International Men’s Day 2021: আমাদের আইনে রয়েছে স্বামী যদি কম রোজগেরে হন, স্ত্রী তাঁকে খোরপোষ দিতে পারেন: নন্দিনী ভট্টাচার্য
International Men's Day 2021: এক সময় কর্পোরেট চাকরি করেছেন। সামলেছেন পারিবারিক ব্যবসা। বহু বছরের প্রফেশনাল সিঙ্গার। এ হেন নন্দিনী ভট্টাচার্য এখন পুরুষ-অধিকার নিয়ে লড়াই করার অন্যতম মুখ। এখন এটাই তাঁর পেশা। আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে TV9 বাংলার সঙ্গে শেয়ার করলেন নিজের ভাবনা।
এক সময় কর্পোরেট চাকরি করেছেন। সামলেছেন পারিবারিক ব্যবসা। বহু বছরের প্রফেশনাল সিঙ্গার। এ হেন নন্দিনী ভট্টাচার্য এখন পুরুষ-অধিকার নিয়ে লড়াই করার অন্যতম মুখ। এখন এটাই তাঁর পেশা। আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে TV9 বাংলার সঙ্গে শেয়ার করলেন নিজের ভাবনা।
আমরা যদি মনে করি নারী দিবসের গুরুত্ব আছে, শিশু দিবসের গুরুত্ব আছে, এমনকি ভ্যালেন্টাইন ডে-র গুরুত্ব আছে, তা হলে তো অবশ্যই পুরুষ দিবসেরও গুরুত্ব আছে। আবার উল্টো দিক থেকে যদি নারীরা বলেন, নারীদের জন্য কি একটা দিন? নারীদের জন্য তো বছরের সব দিন। আবার সদ্য শিশু দিবস পেরিয়ে এলাম। তা হলে কি শিশুদের জন্য কি একটা দিন? শিশু তো বাবা-মায়ের জীবন জুড়ে থাকে। আবার ভ্যালেন্টাইন ডে এলেই সবাই বলেন, প্রেম দিবস। কিন্তু যাদের মনে প্রেম আছে, হাতে পয়সা আছে, তাদের জন্য প্রতিদিনই প্রেম দিবস। সে ভাবে দেখলে পুরুষ মানুষ তো সারা জীবন ধরে অনেক স্যাক্রিফাইসও করেন। বাবা হিসেবে, স্বামী হিসেবে, ছেলে হিসেবে বা সাধারণ মানুষ হিসেবেও। তা হলে তো প্রতিদিনই পুরুষ দিবস।
তা হলে এই দিনগুলো আলাদা করে রয়েছে কেন? তার কারণ একজন নারীর সামাজিক বা পারিবারিক জীবনে তার গুরুত্ব, একজন পুরুষের সামাজিক বা পারিবারিক জীবনে তার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আমরা নির্দিষ্ট একটা দিন বেছে নিই। আজকাল তো ক্যানসার ডে-ও রয়েছে। ডায়াবেটিক ডে, অডিট ডে… কোন ডে-টা নেই, তাই না? নির্দিষ্ট দিন শুধুমাত্র গুরুত্ব উপলব্ধি করানোর জন্য। সেক্ষেত্রে পুরুষ দিবসের গুরুত্বও অপরিসীম।
নারী দিবস নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে হইচই। ভ্যালেন্টাইন ডে-টা পেরিয়ে গেলেই সকলে প্রস্তুত হতে শুরু করেন। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও নারী দিবস গুরুত্ব পায়। গয়না থেকে শুরু করে অনেক কিছুতে ছাড় থাকে। শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবীতে। সব কিছুতেই একটা ব্যবসায়িক লেনদেন থাকে। আমার এটা নিয়ে আপত্তিও নেই। আমি জেহাদও ঘোষণা করছি না। আর একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে ইন্টারন্যাশনাল উওম্যানস্ ডে ইউএন দ্বারা স্বীকৃত। মেনস্ ডে কিন্তু স্বীকৃত নয়। যখনই কিছু ইউএন দ্বারা স্বীকৃত হয়ে যায়, তখন তার একটা অন্য মূল্য তৈরি হয়। তার পিছনে অনেক ফান্ডস ইনভেস্ট হয়।
২০১৭-এ আমি যখন কাজটা শুরু করেছিলাম, তখন আমি নিজেও আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস যে ১৯ নভেম্বর, সেটাই জানতাম না। আমাকে একদিন ডাকা হল একটি প্রতিথযশা টেলিভিশন চ্যানেলে। সেখানেই আমি জানতে পারলাম। সেই আমার এই কাজের শুরু। অনেক প্রচেষ্টায়, অনেক পরিশ্রমে আজ কিছুটা এগোতে পেরেছি। এই যে এই লেখাটা আপনারা পড়ছেন, আমার বক্তব্য বলতে পারছি, এটাও সেই পরিশ্রমেরই একটা অংশ। ২০১৭ সালে ছেলেরা আমাকে বলত, পুরুষ অধিকারের এই যে লড়াই, এ নিয়ে মিডিয়া কিছু লিখবে না। আমি তখন ওদের বলেছিলাম, আমরা যদি সত্যিই মিডিয়াকে বোঝাতে পারি, মিডিয়া লিখবে। মহিলাদের গালাগাল দেওয়া, পুরুষ অধিকারের উদ্দেশ্য নয়। মহিলারাও যতটুকু অধিকার অর্জন করেছেন, কষ্ট করেই পেয়েছেন। পুরুষকেও সেই লড়াই লড়তে হয়। সেই লড়াই যে পুরুষের নেই, এমনটা নয়।
