নিজেদের আওয়াজ তোলার, স্বাধীন ভাবে কথা বলায় জায়গা হিসেবে মঞ্চটাকে দেখি: সৌরভ পালোধী

সীমিত সংখ্যক দর্শকের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হল ভাড়া করা সত্যিই সমস্যার। তাই আমরা নিজেদের রিহার্সাল রুমেই এবার ‘ইচ্ছেমতো পার্বণ’-এর আয়োজন করেছি।

নিজেদের আওয়াজ তোলার, স্বাধীন ভাবে কথা বলায় জায়গা হিসেবে মঞ্চটাকে দেখি: সৌরভ পালোধী
৩১ ডিসেম্বর এবং ০১ জানুয়ারি রাতে পাঁচটি নাটকের শোয়ের আয়োজন করেছে ‘ইচ্ছেমতো’।
Follow Us:
| Updated on: Dec 29, 2020 | 9:09 PM

সোহিনী চক্রবর্তী: ‘ইচ্ছেমতো পার্বণ’। শহরের বুকে ফের হবে নাটকের মহোৎসব। যদিও এ বছর কোভিডের কারণে আড়ম্বর একটু কম। তবে সারারাতব্যাপী অনুষ্ঠান না-হলেও ৩১ ডিসেম্বর এবং ০১ জানুয়ারি রাতে পাঁচটি নাটকের শোয়ের আয়োজন করেছে ‘ইচ্ছেমতো’। মহামারির সময়েও চ্যালেঞ্জ নিয়েছে কলকাতার এই নাটকের দল। টিকিটের বিক্রিও হয়েছে ভালই। ইচ্ছেমতো পার্বণের দ্বিতীয় বছরে দর্শকদের জন্য কী চমক থাকছে, তা নিয়েই TV9 বাংলার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন দলের দুই সদস্য সৌরভ পালোধী এবং অপ্রতিম সরকার।

প্রশ্ন- সারারাতের অনুষ্ঠান দু’দিনে ভেঙে দেওয়ার কারণ কি শুধুই কোভিড?

অপ্রতিম- হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে করোনা তো একটা বড় কারণ বটেই। তবে নিউ নর্ম্য়ালে অনেক কিছুই তো খুলছে। কিন্তু সরকারি হলগুলো খোলেনি। সেক্ষেত্রে বেসরকারি হল ভাড়া করার জন্য যে টাকার প্রয়োজন, সেটা সত্যিই সমস্যার। করোনা পরিস্থিতিতেও হলের ভাড়া তো কমেনি।

সৌরভ- আসলে সরকারের তরফে তো বলা হয়েছে যে হল খুলবে। কিন্তু একটা সরকারি থিয়েটার খোলেনি। মজার ব্যাপার হল থিয়েটার হলগুলোর কাছে নাকি সরকারের তরফে কোনও বিজ্ঞপ্তিও আসেনি। এই অবস্থায় সীমিত সংখ্যক দর্শকের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হল ভাড়া করা সত্যিই সমস্যার। তাই আমরা নিজেদের রিহার্সাল রুমেই এবার ‘ইচ্ছেমতো পার্বণ’-এর আয়োজন করেছি।

প্রশ্ন- বড় মঞ্চ না-পাওয়ায় কোনও অসুবিধা হচ্ছে না?

অপ্রতিম- হ্যাঁ কিছুটা অসুবিধা তো আছেই। দর্শক আসন আরও সীমিত হয়ে গিয়েছে। অনেক মানুষকে দেখার সুযোগ দিতে পারছি না আমরা। তবে এর একটা ভাল দিকও আছে। এই যে গোটা ব্যাপারটাই একটা ছকে বাঁধা হয়ে গিয়েছিল, মানে বড় হল ভাড়া করা, একগাদা টাকা দেওয়া, এই বিষয়টা থেকে বেরিয়ে প্রথাগত বেড়াজাল ভেঙে অন্য কিছু করা সম্ভব হচ্ছে। যে কোনও জিনিসের বিকল্প থাকা সবসময় প্রয়োজন। আমাদেরও তো বুঝতে হবে যে, বড় হলের বাইরেও নাট্যোৎসব করা যায়। কম খরচেও বড় অনুষ্ঠান করা যায়। কোভিড পরিস্থিতি আমাদের সামনে এই বিকল্প জায়গা ব্যবহারের রাস্তাটা খুলে দিয়েছে।

প্রশ্ন- ‘ইচ্ছেমতো পার্বণ’-এর দ্বিতীয় বর্ষে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি চমক কোথায়?

