পঙ্কজ ত্রিপাঠী। বিহারী এই মানুষটি এখন সারা দেশের গর্ব। অভিনয়ে মাত করেছেন অনেক আগেই। বিগত কয়েক বছরে পালটেছে ভারতীয় সিনেমার ভাষা। এখন বিষয়বস্তু ভিত্তিক সিনেমাই মানুষকে টানছে বেশি। সেই ধারার ছবির অন্যতম অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী। মেলবোর্নের ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে তাই বিশেষ সম্মান দেওয়া হবে পঙ্কজকে। অতীতে এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ফ্রিডা পিন্টো, ফাওয়াদ খানের মতো তারকারা।
বরাবরই সিনেমায় বৈচিত্র খুঁজেছে মেলবোর্নের এই উৎসব। ইদানিং ভারতীয় সিনেমার পালটে যাওয়া ধারাতেও এসেছে বৈচিত্রের ছোঁয়া। সিনেমা চিন্তার নতুন ঢেউ থেকে উঠে এসেছে পঙ্কজের মতো এক মুক্তো। নেতিবাচক, ইতিবাচক, কমেডি, গম্ভীর – প্রত্যেক রোলেই পঙ্কজ রেখেছেন তাঁর অভিনয়ের ছাপ। হয়ে উঠেছেন রান্নাঘরের হলুদের মতো। ফলে এখন তাঁকে বাদ দিয়ে ছবি করতে চাইছেন না বহু ছবি নির্মাতা। এই অনন্য কৃতিত্বের জন্যই মেলবোর্নে পুরস্কৃত হচ্ছেন পঙ্কজ।
নিজের অভিনয় গুণে সব চরিত্রকেই জীবন্ত করে তোলেন পঙ্কজ। সমালোচকদের নিরিখে তিনি ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’ – তাঁকে কোনও একটি মাধ্যমের নিরিখে বিচার করা যায় না। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হোক কিংবা বড় পর্দা – সব ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শিতায় পারফর্ম করেন মানুষটি। ফলত, ‘ডাইভার্সিটি ইন সিনেমা অ্যাওয়ার্ড’-এর যোগ্য প্রাপক পঙ্কজ।
অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার ব্যাপারে পঙ্কজ বলেছেন, “জীবনের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করি প্রত্যেক সিনে। আমার ভাগ্য ভাল যে সেই পরিশ্রমের মূল্য পাই প্রত্যেকবার। এই পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করছি। এতবড় মাপের চলচ্চিত্র উৎসবে এই পুরস্কার পাওয়া সত্যি গর্বের ব্যাপার।” পুরস্কারটি পঙ্কজের হাতে তুলে দেবেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। তাঁরই ছবি ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’-এ অভিনয় করেছিলেন পঙ্কজ।
নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর আজ এই জায়গায় এসেছেন পঙ্কজ। ‘স্ত্রী’, ‘গুঞ্জন সাক্সেনা’, ‘লুডো’র মতো ছবিতে কাজ করেছেন। সম্প্রতি মুক্তি পেল তাঁর ও কৃতি শ্যাননের ‘মিমি’ ছবিটি। ‘ও মাই গড টু’ ছবিতে রয়েছেন পঙ্কজ। পেয়েছেন জাতীয় পুরষ্কারও।
বিহারের বেলসন্দ গ্রামে জন্ম পঙ্কজ ত্রিপাঠীর। ছোটবেলায় গ্রামের নাটকে মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পঙ্কজ। গ্রামে চাষবাস করেছেন এই প্রতিভাবান অভিনেতা। বিদ্যুৎ ছিল না। এমনকী, ভাল স্কুলও ছিল না। প্রকৃতির কোলে, খোলা আকাশে লেখাপড়া করেছেন। কলেজে পড়ার সময় রাজনীতি করেছিলেন। ১৯৯৩ জেল খেটেছেন ৭দিনের জন্য। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য ছিলেন। লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে গলা তুলেছিলেন সেসময়।
পঙ্কজের বাবা চেয়েছিলেন তিনি ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করুন। পাটনায় পাঠিয়েছিলেন উচ্চ শিক্ষার জন্য। ভাগ্যিস পাঠিয়েছিলেন! সেখানে গিয়েই কিনা নিজের অভিনেতা সত্ত্বাকে চিনতে পারলেন। হোটেল ম্যানেজমেন্টের কোর্স করেছেন পঙ্কজ। একটি হোটেলে দু’বছরের জন্য রান্নাও করেছেন তিনি। কিন্তু তখনও অভিনয়ের ইচ্ছে মন থেকে মুছে যায়নি। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় পড়ার সময় অভিনয়ের জন্য সময় দিতে শুরু করেন। একটা সময় ভালো করে হিন্দি বলতে পারতেন না। তিনি বিহারের ছেলে। ভোজপুরিই তাঁর মার্তৃভাষা। পাটনায় উচ্চ শিক্ষা করতে এসে হিন্দি বলা রপ্ত করেন। আর আজ সারা বিশ্ব তাঁর ফ্যান!
আরও পড়ুন: পাহাড়ের সঙ্গে প্রথম আলাপ; ‘হ্যাপিনেস’ খুঁজে পেল ছোট্ট শাহিদা