ওঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা হল না কখনওই… আক্ষেপ থেকে যাবে!

TV9 Bangla Digital | Edited By: Sneha Sengupta

Aug 30, 2021 | 2:27 PM

Buddhadeb Guha Demise: শ্রীজাতর লেখা পড়েছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। তাঁকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছিলেন। তাঁকে দিতে চেয়েছিলেন একটি কলমও।

ওঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা হল না কখনওই... আক্ষেপ থেকে যাবে!
বুদ্ধদেব গুহর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ শ্রীজাত

Follow Us

মধ্যরাত থেকেই এই মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদে আচ্ছন্ন হয়েছে বাংলার সাহিত্য জগৎ। প্রয়াত হয়েছেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্য জগতে। পাঠকদের মনেও শোকের ছায়া ঘনিয়েছে। বুদ্ধদেবের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন কবি শ্রীজাত। তাঁর মন ভাল নেই। লেখকের চলে যাওয়ায় TV9 বাংলার কাছে দুঃখ ও আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন শ্রীজাত। 

শ্রীজাত বলেছেন, “বিশেষ কী বলব আমি জানি না। তাঁকে বরাবর দূর থেকেই দেখেছি। লেখক বুদ্ধদেব গুহকেই দেখেছি বরাবর। তিনি আমাদের ছোটবেলা ভরিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর মধ্যে দিয়েই আমাদের জঙ্গলকে চেনা, সাহসকে চেনা, বেপরোয়াপনাকে চেনা। ফলে অনেক কিছুর প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। মানুষটিও তো বর্ণময়। তাঁর জীবন কখনও থমকে থাকেনি। সেই হিসেবে একটু দূর থেকেই পাঠকের মতো তাঁকে দেখেছি। গত কয়েক বছরে কোনও সভায় এক-দু’বার মঞ্চের পাশে দেখা হয়েছে আমাদের। তখন গিয়ে প্রণাম করেছি। খুবই স্নেহভরে কথা বলেছেন। এটাই আমার প্রাপ্তি। তবে আমার মনে হয় যে লেখকদের কিংবা কবিদের একটা সুবিধে আছে। বহু মানুষের ভালবাসা মেলে তাঁদের। তিনিও পেয়েছেন। তাঁর লেখা পড়েছেন, পড়েন এবং পড়বেন। ফলে সম্পূর্ণ মৃত্যু হওয়ার কোনও উপায় নেই। শরীরের সফর হয়তো থেমে গেল। কিন্তু সাহিত্যের সফর জারি থাকবে।”

শ্রীজাতর লেখা পড়েছিলেন বুদ্ধদেব। তাঁকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছিলেন। শ্রীজাতর লেখা পড়ে কী বলেছিলেন বুদ্ধদেব? শ্রীজাত বলেন, “এই দুঃসাহসী ভাবনার কথা আমি ভাবি না কখনও। ভাবলে অসম্ভব সঙ্কোচ হয়, যে বুদ্ধদেব গুহ আমার লেখা পড়বেন। কারণ, এঁদের লেখা পড়েই আমরা বড় হয়েছি। ফলে বড়রা যখন কেউ বলেন, তখন খুব সঙ্কোচ হয়। কিন্তু হ্যাঁ, আমাদের যখন সাক্ষাৎ হয়েছিল বুদ্ধদেববাবু বলেছেন, ‘তোমার লেখা তো পড়ছি, আমার বাড়িতে এসো, তোমাকে একটা ভাল কলম দেব’।”

সেই কলম কী পেয়েছিলেন শ্রীজাত?

উত্তরে কবি বলেন, “এই সব মানুষের ক্ষেত্রে আমার যা হয়, এত দ্বিধা, সংকোচ, সম্ভ্রম কাজ করে, যে বাড়ি গিয়ে ওঠা হয়নি। হলে হয়তো কলমটা উপহার পেতাম। উনি যে আমাকে এই কথাটা বলেছিলেন, এটাই আমার কাছে অনেক দামি।”

বাড়ি যেতে পারেননি বলে খুবই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন শ্রীজাত। এই করোনাকালে সকলের সঙ্গে সকলের দেখা সাক্ষাৎ প্রায় নেই বললেই চলে। তার মধ্যে একের পর এক মৃত্যু সংবাদ। বলেন, “এই ভয়তে অনেকের কাছেই যাওয়া হয়নি। না হলে অনেকের কাছেই যেতাম। দেখা করে আসতাম।”

জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন শ্রীজাত। পরিচালকের আসনে বসেছেন তিনি। তৈরি করছেন তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি ‘মানবজমিন’। ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করছেন তিনি। তাড়াতাড়ি শুরু করবেন ছবির শুটিং।

১৯৩৬ সালের ২৯ জুন কলকাতায় জন্ম নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। পেশাগত জীবন শুরু চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে। পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। আকাশবাণী কলকাতার অডিশন বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘জঙ্গলমহল’। একের পর এক কালজয়ী উপন্যাসে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। তাঁর বিখ্যাত ঋজুদা সিরিজের বই ‘ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। এ ছাড়াও ‘মাধুকরী’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘বাবলি’, ‘কুমুদিনী’– সহ তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি পাঠকমনে দাগ কেটে গিয়েছে। আজ চলে গেলেন তিনি। রয়ে গেল তাঁর কাজ।

আরও পড়ুনবুদ্ধদেব গুহর প্রথম বই প্রকাশ করেছি: সুধাংশুশেখর দে

আরও পড়ুনবুদ্ধদেব গুহর ছবিগুলো স্পর্শকাতর চিত্রকলা: যোগেন চৌধুরী

Next Article