অপ্রতিম- আহামরি কিছু নেই। আমরা সাদামাঠা ব্যাপারেই বিশ্বাসী। তবে হ্যাঁ, দল যে কাজটাই করে সেটা গুছিয়ে করে। এবারও তাই। নতুন নাটক থাকছে। সেই সঙ্গে আমাদের পুরনো প্রোডাকশনও থাকছে। আর আমাদের নাটকের সঙ্গে জড়িত আনুষঙ্গিক সব কাজই দলের সদস্যরাই করে। লাইটের ক্ষেত্রে বাইরের দাদারা সাহায্য করেন ঠিকই। তবে লাইট এবং সাউন্ড ডিজাইন, মঞ্চের উপস্থাপনা নিয়ে ভাবনাচিন্তা, অর্থাৎ জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবকিছুতেই যুক্ত থাকে দলের সদস্যরাই।

সৌরভ- ইচ্ছেমতো দলটায় তো একজন মুখ নয়। সবাই দলের মুখ। আমায় হয়তো চারটে লোক বেশি চেনে, এটুকুই। জড়িয়ে আছি সবাই। আমাদের দল কমরেডশিপে বিশ্বাস করে। এবছর নাটকে প্রচুর নতুন সদস্য রয়েছেন। কেউ পরিচালনায়, কেউ পাঠে, কেউ নাটক লিখেছে। এবছর সবটাই ‘ইন-হাউস’ প্রোডাকশন। এটা আমাদের কাছে বিশেষ পাওনা। হইহই করে দলের সবাই মিলে কাজটা করছি। পাঁচটা ছোট নাটকের সবটা জুড়ে রয়েছে ইচ্ছেমতোর সব সদস্যরা। অর্থ থাকলে তো বাইরের বড় স্টার নিয়ে হল ভরানো যায়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে দলের সদস্যদের যুক্ত থাকার ব্যাপারটাই পুঁজি।

প্রশ্ন- রিহার্সালে রুমে নাটকের আয়োজন? সমস্যা হচ্ছে না?

সৌরভ- অসুবিধে বলব না। তবে কলকাতায় যা চলছে সেটা সার্কাস। সরকারের নির্দেশ আছে। এ দিকে, একটাও সরকারি হল খোলেনি। ভাড়া কমার কথা ছেড়েই দিলাম। এভাবে চললে খুব মুশকিল। আমাদের মতো যেসব দল সেই অর্থে তথাকথিত সরকারি অনুদানের ছাতার তলায় পড়ি না, তাদের পক্ষে এত জন সদস্য নিয়ে টিকে থাকার লড়াইটা বেশ চাপের। আমাদের দলের কোর টিমটা জনা পঁচিশের। এ ছাড়াও অনেকে ওয়ার্কশপ করে। একটা ইয়ং ব্রিগেড। বেশরভাগই কলেজে পড়ে বা সাধারণ চাকরি করে। কিংবা কেউ আমার মতো টেলিভিশনের সঙ্গে একটু যুক্ত। আমরা ভালবেসে থিয়েটার করি। নিজেদের আওয়াজ তোলার, স্বাধীন ভাবে কথা বলায় জায়গা হিসেবে মঞ্চটাকে দেখি। সেখানে দিনের পর দিন এরকম চললে, হলগুলোকে মোটা টাকা দিয়ে ভাড়া নিতে হলে ব্যাপারটা খুবই চাপের হয়ে যায়।

প্রশ্ন- প্রথম বছর ব্যাপক সাফল্যের পর দ্বিতীয় বছরের আয়োজন, দর্শকদের কী বার্তা দেবে ‘ইচ্ছেমতো’?

সৌরভ- আমি ছাত্র অবস্থা থেকে ‘নাট্য-স্বপ্ন-কল্প’ দেখে বড় হয়েছি। বিভাস চক্রবর্তীর ওই আয়োজনটাই ছিল আমার অল্প বয়সের ৩১ ডিসেম্বর এবং পয়লা জানুয়ারি উদযাপন। প্রায় ২০ বছর ধরে চলে আসা সেই অনুষ্ঠান ধীরে-ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। সেই নস্ট্যালজিয়া ফিরিয়ে আনার জন্যই ‘ইচ্ছেমতো পার্বণ’-এর আয়োজন। আসলে কোথাও তো আমাদের নিজের কথাগুলো বলতে হবে। তাই বছরের শেষ আর শুরুতে যদি দু’টো লোককেও আমরা ভাল কিছু শেখাতে পারি, ভাল বার্তা দিতে পারি, সমাজের কল্যাণ হয় তাহলে আমি সেটাই চাইব। বছরের শেষ আর শুরুটা সকলের ভাল হোক, শুভ চিন্তাভাবনা থাকুক সেই জন্যই এই আয়োজন।