Rathyatra 2021: নীল বর্ণের জগন্নাথ, বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতি
শিলচরের অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের বিভাগীয় প্রধান অর্জুনদেব সেনশর্মা। জগন্নাথ এবং বিষ্ণুর দশ অবতার নিয়ে তাঁর কাজ দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত।
নন্দন পাল: আসছে রথ। মূলত ওড়িশার উৎসব হলেও শ্রীচৈতন্য ও বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে উত্তর ওড়িশা থেকে অবিভক্ত বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে জগন্নাথ ও রথযাত্রার মহিমা। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে রথের মেলায় পাওয়া যেত নীল বর্ণের জগন্নাথ পুতুল। নীলমাধব আদতে কি নীলই ? ভাবতে অবাক লাগে এই নীল রঙের ব্যবহারের মধ্যে লুকিয়ে আছে বাংলার সংস্কৃতির একটা আবহমান ধারা ! গড়িয়ার বণিকদের ‘রথবাড়ি’তে ২০১৪ পর্যন্ত জগন্নাথের মুখমন্ডলের রঙ ছিল নীল বর্ণের। পরিবারের বর্তমান সদস্য নারায়ন চন্দ্র বণিকের দাবি তাঁর পিতা চন্দ্র মোহন বণিক তৈরি করেন এই নীল বর্ণের জগন্নাথ ১৯৩৮ -১৯৩৯ এ। চন্দ্র মোহন তাঁর মায়ের পিন্ডদান করতে গয়া গিয়েছিলেন। সেখানে স্নান করে উঠতে গিয়ে একটি নিমের ছাড়া পান। সেই কারা নোয়াখালীর বাড়িতে এনে রোপন করেন এবং তার থেকে তৈরি করেন জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার মূর্তি। নারায়ন বাবুর দাবি তার পিতা স্বপ্নাদিষ্ট হন টানা চোখ এবং নীল গাত্রবর্ণের জগন্নাথ মূর্তি তৈরি করবার জন্য।
এদিকে লোকশিল্প ও আদিবাসী শিল্পের গবেষক সোমা মুখোপাধ্যায়ও বলছেন বাংলার প্রাচীন লোক সংস্কৃতির ইতিহাস ও লোককথায় দেখা যায় অতীতে বাংলায় জগন্নাথের মুখমণ্ডলের রঙ নীলই ছিল। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে এখনও নীল জগন্নাথ পূজিত হন। পাবনা , কুমিল্লা , রায়গঞ্জ , রাউজান পাহাড়তলী সড়কের ঊনসত্তরপাড়া, সিলেটের হবিগঞ্জ কিংবা চট্টগ্রামের মতলবের জগন্নাথও নীল বর্ণের। সোমা মুখোপাধ্যায়ের মতে বাংলার জগন্নাথের নীল বর্ণের জন্য দশাবতারের রামের প্রভাব থাকার সম্ভবনা প্রবল। বাল্মীকির রামায়ণেরও আগে বাংলায় রামচন্দ্রের প্রভাব শুরু হয় বঙ্গদেশের লোকসংস্কৃতিতে। সোমা আরও উদাহরণ দেন যে দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ , শ্রীরঙ্গম আর ওড়িশার রায়গড়া এ নীল বর্ণের জগন্নাথ দেখা যায়। এছাড়াও গুজরাট ,মধ্যপ্রদেশ, আসাম আর কাশ্মীরে নীল বর্ণের জগন্নাথ পূজিত হন।
শিলচরের অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের বিভাগীয় প্রধান অর্জুনদেব সেনশর্মা। জগন্নাথ এবং বিষ্ণুর দশ অবতার নিয়ে তাঁর কাজ দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। অর্জুনদেব দেখালেন বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাসে নবম অবতার বুদ্ধের স্থানে আঁকা হয়েছে জগন্নাথ। উৎকলের উত্তর ভাগ থেকে পুরো বঙ্গদেশ জুড়ে একসময়ে ব্যাপ্তি ছিল জগন্নাথের আর সেই প্রসার আরও বেড়েছে শ্রীচৈতন্য দেবের প্রভাবে। তবে নীল রঙের পুতুল জগন্নাথ নিজের শৈশবেও হাতিবাগানের রথের মেলায় দেখেছেন অর্জুনদেব সেনশর্মা। তিনি বলছেন কৃষ্ণের রূপের বর্ণনায় তাঁর গাত্র বর্ণ নতুন মেঘের মত বা শুক পাখির পালকের মত বলা হচ্ছে যা গাঢ় রঙ। নতুন মেঘ কখনওই কালো নয়। বরং নীলচে।
জগন্নাথকে কৃষ্ণের রূপ ধরলেও তাঁর রঙ তাই নীল হতেই পারে। আর নীল হলেও তাতে কোনও ধর্মীয় উপাচারের পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়। এরই মধ্যে আর পাঁচটা সাবেকি রথবাড়ির থেকে স্বতন্ত্র হয়ে আমাদের শহরেই দাঁড়িয়ে আছে গড়িয়ার রথবাড়ি।