলেইছিলাম, নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব। এই উৎসবে মানুষের উপর আস্থা রাখতে হবে। যত জিতব তত নম্র হতে হবে। অহংকারের কোনও জায়গা তৃণমূলে নেই। দল এখন শক্তিশালী।”

৪২ শতাংশ মহিলা প্রার্থী…

কলকাতা পুরসভার ১৬টি বরোর মধ্যে ১০টি বরো কমিটির মাথায় মহিলা তৃণমূল কাউন্সিলররা। এদিন সে প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “আমাদের ১৬টা বরোর মধ্যে ১০টি বরো কমিটির চেয়ারম্যানই মহিলা। এটা মহিলাদের এমপাওয়ারমেন্টের একটা প্রকাশ। ৪২ শতাংশের বেশি মহিলা প্রার্থী ছিলেন ভোটে। মাত্র একজন হেরেছেন।”

নির্দলদের এখনই দলে নয়…

এখনই নির্দলের টিকিটে জেতা প্রার্থীদের তৃণমূলে যোগদানের কোনও সুযোগ নেই, বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মমতার কথায়, “নির্দলেরা যোগাযোগ করলেও আমি চাই না যাঁরা জিতেছেন তাঁরা এক্ষুনি দলে আসুন। কারণ, আমার কর্মীরা যদি হেরেও যায় তবু তাঁর সঙ্গেই আমি থাকব। কেউ যদি মনে করে দলকে সাবোতেজ করে কাউকে জিতিয়ে দিয়ে পরে আবার ঢুকে যাব, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দ্য গেম ইজ নট দ্যাট ইজি। আর যে ১০ জন জিততে পারেননি, যাঁর কাছেই হেরে থাকুন তাঁদের কর্পোরেশনের কাজে লাগাতে হবে।”

পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব…

রতন দে’র মতো বহু পুরনো তৃণমূল কর্মীকে এবার টিকিট দেয়নি দল। তবে তাতে সেই নেতাদের গুরুত্ব যেন কোনওভাবে লঘু করে না দেখা হয়, সে বার্তাও দিলেন মমতা। তিনি বলেন, “রতন দেকে আমরা টিকিট দিতে পারিনি। এরকম দু’ একজনকে টিকিট দিতে পারিনি, কিন্তু তাঁরা দলের অনেক পুরনো সদস্য। ১০৩ নম্বর ওয়ার্ড আমাদের জন্যই জিতেছে ওরা। ডাক্তার সাহেব দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে ডক্টর সেলের কিছু করতে হবে। কর্পোরেশনে অনেক সুযোগ আছে।”

কাউন্সিলরদের টাস্ক দলনেত্রীর…

মেয়র, ডেপুটি মেয়র, চেয়ারপার্সন থেকে মেয়র পারিষদ, সমস্ত নামই ঘোষণা হয়ে গেল বৃহস্পতিবার। এবার কাজে লেগে পড়তে হবে কাউন্সিলরদের। বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে বার্তাই দিলেন মহারাষ্ট্র নিবাস হল থেকে। তিনি বলেন, “আজ থেকেই এলাকা পরিষ্কার করবেন। সমস্ত হোর্ডিং, পোস্টার খুলতে হবে। রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ, মানুষ জল পাচ্ছে কি না সব দেখতে হবে। রং করা, পার্কগুলি সুন্দর করে রাখা, গাছ পোঁতা, পাম্প-ড্রেনেজ সবটা দেখতে হবে। ম্যানহোল আমরা দেখি না, পরে নোংরা জমে জল দাঁড়িয়ে যায়। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া হতে থাকে। সব দেখতে হবে আমাদের। রাস্তা দিয়ে যখন যাবেন, তাকিয়ে যাবেন। এপাশ ওপাশ দেখতে দেখতে যাবেন। কোন লাইট খারাপ, রাস্তা কোথায় ভাঙা, জল জমছে কোথায় এগুলো তো আপনারই কাজ। পিচের উপর পিচ চাপিয়ে দেয়। এটা হবে না। এই করে মাঝেরহাট ব্রিজটা গেছে।”

পাড়ায় পাড়ায় সমাধান…

১ জানুয়ারি থেকে ফের শুরু পাড়ায় পাড়ায় সমাধান, দুয়ারে সরকার। গাদাগাদা লোক নিয়ে আসবেন না। যার প্রয়োজন তাঁকেই দেবেন, বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্রেডিট দেখাতে গিয়ে সরকারকে ছোট করে নিজে বড় হবেন না। এটা দলের লক্ষ্য না। সরকারের একটা টাকার সীমা আছে। আর টাকাটা জনগণের। জনগণের পয়সার হিসাব রাখতে হয়। তাঁদের পয়সায় সব প্রকল্প চলছে।

৬ মাস পর রিপোর্ট কার্ড নেব…

ধর্মের নামে কাজ ফেলে জন প্রতিনিধি হয়ে ঘুরে বেড়ালে চলবে না। কড়া বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কাজগুলো চটপট করতে হবে। ফেলে রেখে দিলাম, এখন তো পাঁচ বছর হাতে আছে, চলবে না। আমি আগামী ৬ মাস পর কলকাতা কর্পোরেশনের রিপোর্ট কার্ড নেব। প্রতি ছ’মাস অন্তর রিভিউ হবে। কে কাজ করতে পারল, আর কে কাজ করতে পারল না। যদি কাজ কেউ না পারেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেশি সময় লাগবে না। প্রেসকে বিবৃতি দিই বেশি, কাজ করি কম চলবে না। এসব বিজেপি করে, সিপিএম করে। আমরা করব না।”

আরও পড়ুন: KMC Election 2021: আগামী পাঁচ বছরের জন্য ফের কলকাতার মেয়র পদে ফিরহাদ হাকিম