‘এঁরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখী, কিন্তু…’ বিস্ফোরক মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

টলিউডে ঠিক কী ধরনের যৌন হেনস্থা হয়? মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার মুখ খুললেন তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে। কারও নাম করলেন না। তবে যা বললেন, সেটা শুনে অনেকেই বুঝতে পারবেন তাঁর নিশানা কার-কার দিকে।

'এঁরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখী, কিন্তু...' বিস্ফোরক মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
Malabika Banerjee
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 19, 2024 | 6:22 PM

আউটডোর শুটিংয়ে কিছু নায়ক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রেমের প্রস্তাব দেন। সোশ্য়াল মিডিয়ায় একাধিক বিষয় নিয়ে সরব প্রযোজকও নাকি ধোয়া তুলসী পাতা নন। TV 9 বাংলার প্রশ্নের উত্তরে এবার বিস্ফোরক মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শহরে আরজি কর কাণ্ড। তারপর থেকে প্রশ্ন উঠছে নারী নিরাপত্তা নিয়ে। বিভিন্ন পেশায় মেয়েরা অসম্মানিত হচ্ছেন, এমন অভিযোগ। বাদ নেই টলিউড। এমন এক টালমাটাল সময়ে অভিনেত্রী মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (যিনি এখন এমজে নামে খ্যাত), TV9 বাংলার মাধ্যমে এতদিনের চেপে রাখা কিছু কথা এবার বললেন। সেসব অভিজ্ঞতা তিক্ত। কথার শুরুতেই মালবিকা জানালেন, কলকাতা ছেড়ে এখন তিনি মুম্বইতে থাকেন, কাজ করেন।

তবে টলিপাড়াতে কোথায় কী ঘটছে সেই খবর রয়েছে তাঁর কাছে। এই প্রসঙ্গেই প্রশ্ন করা হয়, তাঁর এই রকম কোনও অভিজ্ঞতা হয়েছিল? মালবিকার উত্তর, ‘টলিপাড়ার এক অভিনেত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে এক পরিচালককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বলিউডেও অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্তের অভিযোগের ভিত্তিতে মিটু মুভমেন্ট শুরু হয়েছিল কিছু বছর আগে। কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। এখন প্রশ্ন হল, আমার বাজে অভিজ্ঞতা থাকলেও কেন এত দিন বলিনি, কেনই বা আমি সেই অভিনেত্রী নই, যে প্রথম পদক্ষেপ নেবে! বিষয়টা হল, ঠগ বাছতে তো গাঁ উজাড় হবে , কার-কার নাম বলবো! ইতিমধ্যেই আমি বাংলাতে ১৩ বা ১৪টা ছবি করে ফেলেছি। আমি বলছি না সবাই খারাপ, তা হলে এই ছবিগুলো করতেই পারতাম না। আবার এটাও বলবো না, সব মেয়েরা ধোয়া তুলসী পাতা! একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার। আমার সঙ্গে কোন পরিচালক বা প্রযোজকের প্রেমের সম্পর্ক থাকতেই পারে, আমি তাঁর সঙ্গে বেড়াতে যেতে পারি, কফি খেতে যেতে পারি। এতে কোন সমস্যা নেই। তবে আমি কোনও ছবির শ্যুট করতে আউটডোরে গিয়েছি, সেখানে কোনও নায়ক (বলিউড আর টলিউডের ছবিতে কাজ করছেন এমন কেউ-কেউ) সেই সময়টার জন্য বেশি প্রেম দেখাচ্ছেন, এই প্রেম যে সৎ উদ্দেশ্যে নয়, এটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি আমার। এই প্রেম শুধুমাত্র একাকিত্ব কাটানোর জন্য। এমন তো হয় যে, সিনেমার সেটের প্রেম পরিণতি পেয়েছে। তবে শুধু নির্দিষ্ট সময়ে নিজের একাকিত্ব কাটানোর জন্য কাউকে প্রেম দেখানো বা বিশেষ কিছু প্রস্তাব দেওয়া ঠিক নয়। উল্টোদিকের মানুষটার জীবনে এর প্রভাব কী হবে, সেটা অন্তত ভাবা দরকার। টলিউডে ঠিক এই জিনিসটা অনেকে করেন। নামগুলো এমন যেগুলো আজ বলে দিলে, কেউ বিশ্বাসই করবেন না! সমাজের সামনে তাঁদের এমনই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। আমার বলার সাহস থাকলেও নামগুলো বলিনি, কারণ অভিযোগ তুললে, উল্টে সবাই আমাকে দোষারোপ করবেন যে, মালবিকা এর নামে ওর নামে বদনাম করে কাজ পেতে চাইছে বা প্রচার চাইছে। আসলে মেয়েটাই খারাপ!’

অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘এখন আমি বলছি কারণ এঁদের সবাই চিনে নিয়েছেন। সম্প্রতি কিছু ঘটনা সামনে আসার পর কারও আন্দাজ করতে অসুবিধা হবে না। এখন আমি মুম্বইতে বসে যখন অনেকের কাছে শুনি, ‘তোমাদের ওই অভিনেতা কী ভালো, ও কুপ্রস্তাব দেওয়ার মতো মানুষ নয়’, তখন আমি মুখে কিছু না বললেও, মনে মনে ভাবি, এঁরা আসলে কী ধরনের মানুষ, আমি জানি। প্রত্যেকের মধ্যে একটা দানব রয়েছে। যাঁরা দেখেছেন, তাঁরাই শুধু জানবেন। যাঁরা দেখেননি, তাঁদের কাছে এঁরা ভালো। আসলে এঁরা সকলেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখী, সমাজের নামকরা মানুষ, কেউ ভাবতেই পারবেন না এঁদের আসল রূপ কী!’

এই প্রসঙ্গেই মালবিকা জানালেন, ‘একজন প্রযোজক আছেন যিনি সমাজ মাধ্যমে নানা বিষয়ে খুব লেখেন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। তিনি কি ধোয়া তুলসীপাতা? একদম নয়। এঁদের বহু কুকীর্তি রয়েছে। নাম নিচ্ছি না। লাভ নেই। নাম নিলেও কাজের পরিবেশের কোন উন্নতি হবে না। বড়জোর তাঁকে সাসপেন্ড করা হবে। খবর হবে। তারপর সবাই ভুলেও যাবেন। তাতে আমার কোন লাভ হবে না। তবে তাঁর পোস্ট দেখে মনে হয়, চোরের মায়ের বড় গলা (হাসি)। আসলে টলিউড একটা ছোট পরিধিতে রয়েছে। ওখানে কাজ কম হয়, এসব বেশি হয়। তাই কোনও গ্রোথ নেই। এখন আপনি বলতে পারেন, মুম্বইতে কি এসব নেই? আছে। তবে আমি যদি কারও নামে এরকম অভিযোগ আনি, তা হলেও কাজ পাব। একজন দেবেন না, অন্যজন দেবেন। এখানে কর্পোরেট কায়দায় কাজ হয়। বহু প্রযোজনা সংস্থার মাথায় মহিলারা রয়েছেন। তাই কাজ পেতে অসুবিধা হয় না, কারণ এখানে একজন সিদ্ধান্ত নেন না। তবে খারাপ মানুষ সব জায়গাতে আছেন। টলিউডে কারও নামে অভিযোগ করলে তাঁর সঙ্গে যুক্ত পরিচালক, প্রযোজকরা কাজ দেবেন না আর। এই ঘটনা বলিউডে হয় না। এতো কন্ট্রোভার্সি হয়, তা-ও কাজ পেতে অসুবিধা হয় না।’

শেষে হতাশ হয়ে মালবিকা বললেন, ‘কাউকে হয়তো গুরুত্ব দিইনি। তিনি বলেছেন, ‘মালবিকা নাকউঁচু। সতী-সাবিত্রী সাজে!’ আমার এসব শুনে একদম খারাপ লাগে না। আমি জানি আঙুর ফল না পেলে টক লাগে।’