কলকাতা: রাজ্যে কলকাতা-সহ চার পুরনিগমের ভোট সম্পন্ন। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বাকি ১০৮ পুরসভায় পুরনির্বাচন। তার আগে কোন পুরসভায় কেমন নিরাপত্তার হাল, আদৌ যথোপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে কি না তার সবদিক খতিয়ে দেখতে রাজ্য পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন (State Election Commission)। সূত্রের খবর, ১০৮ টি পুরসভায় পুলিশের রুট মার্চ ঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতেই এই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। বিভিন্ন পুরএলাকাতেই রুট মার্চ হচ্ছে না বলে কমিশনের (State Election Commission) কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে বলে খবর সূত্রের। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এ বার রিপোর্ট তলব করল কমিশন। বস্তুত, পুরসভার নির্বাচনে এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, রাজ্য পুলিশ দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছে কমিশন। ফলে প্রথম থেকেই বেশ কড়া কমিশন।
পুরনির্বাচন উপলক্ষ্যে বিরোধীদের বারবার আবেদন সত্ত্বেও রাজ্য পুলিশকেই বেছে নিয়েছে কমিশন। তারপরেও রাজ্যে কিন্তু অশান্তি-অনিয়মের অভিযোগ থামেনি। চার পুরনিগমের ভোটেও দেদার ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছিল। তবুও, শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পাল্টা, পুরভোটে অশান্তির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু আগেই বলেছিলেন, পুরনিগমের নির্বাচনে যেভাবে ভোট হয়েছে তাতে আদালতে মামলা দায়ের করা উচিত। সেইদিক থেকে নিজেদের ‘গুডবয় ইমেজ’ ধরে রাখতে তৎপর কমিশন।
কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রে খবর, বাকি ১০৮টি পুরসভার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের করেছেন বিজেপি নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলাতেই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার বাহিনী সংক্রান্ত হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী সোমবার মামলার শুনানির মধ্যেই হলফনামা দিতে হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। এই পরিস্থিতিতে তাই, কোন পুরসভায় নিরাপত্তা কতটা জোরাল তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে কমিশন।
বুধবার, আদালতে বিজেপি নেতার কৌঁশুলি জানান, কলকাতা এবং অন্য চারটি পুর নিগমের সদ্য-সমাপ্ত ভোটে অশান্তি হয়েছে, ছাপ্পা ভোট পড়েছে। শুধু তাই নয়, বিধাননগরে শৌচালয় থেকে ভুয়ো ভোটার উদ্ধার হয়েছে। সেই ছবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সামনেও এসেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য জুড়ে পরবর্তী দফার পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়া হোক। পাল্টা, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র এবং সোনাল সিনহা জানান, ২০১৫ সালের তুলনায় এবার পুরভোট অনেক শান্তিতে হয়েছে। তবে মামলাকারীরা যে-সব অভিযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হোক।
বস্তুত, পুরভোট আবহেই কমিশনের ভূমিকায় প্রথম থেকেই অসন্তুষ্ট ছিল হাইকোর্ট। কমিশনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে হাইকোর্ট জানিয়েছিল, কোনও পুরসভায় যদি কোথাও কোনও বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর আসে বা ভোটে কোনও সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে ভোট কেন হল না তার দায় বর্তাবে কমিশনের উপর। ফলে, পুরভোট নিয়ে আদালতের হুঁশিয়ারির কথা মাথায় রেখেই প্রথম থেকেই কড়া ছিল কমিশন। চার পুরনিগমে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থেকে শুরু করে একাধিক পদক্ষেপ করে কমিশন। এ বার নতুন করে রুট মার্চ ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না তা জানতে চেয়েই রাজ্য পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করল কমিশন।