EXCLUSIVE Seema Biswas: ওঁকে নগ্ন অবস্থায় দেখে খুব কাঁদতাম, মনে হত ক্রেডিট সব আমার, আর লাঞ্ছনা মেয়েটির: সীমা বিশ্বাস

Seema Biswas: ২৮ বছর আগে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে ছিল সম্পূর্ণ নগ্নতার দৃশ্য। তাই নিয়ে সীমা জড়িয়েছিলেন বিতর্কে। তাঁর কলকাতা সফরের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ফিরে এসেছিলেন ২৮ বছর আগেকার সীমাও।

EXCLUSIVE Seema Biswas: ওঁকে নগ্ন অবস্থায় দেখে খুব কাঁদতাম, মনে হত ক্রেডিট সব আমার, আর লাঞ্ছনা মেয়েটির: সীমা বিশ্বাস
সীমা বিশ্বাস।
Follow Us:
| Updated on: Jun 16, 2022 | 11:05 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

কখনও ‘খামোশি’। কখনও তিনি ডাকাত রানি ‘ফুলন দেবী’। আদতে তিনি জলের মতোই— ‘ওয়াটার’। যে পাত্রেই রাখা হোক না কেন, তিনি সেই পাত্রেরই আকার ধারণ করেন। অভিনেতারা তো সে রকমই হন। অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাসও তাই। কিছুদিন আগে কলকাতায় একটি ছবির শুটিং করতে এসেছিলেন সীমা। ছবির নাম ‘মন পতঙ্গ’। শুটিংয়ের শেষে TV9 বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে দেখলে সর্বপ্রথম মনে আসে ‘ব্যান্ডিট কুইন’ ছবিটির কথা। ডাকাত রানি ফুলনদেবীর বায়োপিকে তিনিই ছিলেন ফুলন। ২৮ বছর আগে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে ছিল সম্পূর্ণ নগ্নতার দৃশ্য। তাই নিয়ে সীমা জড়িয়েছিলেন বিতর্কে। তাঁর কলকাতা সফরের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ফিরে এসেছিলেন ২৮ বছর আগেকার সীমাও।

এতদিন পর কলকাতায় এসে কাজ করে কেমন লাগল?

আমি তো কলকাতায় কাজের সুযোগ খুঁজি। কিন্তু কলকাতার লোকে আমাকে ডাকে না (হাসি)। যখন নাটক নিয়েও কলকাতায় আসি, ভীষণ ভাল লাগে। এখানকার দর্শক দারুণ। অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন থেকে যখন ফোন করলেন অঞ্জনদা, দারুণ লাগল। শর্মিষ্ঠা ও রাজদীপ চিত্রনাট্য পাঠালেন, সেটাও ভাল লাগল। রাজি হয়ে যাই। আমি কিন্তু ছবির প্রোটাগনিস্ট নই। এমনও নয় যে আমার নামের জন্য ওঁরা আমাকে কাস্ট করেছেন। কম সময়ের মধ্যেই বিশাল বড় রেঞ্জ এই চরিত্রের। কাজ করেও ভাল লাগল। এই শহরটার এখনও কিছু নিজস্বতা আছে। পুরনো শহরের স্বাদ আছে। কাজ করে মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। কখন যে আমি ওদের পরিবারের সদস্য হয়ে গেলাম, বুঝতেই পারলাম না।

কিন্তু আপনি তো এই মাত্র বললেন কলকাতায় কেউ ডাকে না, এটা নিয়ে নিশ্চয়ই খুব আক্ষেপ আছে?

আমি মজা করেছি। আমার নাটক ‘স্ত্রীর পত্র’র অধিকাংশ শো-ই কলকাতায় করেছি। মিনার্ভার মতো অডিটোরিয়ামে শো করেছি। তবে এখানকার চলচ্চিত্র নির্মাতারা হয়তো জানেন আমি কী ধরনের ছবিতে কাজ করি। তাই তুলনায় আমাকে তাঁরা কম ডাকেন।

পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ রেডিয়োতে ‘স্ত্রীর পত্র’-এ নিজে মৃণালের চরিত্রে অভিনয় করতেন। আপনি শুনেছেন নিশ্চয়ই?

