দেরাদুন: উত্তরাখণ্ডের ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দাবি ছিল, এবারের নির্বাচনে দেবভূম কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছে গেরুয়া শিবির। অনেকেই ভেবেছিলেন উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সরকারের পতন সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু এত জল্পনা কল্পানার পরও দ্বিতীয়বারের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে দেবভূম গেরুয়া রঙকেই বেছে নিল। শুধু নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতাই নয়, দুই তৃতীয়াংশ জনসমর্থন নিয়ে আরও একবার ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। স্বাভাবিকভাবে বিজেপির এই বিপুল জয়ের সমস্ত কৃতিত্বটাই তাঁর, যাঁর নেতৃত্ব ও রণকৌশলই বিরোধীদের কুপকাত করেছে। দল তাঁর ওপর আস্থা রেখে নির্বাচন পরিচালনা থেকে রণকৌশলের গুরুদায়িত্ব দিয়েছিল। সেই পরীক্ষায় সফলভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। এই নির্বাচনে জয়ের পর বিজেপি এক নতুন নজিরও স্থাপন করেছে। এই প্রথম কোনও একটি রাজনৈতিক দল উত্তরাখণ্ডে পরপর দু’বার ক্ষমতায় এল। শুধুমাত্র নেতানেত্রীরা নয়, রাজ্যের নিচুতলার সমস্ত কর্মীরাও এই জয় পেতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে।
ভোটের আগে বারবার মুখ্যমন্ত্রী বদল, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সহ একাধিক ইস্যুতে উত্তরাখণ্ডে কোণঠাসা ছিল বিজেপি। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ রাজ্যের ইনচার্জের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মুশকিল আসান হতে শুরু করে। উত্তরাখণ্ডে দলের জয়কে অনেকটাই সহজ করে তুলেছিলেন প্রহ্লাদ। তাঁর হাতে দায়িত্ব যাওয়ার পর যাবতীয় সমস্যার দ্রুত সমাধান হতে শুরু করেছিল। রাজ্যে দলের সংগঠনকে এককাট্টা রাখা এই জয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর উত্তরাখণ্ড বিজেপিতে বিদ্রোহের আগুনও দেখা গিয়েছিল। অনেক বিজেপি নেতাই টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে জোশীর নেতৃত্বে বিজেপি এই সব বিষয়কে পাত্তা না দিয়ে বিজেপি সংগঠনকেই অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। বিজেপি সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী দলকে এককাট্টা রাখতে জোশী বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
দলকে জেতাতে নির্দিষ্ট রণকৌশল তৈরির করার বিষয়ে সিদ্ধহস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উত্তরাখণ্ডেও তাঁর তৈরি করা রণকৌশল সঠিকভাবে কাজ করেছে। উত্তরাখণ্ড বিজেপি সূত্রের খবর, ডিসেম্বর দল একটি অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা করেছিল। সেই সমীক্ষাতে বিজেপি যতগুলি আসনে জেতার সম্ভাবনা ছিল, তাতে দল সন্তুষ্ট ছিল না। দল পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর জোশী যে আসনগুলিতে বিজেপির জেতার সম্ভাবনা প্রবল, সেই আসনগুলি নিয়ে বিশেষ রণকৌশল তৈরি করেছিলেন। জোশীর নির্দেশেই সেইসব আসনগুলিতে দলকে একসঙ্গে মাঠে নামিয়ে আগেরবারের মত ফলাফল করেছে বিজেপি। নির্বাচনের আগে বিজেপি একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল বিজেপি। একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হওয়া ছিল অন্যদিকে বারংবার মুখ্যমন্ত্রী মুখ বদল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এই সময়ে কংগ্রেস বিজেপিকে আক্রমণ করলেও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা ও কংগ্রেস শাসনে শুক্রবারের প্রার্থনা ও মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার ইস্যুকে সামনে এনে কংগ্রেসের আক্রমণ ভোঁতা করেছিলেন প্রহ্লাদ।
প্রহ্লাদ জোশীর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও দলকে সহজ জয় পেতে সাহায্য করেছে। প্রহ্লাদ নিজেকে প্রথম সারিতে তুলে আনতে বিশেষ আগ্রহী নন। ২০০৪ সাল থেকে কর্নাটকের ধারওয়াদ থেকে তিনি নির্বাচিত সাংসদ। এখনও অবধি তিনি ৪ বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। একই সঙ্গে ২০১৪ থেকে ২০১৬ অবধি তিনি কর্ণাটক বিজেপির সভাপতিত্বের দায়িত্বও সামলেছেন। তাই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রশ্নাতীত। বর্তমানে দ্বিতীয় মোদী সরকারের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন।