Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘ফিরকি’তে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে: আর্যা

হঠাৎ করেই নাকি শেষ করে দেওয়া হল ‘ফিরকি’। অন্তত এমনটাই মত কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকা সম্প্রীতি পোদ্দার (ফিরকি) এবং আর্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (লক্ষ্মী)। একসঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে উঠে এল অনেক ক্ষোভ। একই সঙ্গে এই যাত্রা মনেও রাখতে চান দুই অভিনেত্রী।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘ফিরকি’তে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে: আর্যা
ধারাবাহিকের দৃশ্যে সম্প্রীতি এবং আর্যা।
Follow Us:
| Updated on: Dec 30, 2020 | 6:49 PM

‘ফিরকি’। মা-মেয়ের গল্প। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের গল্প। ন’মাস আগে ঠিক এভাবেই শুরু হয়েছিল এই ধারাবাহিক (TV)। আগামী ২ জানুয়ারি শেষ সম্প্রচার। হঠাৎ করেই নাকি শেষ করে দেওয়া হল এই ধারাবাহিক। অন্তত এমনটাই মত কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকা সম্প্রীতি পোদ্দার (ফিরকি) এবং আর্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (লক্ষ্মী)। একসঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে উঠে এল অনেক ক্ষোভ। একই সঙ্গে এই যাত্রা মনেও রাখতে চান দুই অভিনেত্রী। রেকর্ডার অন করল TV9 বাংলা।

সম্প্রীতির তো ‘ফিরকি’ প্রথম কাজ। আর্যা এর আগে কী-কী করেছেন?

আর্যা: আমি মুম্বইতে থিয়েটার করতাম। মডেলিংও করেছি। আমার প্রথম বাংলা ছবি অরিন্দম শীলের পরিচালনায় ‘ধনঞ্জয়’। সেখানে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের স্ত্রীয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। অভিষেক সাহার পরিচালনায় ‘উড়নচণ্ডী’ করেছি। সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ গুহর ‘সামসারা’ করেছি। ‘ফিরকি’র আগে ‘ভাদ্রজা’ নামের একটা নাটক করছিলাম কলকাতায়। সেটা দেখেই ‘ফিরকি’র ডাক আসে।

আপনি এবং সম্প্রীতিই তো ‘ফিরকি’র মুখ্য চরিত্র ছিলেন?

আর্যা: আমি তো তাই-ই জানতাম। মুখ্য চরিত্ররাই মূলত পোস্টারে থাকে বলে জানতাম। প্রথমে ‘ফিরকি’র পোস্টারে আমি ছিলামও। পরে বাদ দেওয়া হয়। তখন বুঝতে পারি, আমি মুখ্য চরিত্র নই। হয়তো কোনওদিন ছিলামই না।

আরও পড়ুন, অভিষেক বচ্চনের কোন কোন সিক্রেট শেয়ার করল ইনায়ৎ?

এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছিলেন?

আর্যা: এটা তো চ্যানেলের সিদ্ধান্ত। আমাদের কিছুই বলার থাকে না।

GFX Card

‘ফিরকি’ হঠাৎ শেষ হয়ে গেল কেন? গল্প শেষ?

আর্যা: সিরিয়ালের গল্প শেষ হয় না কখনও। সেই জন্যই সেটা সিরিয়াল। যদিও চ্যানেলের এক কর্তা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গল্প শেষ হয়ে গিয়েছে। সেটার মানে আমি বুঝিনি।

সম্প্রীতিরও কি এক মত?

সম্প্রীতি: ‘ফিরকি’র ছোটবেলা দিয়ে শুরু হয়েছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই আমাকে দেখানো হয়। তারপর বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। গল্প ঘুরে গিয়েছিল। ফ্যামিলি ড্রামা হয়ে গিয়েছিল। শিল্পীদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হত। আমাদের মনে হয়েছিল, সেই জন্যই বোধহয় টিআরপি কমে যাচ্ছিল। তারপর আবার আমার মা-মাসিদের গল্প ফিরে আসে। তখন আবার টিআরপি বাড়ে। আদালতের দৃশ্য দেখানোর পর তো ৫.১ থেকে ৬.৪ হয়েছিল টিআরপি। আমার মনে হয় ফিরকিতে দর্শক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের যে লড়াইটা দেখতে চেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন, বউ বলেছে, এতদিন তো আমি জানতামই, এবার গোটা পৃথিবী জানে ‘মকবুল’ কত অনুগত: সাজি চৌধুরি