না, আমি এখনও শুনিনি। পেন্ডিং আছে। নিশ্চয়ই শুনব। একটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ঋতুদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি অন্য একটি টেবিলে ব্রেকফাস্ট করছিলাম। উনি আমার কাছে উঠে এসেছিলেন। বলেছেন, “আমি শুনেছি তুই নাকি ‘স্ত্রীর পত্র’ করিস, আর খুব ভাল করিস? তুই জানিস, আমিও রেডিয়োতে ‘স্ত্রীর পত্র’ করি। এবার শো করলে তুই কিন্তু আমাকে বলবি।” আমি সেদিন ওঁকে বলেছিলাম, “আমি আপনার জন্য কলকাতায় আর একটা শো করব।” এই ঘটনার পর জানতে পারি তিনি আর নেই। আমার খুব খারাপ লাগে। মনে-মনে ভাবি, আমি যখন উপরে চলে যাব, ঋতুদাকে পারফর্ম করে দেখাব আমার ‘স্ত্রীর পত্র’। ওঁর চলে যাওয়া আমাদের ভারতীয় সিনেমার বড় ক্ষতি।

এখনকার বাংলা ছবি দেখেন? কেমন লাগে আপনার?

আমি দেখেছি। আমার বোনও খুব দেখে। আমার খালি মনে হয় বড় স্ক্রিনে ছবি দেখার মজাই আলাদা। টিভিতে ছবি দেখতে আমি পছন্দ করি না। মোবাইল, ল্যাপটপেও না। সিনেমা দেখি খুঁটিয়ে, সঙ্গে ৪-৫জন মানুষ থাকলে আরও ভাল লাগে। অনেক ছবি দেখাও বাকি আছে… ‘ব্যান্ডিট কুইন’ করছিলাম যখন, শেখর কাপুর আমাকে বলেছিলেন, “সীমা, ভুলো না সিনেমা কিন্তু বাস্তবের চেয়ে ২০ গুণ বেশি বড়। তাই মেপে অভিনয় করবে।” আমি লাজুক মানুষ। সেদিন ওঁকে বলিনি যে, সব মাধ্যমেই আমার অভিনয় বাস্তবের কাছাকাছিই থাকে।

‘ব্যান্ডিট কুইন’-এ আপনার নগ্ন দৃশ্য নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। বলা ভাল, বিতর্ক হয়েছিল। ফুলনদেবীর সেই বায়োপিক ছিল সময়ের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। তখন তো সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। খারাপ লাগা ব্যক্ত করার প্ল্যাটফর্মও ছিল না। সমালোচনার সঙ্গে লড়েছিলেন কীভাবে?

এই ছবির চিত্রনাট্য পড়েছিলাম যখন, তখন আমি দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার রেপার্টরি কোম্পানিতে লিডিং অভিনেত্রী ছিলাম। শেখর (ছবির পরিচালক শেখর কাপুর) বলেছিলেন, আমিই তাঁর ছবির ‘ব্যান্ডিট কুইন’। সেই কথা শুনেই চিত্রনাট্য পড়তে চেয়েছিলাম। চিত্রনাট্য পড়ে আমি তিন রাত ঘুমোতে পারিনি। ওই সিনটার জন্য নয় কিন্তু। ঘুমোতে পারিনি চরিত্রটার একাধিক স্তরের জন্য। এনএসডির নাটক নিয়েই আনন্দে ছিলাম। ‘ব্যান্ডিট কুইন’-এর স্ক্রিপ্ট পড়ে প্রশ্ন জেগেছিল মনে—সকলে সিনেমা নিয়ে এত উঁচু-উঁচু কথা বলে। কিন্তু এই ছবিটাকে কেন্দ্র করে সিনেমায় আসব, ভাবিনি। মনে হয়েছিল চরিত্রটা বাস্তবের অনেকটাই কাছে। কীভাবে করব ভাবছিলাম। অনেক স্তর আছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিনও আছে। এনএসডির শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সকলে বললেন, “পাগল হয়েছিস, এটা নিয়ে আবার ভাবনাচিন্তা করছিস? এটা ইতিহাস তৈরি করবে… ভাবিসই না। কাজটা করে ফেল।” আমার অনেক পুরুষ টিচারও বলেছিলেন তাঁরা সম্পূর্ণ নগ্ন দৃশ্যে পারফর্ম করেছিলেন। আমার এক ম্যাডামের (পড়ুন এনএসডির শিক্ষক) বাড়িতে শেখর কাপুর এসেছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই নগ্ন সিন কি সত্যি দরকার আছে? তিনি বলেছিলেন, “এই সিন আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে করো একজন মহিলা রাস্তা পার হচ্ছেন, আর একটি ট্রাক এসে তাকে পিষে দিয়ে চলে গেল। মাংস পিণ্ড ছড়িয়ে আছে। ফিরে তাকাতেও ইচ্ছা করবে না… এতটাই কুৎসিত। কুৎসিত জিনিসকে আমি সুন্দরভাবে দেখাতে চাই না।” শেখরের কথা শুনে আমি রাজি হয়ে যাই। কিন্তু এটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিই আমি নিজে নগ্ন হতে পারব না। ‘ব্যান্ডিট কুইন’-এর নগ্ন দৃশ্যের জন্য আমি শেখরকে বডি ডাবল নেওয়ার কথা বলেছিলাম। এটাও জানিয়েছিলাম, এটা হলেই আমি ছবিটা করব, না হলে করব না। শেখর আমাকে সময় দিয়েছিলেন। আমাকে সকলে সাহসও জুগিয়েছিলেন। কিন্তু আমি রাজি হতে পারছিলাম না মন থেকে। শেখরকে জানিয়ে দিলাম, যে পারব না। ওঁরা বডি ডাবল নিয়ে নিল… গুজরাট থেকে একজন মডেলকে দিয়ে ওই সিনটা করানো হয়েছিল। ওঁকে নগ্ন অবস্থায় সিনটা করতে দেখে আমি কাঁদতাম খুব। মনে হত ক্রেডিট সব আমি নিয়ে যাব, আর লাঞ্ছনা মেয়েটির হবে…

অনেকেই হয়তো জানেন না ‘ব্যান্ডিট কুইন’-এর নগ্ন দৃশ্যে আপনি ছিলেন না! আজ জানতে পারলেন…

মনে হত বডি ডাবলের মেয়েটির জীবন ও ‘ফুলনদেবী’র জীবনের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। তবে সকলে খুব সহযোগিতা করেছিলেন। আমাদের ইউনিটের শেখর কাপুর, সাউন্ড ডিপার্টমেন্টের একজন, লাইটের একজন এবং ডিওপি ছাড়া সবাই সেট খালি করে দিয়েছিলেন। নগ্ন দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় আমি পিছনে বসেছিলাম কম্বল মুড়ি দিয়ে। মনটা খুবই খারাপ ছিল সেদিন আমার। ভাল লাগছিল না কিছুই। আমি কিন্তু সেদিন ওই মেয়েটিকে নিজেই বারবার রিটাচ করে দিয়েছিলাম। মেকআপ আর্টিস্টকে ওঁকে স্পর্শ করতে দিইনি। কিন্তু আপনি আমাকে বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন… সেটাই বলব…

বলুন…

‘ব্যান্ডিট কুইন’ করার সময় ভেবেছিলাম, এটাই আমার শেষ এবং এটাই আমার প্রথম ছবি হবে। আমি ছবি নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখিনি কখনও। তবে দারুণ অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা করে এখনও। আমার বয়স ৯৯ হয়ে গেলেও সেটাই আমার ইচ্ছা হয়ে থাকবে। বিতর্ক তৈরি হওয়ার সময় আমি মুম্বইয়ে ছিলাম। আমার ঘরে গ্রিল দরজা ছিল। একটা রুমের ঘর ছিল আমার। সে সময় বাড়িতে তালা লাগিয়ে চুপচাপ বসে থাকতাম। ছবি দেখতাম খুব। ডিভিডি ছিল তখন। শেখরকে বলেছিলাম বাবা-মাকে ছবিটা দেখাব। আমি একটা জিনিসে বিশ্বাস করি, কেউ যদি আমাকে নিয়ে মন্তব্য করেন, সেটা তাঁর নিজের মন্তব্য। আমি কিন্তু তাতে রাগ করি না। মানুষ তো প্রতিক্রিয়া দেবেই। আমার বাড়ি থেকেও বলত, “এই… এই লিখেছে তোর ব্যাপারে অসমের (সীমা বিশ্বাস অসমের মেয়ে) পেপারে। তুই এবার কিছু একটা বল!” আমি বলতাম, “কেন বলব? আমার তো প্রয়োজন নেই। ছবিটা করে আমি সত্যিই গর্বিত।” তবে বাবা-মাকে ছবিটা দেখাতেই চেয়েছিলাম। ওঁরা আমার কাছে কোনও জবাবদিহি চাননি। আমি চোখ বন্ধ করে তখন বাবার কোলে। নিজের কাজ আমি একদমই দেখতে পারি না। ছবি শেষ হল, বাবাই মাকে বলেছিলেন, “যাই বলো মীরা (সীমার মায়ের নাম), এত দারুণ পারফরম্যান্স আমার মেয়ে ছাড়া কে দিতে পারে বলো…”। সেটাই ছিল আমার কাছে অস্কার! বাবা কিন্তু আমাকে একবারও জিজ্ঞেস করেননি, ওই নগ্ন সিনটা আমি করেছিলাম কি না। সেদিন মনে হয়েছিল, বাবা-মা সঙ্গে আছে যখন সমাজকে পরোয়া করি না…

গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