অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। না! এই নামে হয়তো তাঁকে চেনেন না অনেকেই। কিন্তু ‘কী করে বলব তোমায়’ ধারাবাহিকের ‘সোনালি’, ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’-র ‘হৈমন্তী’ অথবা ‘মিঠাই’-এর ‘অপরাজিতা’কে এক নামে চিনবেন। প্রথম দু’টো ধারাবাহিকে (Tollywood) নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করছেন অর্পিতা। ‘মিঠাই’-এ যদিও তাঁর চরিত্র পজিটিভ। দীর্ঘদিন নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয়ের অনুভূতি কেমন? প্রশংসা নাকি ভর্ৎসনা, দর্শক-ফ্যান-ফলোয়ারদের কাছ প্রাপ্য হিসেবে মেলে কোন উপহার? মুখোমুখি আড্ডায় হাজির অভিনেত্রী।
‘হৈমন্তী’ এবং ‘সোনালি’ গ্রে শেড, নেগেটিভ চরিত্র তো?
এই নেগেটিভ শেড কথাটা আমার কাছে আপত্তিকর। কারণ আমার মনে হয়, প্রত্যেক চরিত্রের নিজস্ব স্ট্যান্ড পয়েন্ট থাকে। নেগেটিভ তখনই হয়, যখন কেউ সিচুয়েশন অনুযায়ী অভিনয়টা অন্য রকম করেন। অর্থাৎ কোনও শোকের দৃশ্যে কেউ অন্যভাবে রিঅ্যাক্ট করল। সকলে একভাবে করছে, আমি অন্য কিছু করলাম। তখনই আমি নেগেটিভ। ফলে এই পয়েন্ট অফ ভিউটা বুঝতে হবে। পজিটিভ ক্যারেক্টার থাকলে তবেই নেগেটিভের অস্তিত্ব থাকে। পজিটিভ এবং নেগেটিভ দু’জনেই একে-অপরের উপর নির্ভরশীল। একজন না-থাকলে অন্য়জনের কোনও অস্তিত্ব থাকে না।
আরও পড়ুন, শুটিং না থাকলে আমি গদাধরের সঙ্গে ক্রিকেট খেলি: অয়ন্যা
এর আগেও নিশ্চয়ই বহু নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন?
হ্যাঁ, নেগেটিভ চরিত্র আগে অনেক করেছি। আমার প্রথম ধারাবাহিক ‘এই ঘর এই সংসার’। সেখানে নেগেটিভ চরিত্র ছিল। নেগেটিভ করতে মজাই লাগে।
অনস্ক্রিন অর্পিতার পারফরম্যান্স।
দীর্ঘদিন ধরে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে-করতে কোথাও কি ব্যক্তিজীবনে এর প্রভাব পড়ে?
না, একেবারেই ব্যক্তি জীবনে প্রভাব পড়ে না। রিয়েল আর রিল লাইফের মধ্যে অনেক ফারাক। এটা ঠিক, আমরা একটা চরিত্র একমাস, দু’মাস, এক বছর, দু’বছর, তিন বছর পর্যন্ত করলেও কোথাও গিয়ে সেই চরিত্রটা তখন তৈরি হয়, যখন সেটে যাই, যখন মেক-আপে থাকি। ‘সোনালি’, ‘হৈমন্তী’ দু’টোই গ্রে শেড ক্যারেক্টার। কিন্তু অর্পিতা খুব পজিটিভ। আমার মনে হয়, এটা কোনওভাবেই ব্য়ক্তি জীবনকে প্রভাবিত করে না। কারণ দিনের শেষে আমরা অভিনেতা। পজিটিভ মানুষ হয়ে নেগেটিভ ক্যারেক্টারে অভিনয় করাটা বেশ কঠিন। আবার আমার মনে হয়, উল্টোটাও ঠিক। সচরাচর নেগেটিভ ক্যারেক্টার যাঁরা করেন, তাঁরা কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে ভাল হন (হাসি)।
অর্থাৎ ক্যামেরা চলতে শুরু করার পর, চরিত্রে ঢুকে পড়েন, তার আগে পর্যন্ত আপনি আলাদা, তাই তো?
ক্যামেরা যখন রোল হয়, আর পরিচালক ‘অ্যাকশন’ বলেন, তখন চরিত্রের মধ্যে ঢুকি। বাকি সময়টা তো আমরা সকলে এক। আমিও যখন ছোটবেলায় সিনেমা বা সিরিয়াল দেখতাম, মনে হত, “বাবা! এর সঙ্গে এত ভাল বন্ধুত্ব কীভাবে হয়, সিরিয়ালে তো এ ওকে সহ্য করতে পারে না!” এই জিনিসগুলো এখন এই প্রোফেশনে এসে বুঝতে পারি। মেক-আপ রুমে আড্ডা চলে একসঙ্গে। কিন্তু ‘অ্যাকশন’ বলার পর সবাই আলাদা।
আরও পড়ুন, অভিষেক বচ্চনের কোন কোন সিক্রেট শেয়ার করল ইনায়ৎ?
আপনার বাড়ি কোথায়?
আমি আদতে বাঁকুড়ার মেয়ে। আমার বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ফলে অনেক জায়গায় বাবার বদলির পর এখন আমি উত্তরপাড়ায় থাকি। ওখানেই শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ি। বাবা-মা আছেন। আর শ্বশুরবাড়িতে স্বামী, পাঁচ বছরের মেয়ে, দেওর, জা, শ্বশুর, শাশুড়ি সকলে আছেন।
পরিবারের সঙ্গে অভিনেত্রী।
পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে কেমন ফিডব্যাক পান?
সত্যি কথা বলতে, শাশুড়ি আমার দ্বিতীয় মা। ‘শাশুড়ি কোনওদিন মা হতে পারে না’, এই মিথটা আমার ক্ষেত্রে সত্যি হয়নি। মায়ের মতোই সব কিছুতে শাশুড়ি সাপোর্ট করেন। আমাকে বলেন, “শোন না, এই লুকটা ঠিক ছিল না” অথবা “ওই শাড়িটা ঠিক ছিল না।” বাবার ইচ্ছে ছিল আমি এমবিএ করে আর্মিতে যোগ দিই। কারণ বললাম, বাবা আর্মিতে ছিলেন। এখন ১৬ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। সে সময় পেরিয়ে এসেছি। মা খুব ক্রিটিসাইজ করে। আর এখন সবথেকে বড় অনুরাগী আমার পাঁচ বছরের মেয়ে। ও (মেয়ে) শুধু বলে দিয়েছে, “মা তুমি কিন্তু ঝগড়া করবে না।” “তুমি কেন বদমায়েশি করেছ আজ? কেন তুমি রাধিকাদিদিকে বিরক্ত করেছ আজ?”—মেয়ের এইসব রিঅ্য়াকশন আমি উপভোগ করি।
আর স্বামী?
ও একেবারে অন্য প্রোফেশনে রয়েছে। একটি কোম্পানিতে ফিনান্সিয়াল ম্যানেজার। মজার বিষয় হল, আমাদের ঝগড়ার সময় যদি জোরে কথা বলি, তখন বলে, “এই দেখো নাটক শুরু করে দিয়েছ, সিরিয়ালের মতো চিৎকার করছ।” আমি এটাও এনজয় করি।
আরও পড়ুন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘ফিরকি’তে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে: আর্যা
যেহেতু নেগেটিভ চরিত্রে আপনাকে এখন বেশি দেখা যাচ্ছে, হঠাৎই কোনও অযাচিত প্রশংসা পেয়েছেন?
‘ভাগ্যলক্ষ্মী’র ‘হৈমন্তী’ চরিত্রটা যে দর্শকদের ভাল লাগছে, সেটার প্রমাণ কয়েকদিন আগেই পেয়েছি। আমি আর আমার মা একটা শপিং মলে গিয়েছিলাম। সেখানে এক মহিলা হঠাৎ এসে আমাকে বলেন, “আপনি খুব অসভ্যতা করছেন। আপনার বেঁচে থাকাই উচিত নয়।” প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে বললেন, “নিজের মেয়েকে কেউ থাপ্পড় মারে ওভাবে?” পরে বুঝলাম, ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’তে আমার ছোট মেয়েকে আমি রাস্তায় চড় মেরেছিলাম। সেটার জন্যই উনি (শপিং মলের মহিলা) বলছিলেন। এটাই তো কমপ্লিমেন্ট।
শুটিংয়ের মাঝে ফটোশুট।
কেরিয়ারে এমন কোনও নেগেটিভ ঘটনা ঘটেছে, যেটা এখন ভাবলে মনে হয়, না হলেই ভাল হত?
সত্যি কথা বলতে, সেভাবে নেগেটিভিটি আসেনি আমার কেরিয়ারে। কোনও নেগেটিভ বন্ধুও পাইনি। হ্যাঁ, এটা বলব, আমার মনে হয় আমার সঠিক সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা উচিত ছিল। আমি মডেলিং দিয়ে কেরিয়ার শুরু করার পর প্রথমে সিনেমা করেছিলাম। ‘পাগল প্রেমী’। ঋত্বিক চক্রবর্তীর বিপরীতে। ওড়িয়া এবং বাংলা দু’টো ভাষাতেই নায়িকা ছিলাম। তারপর ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করি। সেটা মনে করি ভুল ডিসিশন ছিল। বাকি যেটুকু করেছি, তাতে আমি খুশি।
আরও পড়ুন, মিথিলা এবার ‘রাজনীতিবিদ’, কিন্তু কোথায়?