পুরুষ দিবস এখনও সে ভাবে স্বীকৃত নয়। আর তা ছাড়া ছেলেরাই জানে না, ফলে মেয়েদের জানা তো দূরের কথা। এখনও তাই সে অর্থে পুরুষ দিবসে প্রিয় পুরুষকে কিছু উপহার দেব, এখনও সে ভাবে ব্যাপারটা শুরু হয়নি। যদি এটা নারী দিবসের মতো শুরু হয়। তাহলে ব্যবসায়িক ছাড়ের যে বিষয়টা নারী দিবসকেন্দ্রিক বলছিলাম, সেটা পুরুষ দিবসকে ঘিরেও শুরু হবে। সব মেয়ে তো আর ভুলভাল কেস দিচ্ছে এমন নয়। বহু মহিলা তাদের বাবা, স্বামী, বন্ধু, ছেলেকে এই বিশেষ দিনে উপহার দিতে চাইবেন। এই সপ্তাহে বেশ কিছু পার্লারে, ট্যাটু সেন্টারে, জামা কাপড়ের দোকানে ছেলেদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তা সংখ্যায় অনেক কম। গত বছর বেশ কিছু হাসপাতালে কথা বলেছিলাম। এই সপ্তাহে ছেলেদের বিভিন্ন টেস্টের উপর প্যাকেজে ডিসকাউন্ট দিয়েছিল। আমরা যারা পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করি, তারা আদৌ পৌঁছতে পারছি কি না, সেটাও একটা ব্যাপার। আমরা এত বছরে কিন্তু সে ভাবে পৌঁছতেও পারিনি। পৌঁছতে পারলে কিন্তু আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
এই লড়াইটা আমি পজ়িটিভিটি দিয়ে লড়তে চাইছি। আমি ছেলেদের নিয়ে কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়র, কেউ ব্যাঙ্কের অডিটর, তাদের নিয়ে গানের একটা কয়্যার তৈরি করেছি। অল বেঙ্গল মেনস্ ফোরাম মিউজ়িক কয়্যার। তারা সকলেই ভাল গান করেন। ১৯ নভেম্বর যেহেতু সলিল চৌধুরিরও জন্মদিন, সন্ধেবেলা উত্তম মঞ্চে অনুষ্ঠান রয়েছে।
মেয়েদের জন্য বাসে, মেট্রোতে আলাদা সিট নিয়ে আলোচনা হয়। আমি কিন্তু আজ বলে নয়, কোনও দিনই এগুলোর পক্ষপাতী ছিলাম না। রিজার্ভ সিট থাকুক প্রতিবন্ধীর জন্য, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য, শিশুদের জন্য। আমরা যে মেয়েরা, যারা বলি আমরা পুরুষের সমান, তাদের জন্য কেন আলাদা সিট থাকবে? মেয়েরা বলেন, পুরুষ ভিড়ের সুযোগে কনুইয়ের গুঁতো দেয়। সে জায়গাগুলো থেকে তো আমাদের বেরতে হবে। আমরা তো জানিই, আমাদের কিছু শারীরিক ব্যাপার রয়েছে, যেখানে পুরুষ মানুষের সঙ্গে লড়াই করেই আমাদের জিততে হবে। যদি আমরা সত্যিই জিততে না পারলাম, কথায়-কথায় কাঁদুনি গাইলাম, তা হলে আর কোথায় পুরুষের সমান হলাম? ওই প্রতিবন্ধকতাগুলো থেকে আমাদের বেরতে হবে। ভারতে মেল চাইল্ড অ্যাবিউস ৫৩ শতাংশ, পুরুষের ধর্ষণ ১৮ শতাংশ। কিন্তু পুরুষের ধর্ষণের কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট হয় না। তাই সেটা নিয়ে কথাও হয় না। মেয়েদের এটা বুঝতে হবে।
আমি খোরপোষ চাইব, আবার বলব সমান অধিকার! যে মানুষের সঙ্গে ঘর করছি না, বিছানা ভাগ করছি না, তার টাকাটা হাত পেতে নিতে পারি! তা হলে পুরুষ দাতা আর মহিলা গ্রহীতাই থেকে গেল। আমাদের আইনে রয়েছে স্বামী যদি কম রোজগেরে হন, স্ত্রী তাঁকে খোরপোষ দিতে পারেন। পুরুষ মানুষ তো ইগোর কারণে মামলা করে না। আর নারীরা যে দিন সত্যিই আদালতে দাঁড়িয়ে বলতে পারবেন, ‘ধর্মাবতার উনি তো আমার থেকে অর্থনৈতিক ভাবে কমজোরি, তাই দাম্পত্য বিচ্ছেদের মামলায় আমি ওঁকে খোরপোষ দিতে চাই।’ সে দিন আমরা সমান হব। সে দিন সব বদলাবে। মেয়েদের এই জায়গাতে পৌঁছতে হব। সে দিন আমরা সত্যি সত্যিই সম্মান অর্জন করব। আমি নারী বিদ্বেষী নই। কিন্তু বিয়ের সময় ভাতকাপড়ের অনুষ্ঠানে, দু’জনেই তো বলতে পারি, একে অপরের দায়িত্ব নিলাম…।
অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস