কলকাতা: রবিবার (১০ মার্চ), কলকাতার ব্রিগেড প্য়ারেড গ্রাউন্ডে, তৃণমূল কংগ্রেসের জনগর্জন সভা থেকে বাংলার ৪২টি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রার্থী তালিকায়, বাংলার বাইরের রাজ্যের তিনজনের নাম রয়েছেস- ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ এবং শত্রুঘ্ন সিনহা। বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া নিয়ে, ইতিমধ্যেই তৃণমূলকে আক্রমণ করা শুরু করেছে বিজেপি। তবে, শুধু বাংলায় নয়, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলার বাইরেও প্রার্থী দিতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। জনগর্জন সভা থেকে এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেই জানিয়েছেন, বাংলার বাইরেও তিনটি রাজ্যে প্রার্থী দিতে চলেছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে যে কোনও ইন্ডিয়া জোট নেই, সব দলের সঙ্গেই তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াই, তাও স্পষ্ট করে দেন মমতা।
এদিন জনগর্জন সভার মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, “মনে রাখবেন, এখান তৃণমূল বনাম বিজেপি। কংগ্রেস সিপিআই(এম)-এর সঙ্গেও লড়াই চলবে। বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস একা লড়বে। অসমেও লড়বে। উত্তর প্রদেশেও লড়বে। সেখানে ১টা আসনে আমরা লড়ব। অখিলেশের সঙ্গে কথা হয়েছে। মেঘালয়ে আমরা বিরোধী দল। মেঘালয়েও লড়ব। দেশ কোন পথে চলবে তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক করবে। বাংলা ঠিক করবে। বাংলাই পথ দেখাবে।”
প্রসঙ্গত, এদিনের সভার আগেই জল্পনা চলছিল, সবা থেকে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণার পাশাপাশি, মেঘালয়ের একজন, অসমের দুইজন এবং উত্তর প্রদেশের একজন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেন মমতা। শেষ পর্যন্ত ভিন রাজ্যের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে, উত্তর প্রদেশ থেকে যে একটি লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল, তার আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। সমাজবাদী পার্টির কোর কমিটির বৈঠকে, উত্তর প্রদেশে তৃণমূল কংগ্রেসকে একটি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সমাজবাদী পার্টির সহ–সভাপতি কিরণময় নন্দ জানিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকেই এই রাজ্যে একটি আসনে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছিল।
সপা সূত্রে জানা গিয়েছিল, কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা কমলাপতি ত্রিপাঠীর নাতি রাজেশ ত্রিপাঠী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে। উত্তর প্রদেশের চান্দোলি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন কমলাপতি। ওই আসন থেকেই লড়তে চান রাজেশ ত্রিপাঠী। এই কেন্দ্র বারাণসীর পাশেই। বারাণসী গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল রাজেশ ত্রিপাঠীর। তৃণমূল কংগ্রেস এই আসনে প্রচারে নামলেও, সমাজবাদী পার্টির ক্যাডাররাই মূলত প্রচার চালাবেন।
অন্যদিকে, অসমের তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অসমের ১৪টি লোকসভা আসনেই প্রার্থী দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, অসমের রাজনীতিতে দিন-দিন প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে কংগ্রেস। এই অবস্থায় বিজেপি-বিরোধী রাজনীতির পরিসরটি অসমে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অসমের সেই শূন্যস্থান ত অসমের সব আসনে প্রার্থী দিক তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসই নিতে পারে বলে মনে করেন সুস্মিতা। তবে, তৃণমূল সূত্রে খবর, শিলচর, করিমগঞ্জ, ধুবড়ি, লক্ষ্মীমপুর এবং নওগাঁও লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী দিতে পারে তৃণমূল। অন্যদিকে, মেঘালয়ের তুরা আসন থেকেও প্রার্থী দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। দিন তিনেক আগেই উত্তর পূর্বের এই দুই রাজ্যে প্রার্থী ঠিক করার জন্য দুটি নির্বাচন কমিটি গঠন করেছে তৃণমূল। অসমে ১০ জনের এই কমিটির মাথায় আছেন, রাজ্যের তৃণমূল সভাপতি রিপুন বোরা। আর মেঘালয়ের ৯ সদস্যের কমিটির মাথায় আছেন সেই রাজ্যের তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক চার্লস পিনগ্রোপ।