সাদা পাঞ্জাবি। মাথায় গামছা বাঁধা। চুল, দাড়ি দেখলেই বোঝা যায় মেকআপে রয়েছেন তিনি। অর্থাৎ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। পাশে কালো পাঞ্জাবি। বড় চুল, দাড়ি। গলায় রকমারি মালা পরে ফকিরের বেশে যিনি রয়েছেন, তাঁকে কি চেনা লাগছে?
প্রসেনজিতের পাশে রয়েছেন প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। হাসিমুখে ছবি তুলেছেন দুই শিল্পী। সেই ফ্রেম এখন প্রসেনজিতের সঙ্গী। কারণ কালিকা আর নেই। আজ কালিপ্রসাদের জন্মদিন। বন্ধুর জন্মদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি শেয়ার করে স্মৃতিচারণা করেছেন তিনি। প্রসেনজিৎ লিখেছেন, ‘শিল্পী দূরে চলে গেলেও তার শিল্প মনে থেকে যায়… স্মরণে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।’
১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ জন্ম কালিকার। ৭ মার্চ ২০১৭-এ এক দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন তিনি। কিন্তু আজও অনুরাগীদের মননে কালিকা। তাঁর রেখে যাওয়া কাজের মধ্যে বেঁচে থাকবেন তিনি। কখনও স্ত্রী ঋতচেতা গোস্বামী আলাপচারিতায় উঠে আসে বন্ধু প্রসাদের কথা। কখনও বা তাঁর দল দোহার-এর আলাপে শোনা যায় পথপ্রদর্শক কালিকার গল্প।
২২ বছর আগের ৭ অগস্ট। কলেজ স্ট্রিটে স্টুডেন্টস হল। গোলদিঘির পাশেই। প্রথম অনুষ্ঠান করলেন একঝাঁক শিল্পী। এখন হেরিটেজ হল হিসেবে বন্ধ রাখা হয়েছে সেই হল। ১৫০-২০০ জন দর্শকের সামনে অনুষ্ঠান করার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিল্পী অনন্ত ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। সে বছরই তিনি প্রয়াত হন। সম্পর্কে তিনি ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের কাকা। সেই শুরু। সেই পথ চলা আজও একই রকম গৌরবময়। সেই পথ চলার নাম ‘দোহার’। সদ্য জন্মদিন পেরিয়ে গেল এই দল।
প্রথম দিনের স্মৃতিচারণায় দোহারের অন্যতম সদস্য রাজীব দাস TV9 বাংলাকে বলেছিলেন, “সে সময় আমি এবং কালিকাদা দুজনেই আসাম থেকে কলকাতায় পড়াশোনা করতে এসেছিলাম। কলকাতায় এসে আমার কালিকাদার সঙ্গে পরিচয়। কালিকাদার ইচ্ছে ছিল কাকার যে বিপুল লোক গানের সম্ভার তা কলকাতার মানুষকে শোনাবেন। ওর বিশ্বাস ছিল, কলকাতার দর্শক সেই গানের সমাদর করবেন। কারণ সারা পৃথিবীর বাংলা গানের মক্কা কলকাতা। সে জন্য শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য অনুষ্ঠান করেছিলাম। দল তৈরি করার কোনও ভাবনা সে সময় ছিল না। তখন কালিকাদা মূলত তবলা বাজাত। আমি গান গাইতাম। সেই বন্ডিং তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভীক মজুমদার আমাদের নাম দেন ‘দোহার’। আমাদেরও নামটা পছন্দ হয়ে যায়। সকলের ভাল লাগল সে অনুষ্ঠান। আরও কাজ করতে বললেন। আমরাও চেষ্টা শুরু করলাম।”
২০১৭-এ কালিকাপ্রসাদের প্রয়াণ ‘দোহার’কে যেন স্তব্ধ করে দিয়েছিল। অসংখ্য অনুরাগীর পাশাপাশি ‘দোহার’ পরিবারও ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু কালিকাপ্রসাদকে সামনে রেখেই ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে ‘দোহার’। রাজীব বলেছিলেন, “২০১৭-র সেই দিন থেকেই কালিকাদাকে সামনে রেখেই আজ পর্যন্ত কাজ করছি। যতদিন ‘দোহার’ থাকবে, কালিকাপ্রসাদও ‘দোহার’ হিসেবে আর সবার মধ্যে থাকবে।”
আরও পড়ুন, ভদ্রমহিলার কোলের শিশুটি এখন নায়িকা, চিনতে পারছেন?