আর্যা: একদমই তাই। ওঁদের পৃথিবীটা কেমন, ওঁদের গোষ্ঠীতে কী হয়, দর্শক ফিরকিতে সেটাই দেখতে চেয়েছিলেন। ফ্যামিলি ড্রামা দেখানো শুরু হতেই দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। পরে আবার যখন টিআরপি বাড়ল, আমরা ভেবেছিলাম, এবার হয়তো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবন দেখানো হবে। কিন্তু বন্ধ করে দিল।

phirki

একটি অনুষ্ঠানে দুই অভিনেত্রী।

বন্ধ হবে যে, আপনারা জানতেন না?

সম্প্রীতি: না, আমরা কেউই জানতাম না।

আর্যা: প্রথমে শুনে তো বিশ্বাসই করিনি।

সম্প্রীতি: বহু মানুষ যাঁরা সিরিয়াল দেখতেন না, তাঁরাও ফিরকি দেখতেন। কারণ ওঁদের জীবনে কী হয়, সেটা দেখার আগ্রহ ছিল।

আর্যা: ঠিকই। নতুন প্রজন্ম এর দর্শক ছিল। ‘ফিরকি; অর্থাৎ সম্প্রীতির চরিত্র তো আইন নিয়ে পড়াশোনা করে পাশ করেছে, দেখানো হল। তাহলে ওর সংলাপে তো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য যে সব আইন রয়েছে, সেগুলো বলাতে পারত।

আরও পড়ুন, পুলিশের চরিত্রের কস্টিউম করা চ্যালেঞ্জিং, ‘দিল্লি ক্রাইম’-এর কস্টিউম ডিজাইনার স্মৃতি চৌহান

বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনও কারণ বলা হয়েছিল?

সম্প্রীতি: তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের গল্প দর্শক দেখতে চাইছেন না, আমাদের এটাই বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা প্রথম থেকেই পজিটিভ ফিডব্যাক পেয়েছি। ‘ফিরকি’ কখনও ট্রোল হয়নি।

আর্যা: আমিও সব সময় পজিটিভ কমেন্ট পেয়েছি। যাঁরা মিম তৈরি করেন, তাঁরা অনেকে বলেছেন, ফিরকি নিয়ে মিম তৈরি করার সাহস আমরা পাই না। আমি আপনাকে জোর গলায় একটা কথা বলতে পারি, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘ফিরকি’তে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন, নেপথ্যের কারিগররা কি আড়ালেই থাকবেন? হেয়ার স্টাইলিস্টের মৃত্যুতে ফের উঠল প্রশ্ন

কেন বলছেন একথা?

আর্যা: চ্যানেল ওদের এমন একটা বদনাম দিল যে, পরে কোনও প্রযোজক ওদের নিয়ে কাজ করতে চাইলে ১০বার ভাববে। যেটা আমার খারাপ লাগছে, ওদের জীবন দেখাতে পারেনি, সেটা চ্যানেলের ত্রুটি। স্ক্রিপ্ট পড়েই বোঝা যেত, যাঁরা লিখেছেন তাঁরা ফ্যামিলি ড্রামা লিখতে অভ্যস্ত। আমি তাঁদের ছোট করছি না। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে লেখার জন্য যেটুকু পড়াশোনা, রিসার্চ দরকার সেটা স্ক্রিপ্টে থাকত না। আমি তো একটা বিশেষ কমিউনিটিকে রিপ্রেজেন্ট করেছিলাম। আমাকে যখন পোস্টার থেকে বাদ দেওয়া হল, তখনই বুঝেছিলাম, এটা ফ্যামিলি ড্রামা হয়ে যাবে।

GFX Card

সম্প্রীতি: আসলে ‘ফিরকি’ যখন শুরু হল, তখন চ্যানেল বা প্রোডাকশন হাউজ খুব ভাল প্রোমোশন করেছিল। প্রচুর শেয়ার হয়েছিল। মানুষ ভালবেসেছিলেন বলেই তো সেটা সম্ভব হয়েছিল। তাহলে এখন এটা কেন বলা হল, সেটা আমার কন্ট্রাডিকশন মনে হয়েছে।

এই কথাগুলো এত খোলাখুলি বলছেন, পরের কাজ পেতে সমস্যা হতে পারে, সেই চিন্তা হচ্ছে না?

