উত্তমকুমারের লাখ-লাখ টাকা পারিশ্রমিক, তাও টালিগঞ্জের রাস্তায় কেন ভিক্ষা করেছিলেন?
Uttam Kumar Dark Secrets: প্রত্যেক ছবি পিছু দু' থেকে চার লাখ চাকা পারিশ্রমিক পেতেন উত্তমকুমার। তাঁকে ছবিতে কাস্ট করার জন্য যে কোনও মূল্য দিতে রাজি ছিলেন প্রযোজকেরা। সেই সময় দু'-চার লাখ টাকা মানে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তা ৯৫ থেকে ১ কোটি টাকা। এত টাকা উপার্জন করার পরেও টালিগঞ্জের রাস্তায় ভিক্ষা করতে হয়েছিল উত্তমকুমারকে। এই সত্যিটা অনেকেই জানেন না।
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় এক বৈপ্লবিক কাজ করেছেন সিনেমার পর্দায়। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে মহানায়ক উত্তমকুমারকে পর্দায় ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। উত্তমকুমারের বিভিন্ন ছবি থেকে ক্লিপিংস কেটে তৈরি করেছেন ‘অতি উত্তম’ ছবিটি। সেখানে ঘুরে-ফিরে ডায়ালগ ডেলিভারি করতে দেখা যাচ্ছে স্বয়ং উত্তমকুমারকে। এই ছবি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মহানায়ক উত্তমকুমার সম্পর্কে দু’চার কথা। তবে সহ-অভিনেতা, তথা ইন্ডাস্ট্রির ‘দাদা’ উত্তমকুমার সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মাধবী বারবারই স্মরণ করেছিলেন মানুষ উত্তমকুমারকে।
মাধবীর সহজ কথা, “সকলে উত্তমকুমারের অভিনয় চেনেন। পর্দায় তাঁর সুপুরুষ চেহারা দেখেছেন। কিন্তু আমার যেটা সবচেয়ে মনে পড়ে, তা হল ব্যক্তি উত্তমকুমারকে। মানুষ উত্তমকুমারের কোনও তুলনাই চলে না।”
প্রত্যেক ছবি পিছু দু’ থেকে চার লাখ চাকা পারিশ্রমিক পেতেন উত্তমকুমার। তাঁকে ছবিতে কাস্ট করার জন্য যে কোনও মূল্য দিতে রাজি ছিলেন প্রযোজকেরা। সেই সময় দু’-চার লাখ টাকা মানে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তা ৯৫ থেকে ১ কোটি টাকা। এত টাকা উপার্জন করার পরেও টালিগঞ্জের রাস্তায় ভিক্ষা করতে হয়েছিল উত্তমকুমারকে। এই সত্যিটা অনেকেই জানেন না। সাক্ষাৎকারে খোলসা করেছিলেন মাধবী স্বয়ং। কিন্তু কেন উত্তমকুমারকে ভিক্ষা করতে হয়েছিল?
এই খবরটিও পড়ুন
মাধবীর কথায়, একবার ভয়ানক বন্যা হয়েছিল। চারিদিকে চলছিল হাহাকার। উত্তমকুমার নিজে যা উপার্জন করতেন, তাতে হাজার-হাজার মানুষের হাহাকার মিটত না। তাই কিছু সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন মহানায়ক। লোকের থেকে হাত পেতে টাকা চেয়েছিলেন বন্যা ত্রাণের জন্য।
খ্যাতির কমতি হবে বলে জনসমক্ষে বেরোতেন না উত্তমকুমার। এ কথা সকলেই জানেন। কিন্তু মানুষের বিপদে তাঁর পাশে এসে দাঁড়াতে কোনওদিনই পিছ পা ছিলেন না মহানায়ক। খ্যাতি কম, সে কথা ভুলে বিপদে পড়া মানুষগুলোর জন্য ত্রাণ জোগাড় করতে লোকের কাছে টাকা চাইতেও কুণ্ঠিত ছিলেন না তিনি।
আরও আছে। ইন্ডাস্ট্রির দুস্থ, বয়স্ক শিল্পীদের জন্য উত্তমকুমার তৈরি করেছিলেন ‘শিল্পী সংসদ’। যাঁদের বয়স হয়েছে, কাজ করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য প্রতি মাসে কিছু অর্থ ব্যবস্থা করত ওই সংসদ। কোনও মেকআপ আর্টিস্ট পারিশ্রমিক পাননি, কার মেয়ের বিয়ের টাকার জোগাড় হয়নি, শোনা মাত্রই উত্তমের নরম শিশুমন কোমর বেঁধে দাঁড়াত তাঁর পাশে। মাধবী বলেছেন, “একবার এক মেকআপ আর্টিস্টের মেয়ের বিয়ের জন্য ২৫,০০০ টাকা কমতি হয়েছিল। সেই টাকাটা কিন্তু যথাসময়ে সেই রূপসজ্জা শিল্পীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্বয়ং উত্তমই। মানুষটা বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন আমাদের মধ্যে থেকে। থাকলে আরও কতই না উন্নতি হতে পারত আমাদের ইন্ডাস্ট্রির।”