একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে টিনএজ ছেলেমেয়েদের সামনে শিহরণ জাগানো অন্তরঙ্গ মুহূর্তকে তুলে ধরেছিল যে ছবি, তা হল ‘আশিক বনায়া আপনে’। সেই ছবির টাইটেল ট্র্যাকে ছিল এমন এক রোমহর্ষক বিষয়, যা আজও ভুলতে পারেনি ৩০ পার করা সেই ‘টিনএজ’ ছেলেমেয়েরা। বিষয়টা এখন জিয়া নস্ট্যাল করে দেয় তাঁদের। গানে ইমরান হাশমি এবং বঙ্গতনয়া তনুশ্রী দত্তর অন্তরঙ্গ প্রেম দেখেই নারীপুরুষের ‘ইন্টিমেসি’ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েছিল তাঁরা।
এই মুহূর্তে ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে অভিনেত্রী তৃপ্তি দিমরির নগ্ন যৌনতা এবং রণবীর কাপুরের সঙ্গে তাঁর রসায়নে গা ভাসিয়েছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু এই ছবি মুক্তির ১৮ বছর আগে মুক্তি পায় ‘আশিক বনায়া আপনে’। এবং সেই ছবিতে বিছানায় একে-অপরকে ‘আদর’ করার সময় রীতিমতো নাকের জলে, চোখের জলে হতে হয়েছিল তনুশ্রীকে।
‘অ্যানিম্যাল’ প্রসঙ্গে তৃপ্তি জানিয়েছেন, রণবীর কাপুরের সঙ্গে সম্পূর্ণ নগ্ন শয্যাদৃশ্যে অভিনয় করার সময় সেই ঘরে ছিল কেবল রণবীর, পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা এবং চিত্রগ্রাহক। তৃপ্তির ব্যাপারে রণবীর ছিলেন বাড়তি সতর্ক। কিন্তু ‘আশিক বনায়া আপনে’ গানটির অন্তরঙ্গ দৃশ্য শুট করার সময় তনুশ্রীর ঘরে ছিলেন সক্কলে। গোটা ইউনিট।
অন্তরঙ্গ দৃশ্যে ইমরান হামশিকে ঠোঁটে চুমু (বলুন লিপলক) খেয়েছিলেন তনুশ্রী। টপলেস হয়েছিলেন তিনি। পোশাক খোলা এবং শয্যাদৃশ্য ছিল তাঁর। বিষয়টায় খুবই ভয় পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। এর বিবরণ দিতে গিয়ে বাংলার মেয়ে তনুশ্রী বলেছিলেন, “আমি বিষয়টায় স্বচ্ছন্দ ছিলাম না একেবারেই। ইমরানের সঙ্গে এই দৃশ্যটায় অপ্রস্তুত ছিলাম খুব। কিন্তু তাতে কারও কিছু যায় আসেনি। প্রচুর লোক ছিল ঘরে, ইউনিটের সব্বাই। তার মধ্যে ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে বারবার এটাও মাথায় রাখতে হচ্ছিল, মেকআপ যেন নষ্ট না হয়। যেন দেখতে ভাল লাগে আমাদের দু’জনকে…”
যে সময় ‘আশিক বনায়া আপনে’ ছবিতে কাজ করেছিলেন তনুশ্রী, তিনি মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এক্কেবারে নতুন ছিলেন। ফলে, অত লোকের সামনে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল তাঁর। বলেছিলেন, “পোশাক খোলার আগে সিঁড়ির মধ্যে ইমরানকে যখন জাপটে ধরে চুমু খাচ্ছিলাম, আমাদের উপর আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” এই আলোতেই কার্যত ঝলসে যায় তনুশ্রীর মুখ; যারপরনাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, “কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে এগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! তবে ক্যামেরার কাজ ছিল দারুণ। ক্যামেরার কারণেই সিনগুলো পরবর্তীতে সুন্দর দেখতে লেগেছিল।”
জামশেদপুরের মতো ছোট শহরের মেয়ে তনুশ্রী তারপর কী করলেন? এই দৃশ্য দেখেছিলেন তাঁর বাবা-মাও। যে শহরের মেয়ে তিনি, সেখানে মানুষ একে-অপরের জীবন নিয়ে কৌতূহলী। সেই জায়গার মেয়ে মুম্বইয়ে গিয়ে নায়কের বাহুডোরে প্রায় অর্ধনগ্ন হয়ে তাঁকে সরাসরি ঠোঁটে ‘স্মুচ’ করেছে, এবং সেই দৃশ্য তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগ করেছে সব্বাই। বিষয়টি ঘটে যাওয়ার পর দু’দিন বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেননি তনুশ্রী। কিন্তু প্রগতিশীল মানসিকতার বাবা-মা বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন।
পরবর্তী সময়ে তনুশ্রী কিন্তু সেই ভাবে দাগ কাটার মতো পারফরম্যান্স করতে পারেননি। যদিও ২০২০ সালে তিনিই ছিলেন সেই ঠোঁটকাটা নায়িকা, যিনি ‘মিটু’ (#MeToo) প্রসঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন এবং তাঁকে অনুসরণ করে অন্যান্য অনেক অভিনেত্রী নিজের মুখে বসানো এক দশক ধরে ঝুলিয়ে রাখা তালা খুলেছিলেন। মিটু হয়ে উঠেছিল ‘জাতীয় ইস্যু’।