কাঠের আদুরে দুর্গা নিষ্পাপ, শিশুতুল্য এবং তাই ঐশ্বরিক
দুর্গার সপরিবারের প্রতিটি সেট একটি কাঠের ফ্রেমে লাগিয়ে পাঠানো হবে বাজারে। প্লাস্টিক, পিভিসি, পলিমারের পুতুলে যখন বাজার ছেয়ে গেছে তখন সদর্পে ইকোফ্রেন্ডলি এই পুতুলগুলো তবে কি হারিয়ে যাবে? দু
নন্দন পাল: “আমার এই ছোট্ট ঝুড়ি এতে রাম রাবণ আছে , দেখে যা নিজের চোখে হনুমান কেমন নাচে।” রাম, রাবণ, হনুমানকে নিয়ে যেন সম্পূর্ণ এক অযোধ্যা কাণ্ড নিমতায়। আর তার সঙ্গেই আছেন দেবী দূর্গা।ফেলে আসা শৈশবকে মনে করিয়ে দেওয়া পুতুল সারা ঘর জুড়ে ছড়িয়ে। নিমতার মোনালিসা আর্ট সেন্টারের শিল্পী দেবাশীষ চন্দ তৈরি করেছেন কাঠের দুর্গা।
দুর্গার সঙ্গে মিনিয়েচার শিব ,গনেশ, লক্ষ্মী , সরস্বতী , কার্তিক। কোথাও অকাল বোধনের রামচন্দ্রের আরাধনা কোথাও সপরিবারে দেবী শারদলক্ষ্মী। দেবী দুর্গা তাঁর সন্তানরা আর শিব ঠাকুরকে দেখতে এতটাই মিষ্টি যে আদর করতে ইচ্ছে হয় ! তাদের চোখ যেন নিষ্পাপ শিশুতুল্য, ঐশ্বরিক। মনে পড়ে যায় পুরোনো বাংলার ‘বৌ পুতুল’। আজ থেকে সাত বছর আগে মেয়ে দেবস্মিতার জন্য পুতুল তৈরি করতে গিয়েই উদ্ভাবন এই কাঠের পুতুলের। ওরা সবাই যেন দেবাশীষের কন্যা দেবস্মিতারই খেলার সাথী।
সারা ঘর জুড়ে ছড়িয়ে আছে দশাবতার , জগন্নাথ , রাবণ , অকাল বোধনে রামচন্দ্রের দুর্গা আরাধনা। রাবণ যেন ততটা রাগী নয়। অপহরণের সময়ও সীতার মুখে একটা স্মিত ভাব। আক্ষেপ করেন শিল্পী এখন বাজারে এই জাতীয় পুতুলের চাহিদা ভাল হলেও কেউ শিখতে চায় না তৈরির প্রক্রিয়া। অসীম ধৈর্য আর নিপুন শৈলী আর চূড়ান্ত দক্ষতা লাগে যে একটা পুতুল তৈরি করতে ! তাই বাড়িতেই চন্দ দম্পতি তৈরি করেন এই কাঠের দুর্গা। পুতুলের গায়ের রঙের প্রাথমিক পরত দেন তারপর চোখ, মুখ আঁকেন দেবাশীষ নিজেই।
দুর্গার সপরিবারের প্রতিটি সেট একটি কাঠের ফ্রেমে লাগিয়ে পাঠানো হবে বাজারে। প্লাস্টিক, পিভিসি, পলিমারের পুতুলে যখন বাজার ছেয়ে গেছে তখন সদর্পে ইকোফ্রেন্ডলি এই পুতুলগুলো তবে কি হারিয়ে যাবে? দুর্গা ছাড়াও বিষ্ণুর দশাবতারের পুতুল আর জগন্নাথের রথও রয়েছে মোনালিসা আর্ট সেন্টারে। দেবীর বোধন শুরু করে দিয়েছেন দেবাশীষ। সারা ঘরময় রঙ তুলি , আঠা আর কাঠের টুকরো। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা কী পারবেন বাংলার কাঠের পুতুলের সুদিন ফেরাতে ? সেই জিজ্ঞাসাতেই এখন দেবাশীষ।