গানের জগতে পায়ের তলার জমি শক্ত করতে পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে। গানের গলা তাঁর জন্মগত। কিন্তু তালিম, শিক্ষা, অপেক্ষার পথ পেরিয়ে নিজের পরিচিতি, সাফল্য এসেছে। তিনি সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। শেখার নিরন্তর প্রয়াস চলতেই থাকে। একই সঙ্গে পরের প্রজন্মকেই তালিম দেওয়ার চেষ্টা করেন। রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চে বিচারকের আসনে বসেও ভাল-মন্দ ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। শিক্ষক হিসেবে কেমন সেই অভিজ্ঞতা? শিক্ষক দিবসে অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন লোপামুদ্রা।
আমার শিক্ষা দেওয়া মানে গান শেখানো। খুব বেশিদিন শেখাচ্ছি এমন নয়। আসলে গান শেখানোর থেকেও আমি অন্য একটা বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিই। আমার কাছে গান শিখতে এসে বাচ্চাগুলোর যদি মনুষ্যত্ব জন্মায়, তা হলে আমি অনেক বেশি খুশি হই।
আসলে গানটা অত্যন্ত ভাল থাকার, ভালবাসার জায়গা। শুধুমাত্র নাম করব, পেশা করব, তার জন্য গান বাজনা নয়। গান মূলত ভাল থাকার সম্পর্ক।
আমি আমার শিক্ষকদের কাছ থেকে এনকারেজমেন্ট পেয়েছি। সেই জায়গাটাই ওদের ক্ষেত্রেও রাখার চেষ্টা করি। রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চে যখন বিচারকের আসনে বসি, সকলকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করি। যে যার মতো করে, নিজের ঢঙে নিজের আইডেন্টিটি নিয়ে যাতে তৈরি হয় গান বাজনার জগতে, সেটাই চেষ্টা করি। ওভারঅল ওদের গ্রুমিংটা যেন ভাল হয়, শিক্ষক হিসেবে সেটা দেখা আমার দায়িত্ব মনে হয়।
আমি মনে করি, গান নিয়ে মানুষ জন্মায়। পরে হয়তো চর্চার মাধ্যমে সেটা গড়াপেটা করে নেওয়া যায়। কিন্তু এই ক্ষমতাটা মানুষের জন্মগত। যে গাইবে, সেটা নিয়েই সে জন্মেছে। এটা ট্যালেন্ট। পড়াশোনা করতে-করতে হয়। সেখানেও একটা বুদ্ধির জায়গা থাকে, ঠিকই। কিন্তু পারফর্মিং আর্টস, বিশেষত গান আমার মনে হয় ঈশ্বরের ডিরেক্ট আশীর্বাদ।
অনেকে এমন আছেন, এমন ছাত্র-ছাত্রী পাই, হয়তো বুঝতে পারছি, গানটা এর হবে না। কিন্তু সে নিজে বুঝতে পারে না। কারণ এখন বিষয়টা সহজলভ্য। যেমন গানই গাই না কেন, পয়সা নিয়ে মিউজিক ভিডিয়ো তৈরি করতে পারে সকলেই। কোয়ালিটি থাকলে তবেই জায়গা পাওয়া যায়, এখন এইটা একজনকে বোঝানো কঠিন। কেউ যদি নিজে ভাবে ভাল গান করি, সে ভাল গাইতে না পারলেও তখন তাকে চেষ্টা করেও সত্যিটা বোঝানো যাবে না। কেউ ভাল গান করলেও কোন জায়গাগুলো দিয়ে, কোন শিক্ষাটা পেরিয়ে কোন-কোন রাস্তায় যেতে হবে, সেটা বোঝানো মুশকিল। আসলে লোভ এগিয়ে যাওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না (এই বাক্যগঠনটা ঠিক হবে)। প্রকৃত শিল্পী হওয়ার আগে প্রলোভন পেয়ে বসলে বড় হওয়া মুশকিল। সেই প্রবণতা ইদানিং অনেক বেশি লক্ষ্য করি। সব সময় বলি না। কারণ সব সময় সকলকে সব কথা বলা যায় না। কিন্তু এটা আমার খারাপ লাগে।
গ্রাফিক্স: অভীক দেবনাথ
আরও পড়ুন, আমাকে ইন্ডাস্ট্রিতেও স্নব ভাবে সবাই, স্টুডেন্টরাও হয়তো প্রথমে তাই-ই ভাবত: সোমলতা আচার্য চৌধুরি
আরও পড়ুন, আমার আর কালিকাপ্রসাদের মধ্যে শিক্ষার আদান-প্রদান চলতেই থাকত…: ঋতচেতা গোস্বামী