সম্প্রীতি: ভয় নিয়ে ভাবছি না। যেটা মনে হয়েছে, সেটাই বলছি। চ্যানেল বা প্রোডাকশনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যে আমাকে কাজটা দেওয়া হয়েছিল। যতদিন সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারব, করব। যেটুকু করেছি, সেটা নিজের জোরে। ফলে আমার কোনও ভয় নেই।

আরও পড়ুন, বাংলা ছবির প্রচারের ধারা বদলকে কীভাবে দেখেন নেপথ্যের কারিগররা?

আর্যা: তৃতীয় লিঙ্গের চরিত্রে অভিনয় করতে যখন দু’বার ভাবিনি, সেখানেই সাহসের পরিচয় পেয়েছেন মানুষ। এখনও গুগলে আমার নাম দিয়ে সার্চ করলে দেখবেন, আমার জেন্ডার নিয়ে দর্শকের কৌতূহল রয়েছে। সেটা তো আমার কোনও ভয় হয়নি যখন এখন সত্যিটা বলতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি মনে করি, ট্যালেন্ট থাকলে কাজ পাবই। সুবিধেবাদী হলে শিল্পী না হওয়াই ভাল।

নতুন কোনও কাজ শুরু হচ্ছে?

সম্প্রীতি: এখনই কিছু নেই।

আর্যা: আমিও কিছুদিন নিজের মতো পড়াশোনা করব। দর্শক লক্ষ্মীকে ভুলে যাক। তারপর আবার ভাবব। তাছাড়া ২০১৮তে একটা মালায়লম ছবি করেছিলাম। সেটা ২০২১-এ মুক্তি পাবে। তার কিছু কাজ বাকি। সেটা করতে কয়েকদিন পরে কেরল যাব।

GFX Card

ন’মাসের জার্নিতে এমন কিছু পেলেন, যেটা সারা জীবন সঙ্গে থাকবে?

আর্যা: তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কোনওদিন তো এত কাছ থেকে দেখিনি। ওদের সম্পর্কে পড়াশোনা করিনি ‘ফিরকি’র আগে। ওদের প্রতিদিনের সংগ্রাম, না-পাওয়াগুলো জানতাম না। জানার পরে বুঝেছি, মেয়ে হিসেবে আমার জার্নি অনেক সহজ। এছাড়া ‘ফিরকি’তে আমি মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছি। সেটা খুব লোভনীয়। খুবই ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার, যেটা সারা জীবন সঙ্গে থাকবে।

সম্প্রীতি: আমার তো বহুদিন ধরেই অভিনয়ের ইচ্ছে ছিল। সুযোগ হয়নি। চাকরি করতে করতে যখন ‘ফিরকি’র সুযোগ এল, তখন বাড়িকে কনভিন্স করতে সমস্যা হয়নি। চাকরি ছেড়েছি বলে আমার কোনও অনুশোচনা নেই। আমার সবথেকে বড় পাওয়া কোনও সাধারণ ধারাবাহিকে কাজ করিনি। একটা সম্প্রদায়ের জন্য কিছু বলতে পেরেছি। ওদের বন্ধু হতে পেরেছি।

আর্যা: টিপিক্যাল শাশুড়ি-বউমার ধারাবাহিকে আমিও কাজ করতে চাইনি। ফ্রেশ স্টোরিতে নিজেকে এক্সপ্লোর করতে চেয়েছিলাম। এই ন’মাস আমি পার্লারে যাইনি। আইব্রো, ওয়্য়াক্সিং কিছু করিনি। ন্যাচারাল থাকার জন্য এসব করেছিলাম। আসলে ‘লক্ষ্মী’ চরিত্রে অভিনয় করে আমার ব্যক্তিত্বে উত্তরণ ঘটেছে।