Bagtui Massacre: আমরা নিজেরা ঘরের মধ্যে থেকে ভাবছি ওইখানে হচ্ছে, আমার কী! তা কিন্তু নয়: বগটুইকাণ্ড প্রসঙ্গে অর্পিতা ঘোষ
Arpita Ghosh: যারাই এই নক্কারজনক কাজ করেছে, তাদের এমন শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে কেউ আবার এই ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়, বরং ভয় পায়।
অর্পিতা ঘোষ
প্রথমেই বলি, যে ঘটনাটা ঘটেছে, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সভ্য সমাজে এরকম ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক জনসাধারণ চাইবে অবিলম্বে এর কিনারা হোক। যারাই এই নক্কারজনক কাজ করেছে, তাদের এমন শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে কেউ আবার এই ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়, বরং ভয় পায়।
সকলে এই ধরনের ঘটনার ধারাবাহিকতার কথা বলছেন। ২০০১ সালে ঘটেছে। তারপরেও ঘটেছে। বার বার ঘটেছে। কেবলমাত্র একটা ঘরে বন্ধ করে পুড়িয়ে ফেলা তো নয়! এই পশ্চিমবঙ্গে বিজন সেতুর উপরে আনন্দমার্গীদের পুড়িয়ে মারতে দেখেছি। এরকম ঘটনাও কিন্তু অজস্র আছে। আগে-পরে সব সময়ই ঘটেছে। আপনারা যদি এই ধারাবাহিকতাকে পশ্চিমবঙ্গের চরিত্র বলতে চান, আমি তাহলে বলতে পারব না। কিন্তু আমার এটা মনে হয়েছে, যে কেন পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে, সেটা যদি কোথাও আমরা চিহ্নিত করতে না পারি…
সংস্কৃতির রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। বাঙালিদের বলা হয় মেধা-মননের অধিকারী। সেই বাঙালিদের মধ্যে এই হিংসার বীজ বপন হল কীভাবে? কিংবা এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে… এটা কোথাও আমাদের প্রতিটি নাগরিক হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গ জাতি হিসেবে ভাবার সময় এসেছে। কেন আমাদের রাজ্যে এরকম ঘটনা বার বার রিপিট হচ্ছে। এটা কেবল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখতে গেলে হয়তো ভুল হয়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে একটি জাতির অবনমন বলেও আমার মনে হয়েছে।
এই অবনমনের জায়গাটাও আমাদের চিহ্নিত করা দরকার। টিভিতে ঘটনাটাগুলো দেখতে-দেখতে শিউরে উঠছি। বহু পুরনো স্মৃতি ভেসে আসছে। কেবল তো এরকম ঘটনা নয়, পুড়িয়ে মারাই তো কেবল নয়, এরকম আরও অনেক ঘটনা দেখেছি। নন্দীগ্রাম ঘিরে ফেলে কীভাবে মানুষকে কুপিয়ে মারা হয়েছে, সেটাও দেখেছি আমরা। আমরা সিঙ্গুরে তাপসী মালিককে পুড়িয়ে মারতে দেখেছি। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে বার বার কেন দেখতে হচ্ছে? আমার মনে হয়, এটা নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করার সময় এসেছে।
জাতিগতভাবে কোথাও একটা ভাবনার সময় এসেছে। আমরা যাঁরা নিজেদের পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক হিসেবে মনে করি, তাঁদের বুঝতে হবে কোনও একটা.. সামগ্রিক চেহারা নয়.. কোনও একটা সেক্টর থেকে এই ধরনের কাজ হচ্ছে… তা হলে সেটাই বা কেন হচ্ছে, চিহ্নিত করা কিন্তু এত সহজ নয়। এক-এক রকম কারণে হতে পারে। কারণ যাই-ই হোক না কেন, এতখানি হিংস্রতা মানুষের মধ্যে কোথা থেকে আসছে, সেটা চিহ্নিত করা আমার মনে হয় খুব দরকার। সেটা রাজনৈতিক কারণে ঘটে থাকলে রাজনীতিবিদরা শুধু করবেন না। সমাজের উপর এর প্রভাব পড়ে। সেটা আমাদের বুঝতে হবে। কেবলমাত্র রাজনীতিবিদদের দিকে ঠেলে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত থাকার চেষ্টা করছি। এভাবে কিন্তু হয় না। আমরা নিজেরা ঘরের মধ্যে থেকে ভাবছি ওইখানে হচ্ছে, আমার কী! তা কিন্তু নয়। সেই আঁচ সমাজের সর্বত্র এসে লাগছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম এসব দেখে কী শিখবে? আমাদের কোথাও একটা দায়িত্ব থেকে যায়।
সমাজের গভীরে কোথাও একটা বীজ বপন হয়ে গিয়েছে। যে বীজ এই সমাজকে নষ্ট করার কাজে রয়েছে!
আরও পড়ুন: Bagtui Massacre: কথা বললেই ফ্লোরে বকা দেবে, বললেন জুন মালিয়া