জয়নগর: নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ের দ্বিতীয় দফায় হটসিট নন্দীগ্রাম (Nandigram)। সারা বাংলার নজর ছিল পূর্ব মেদিনীপুরে। সেখানে মমতা-শুভেন্দুর লড়াই। সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছিলই। বয়ালের ৭ নম্বর বুথে মুখ্যমন্ত্রী ঢোকার পরেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। মুখোমুখি তৃণমূল ও বিজেপি। নন্দীগ্রামে যখন ক্রমশ উত্তাপ বাড়াচ্ছে বয়াল, তখনই রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে জয়নগরে মঞ্চে উঠলেন নরেন্দ্র মোদী। মঞ্চে উঠেই সরাসরি আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গঙ্গাসাগরের মহিমা, মাহাত্ম বুঝিয়ে ফের একবার ‘আসল পরিবর্তনের’ ডাক দিলেন তিনি। পাশাপাশি বাংলার জন্য একাধিক ঘোষণা ও তাঁর বাংলাদেশ সফর নিয়ে তৃণমূলের একাধিক অভিযোগের জবাব দিলেন মোদী।
বঙ্গে প্রথম দফার ভোটের দিনই বাংলাদেশে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান ওড়াকান্দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখন রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মতুয়া সম্প্রদায়ের মাধ্যমে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছিল। এই মর্মে নির্বাচন কমিশনেও গিয়েছিল তৃণমূল। বাংলাদেশে গিয়ে মতুয়া ভোট নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ উঠেছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ বার সেই অভিযোগের জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জয়নগর থেকে নরেন্দ্র মোদীর সাফ কথা, “আমি বাংলাদেশে গিয়ে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পুজো দিয়েছি। এটা নিয়েও দিদির আপত্তি। আমি ওড়াকান্দিতে গিয়ে দেশের জন্য আশীর্বাদ চেয়েছি। এটা দেখেও দিদির রাগ হয়েছে। বলুন মা কালীর মন্দিরে যাওয়া কি ভুল? হরিচাঁদ ঠাকুরকে প্রণাম করা কি ভুল?”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ বছর ধরে বাংলার জন্য কিছু করেননি। স্রেফ কাটমানি আর দুর্নীতি হয়েছে। রক্ত ঝরেছে বাংলার ভাই-বোনেদের। কোনও উন্নতিই হয়নি। এই সব ইস্য়ুতে মমতাকে বিঁধলেন মোদী। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাকে রক্তরঞ্জিত করেছেন মমতা। স্পষ্ট বাংলায় নমো বলেন, “আপনাকে বাংলার ভাই বোনেদের হত্যার হিসেব দিতে হবে। আপনাদেরকে মায়েদের ছেলের হত্যার হিসেব দিতেই হবে…রক্তের খেলা আর চলবে না।” তিনি এ-ও বলেন, “এতকিছুর পরেও দিদি বলছেন কুল কুল কুল, আসলে তৃণমূল বাংলাকে রক্তে রাঙানো শূল।”
গতকালই দেশের অ-বিজেপি নেতৃত্বকে চিঠি লিখে একাধিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সেই চিঠিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব থেকে পাওনা টাকা না মেলা, সব অভিযোগের উল্লেখ ছিল। চিঠি পৌঁছেছিল সোনিয়া গান্ধী, শরদ পাওয়ার, এম কে স্তালিন, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, উদ্ধব ঠাকরে, হেমন্ত সোরেন, অরবিন্দ কেজরিবাল, নবীন পট্টনায়ক, জগন রেড্ডি, কেএস রেড্ডি, ফারুখ আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি, দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের কাছেও। সেই চিঠিকেও কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না মোদী। তাঁর সাফ অভিযোগ, দিদি এতদিন বহিরাগত ইস্যু নিয়ে কথা বলে এখন কেন বহিরাগতদের কাছে সমর্থন চাইছেন!
আমফানের টাকা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে কড়া আক্রমণ করেন মোদী। তিনি বলেন, “আমফানে সাহায্য করার বদলে আপনাদের লুটে নিয়েছেন দিদি। কেন্দ্রের টাকা মানুষের বদলে তৃণমূলের দফতরে গিয়েছে। এই দুর্নীতির অন্য নাম হল ‘খেলা হবে’। দিদি বাংলায় খেলার মাঠ ছিল, আছে, থাকবে। বিজেপির জন্য বাংলা উন্নয়নের মাঠ হয়ে উঠবে। বাংলা শিক্ষার মাঠ হয়ে উঠবে। বিজেপির জন্য বাংলা শিল্পের মাঠ হয়ে উঠবে।”
জয়নগরের সভা থেকে ফের বাংলার কৃষকদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই বাংলার কৃষকরা পিএস কিসান নিধির টাকা পাননি। তিনি বলেন, “সারা দেশে ১০ কোটি কৃষক টাকা পেয়েছে। সেখানে কোনও কাটমানি নেই। সরাসরি টাকা ঢুকেছে। কিন্তু দিদি বাংলার কৃষকদের সঙ্গে শত্রুতা করা এই প্রকল্পের লাভ পেতে দেননি। কেন্দ্র সরকার কৃষকদের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বারবার চেয়েছে। কিন্তু দিদি কিছু দেননি।” ২ মে বাংলায় বিজেপি সরকার এলে পিএম কিসান সম্মান নিধির কাজ শুরু হবে। প্রত্যেক কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৩ বছরের ১৮ হাজার টাকা একবারে ঢুকবে বলেও আশ্বাস মোদীর।
এ দিনের সভা থেকে ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলে নরেন্দ্র মোদী আশ্বাস দেন ২ মে বিজেপি সরকার এলে মৎস্যজীবীরাও উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, “আসল পরিবর্তন স্রেফ ১ মাস দূরে।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন তুলে ধরে মোদীর কথা, “নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়। আপনারাই পদ্মফুল ফোটাবেন। সকলে মিলে বলুন, ভারত মাতা কি জয়।”
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামের বয়ালে ভয়ঙ্কর উত্তেজনা, মমতাকে ঘিরে রাখা হল মানববন্ধন করে