সত্যজিৎ সম্পর্কে কড়া মন্তব্য নার্গিসের, পাল্টা মুখ খুলেছিলেন মানিকবাবু
যেদিন কলকাতায় প্রথম দিন পথের পাঁচালী ছবির স্ক্রিনিং হয়, সেদিন রাজ কাপুরের সঙ্গে স্ক্রিনিংয়ে হাজির ছিলেন নার্গিস। ছবি দেখে তো অভিনেত্রী মুগ্ধতায় ভরে গিয়েছিলেন। সত্যজিৎকে ডেকে প্রশংসা করেছিলেন। সময়টা তখন, পাঁচের দশক। কিন্তু এই প্রশংসার গল্পই বদলে গেল আশির দশকে।

শোনা যায়, রাজ কাপুর চেয়েছিলেন পথের পাঁচালীর হিন্দি রিমেক তৈরি করতে। কিন্তু অনুমতি দেননি খোদ সত্যজিৎ রায়। ততদিনে পথের পাঁচালী বিশ্বজয় করেছে। বিশ্বের দাপুটে ফিল্ম সমালোচক, সাংবাদিকরা প্রায় রোজই সত্যজিৎ ও তাঁর শ্রষ্ঠার তারিফে শব্দের পর শব্দ লিখছেন। এমনকী, যেদিন কলকাতায় প্রথম দিন পথের পাঁচালী ছবির স্ক্রিনিং হয়, সেদিন রাজ কাপুরের সঙ্গে স্ক্রিনিংয়ে হাজির ছিলেন নার্গিস। ছবি দেখে তো অভিনেত্রী মুগ্ধতায় ভরে গিয়েছিলেন। সত্যজিৎকে ডেকে প্রশংসা করেছিলেন। সময়টা তখন, পাঁচের দশক। কিন্তু এই প্রশংসার গল্পই বদলে গেল আশির দশকে। যে নার্গিস একসময় সত্যজিতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, পথের পাঁচালী নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখিয়ে ছিলেন, সেই নার্গিসই ভরা রাজ্যসভায় সত্যজিৎ রায় ও পথের পাঁচালীর তীব্র সমালোচনা করলেন।
হঠাৎ কেন এমন পটপরিবর্তন?
অভিনয়ের পাশাপাশি নার্গিস ছিলেন সমাজকর্মী এবং রাজনীতিক। আশির দশকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন রাজ্য় সভার সক্রিয় সদস্য। সেই সময় রাজ্যসভার অধিবেশন ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে আলোচনার সময়, হঠাৎই বক্তব্য়ে সত্যজিৎ রায় ও তাঁর ছবি পথের পাঁচালীর প্রসঙ্গ টানেন নার্গিস। নার্গিসের মূল বক্তব্য ছিল, কীভাবে ভারতের ঐতিহ্যশালী শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশ্বের দরবারের আরও ভাল করে তুলে ধরা যায়। নার্গিস সেই প্রসঙ্গেই সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীকে বাঁকা চোখে দেখেন। আর স্পষ্ট জানান, বিশ্বের দবরারে সত্যজিৎ রায় সত্যিই খুব জনপ্রিয়। তিনি অবশ্যই কিংবদন্তি পরিচালক। কিন্তু আমার ক্ষোভ অন্যজায়গায়। তিনি ভারতের একাংশকে খুবই ভুলভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি দারিদ্রকে তুলে ধরেছেন তাঁর ছবিতে। এর ফলে পাশ্চাত্যে ভারত এবং ভারতীয়দের নিয়ে অন্য মনোভাব তৈরি হয়।
নার্গিস তাঁর বক্তব্যে যুক্তি দিতে গিয়ে জানান, যখনই তিনি বিদেশে গিয়েছেন, ওখানকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন, সবাই সত্যজিতের ছবির উদাহরণ দিয়ে ভারতের গরিব চিত্রের কথা বলেছেন। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন, সত্য়িই ভারতে স্কুল নেই, অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না! সত্যজিৎ রায় যেভাবে দারিদ্রকে তুলে ধরেছিলেন, তা আধুনিক ভারতের একেবারে বিপরীত। নার্গিস বলেন, ”আমার তিনতলা বাড়ি আছে শুনে অবাক হয়েছিলেন আমার বিদেশি বন্ধুরা!”
সেই সময় নার্গিসের এমন উক্তি হইচই ফেলে দিয়েছিল। বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। কিন্তু প্রথমে চুপ করে ছিলেন সত্যজিৎ। তবে এক সাংবাদিককে সত্যজিৎ বলেছিলেন, ”আমার জানা নেই নার্গিস এমন কেন বলেছিলেন। তবে এত তর্ক বিতর্কের মধ্যে ঢুকতে চাইনি। কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, নার্গিস তো স্ক্রিনিংয়ে পথের পাঁচালী দেখে খুব প্রশংসা করেছিল। হঠাৎ অন্যরকম বললেন কেন, তা জানা নেই।! ”
সত্য়জিতের সঙ্গে নার্গিসের সম্পর্ক কখনই তিক্ত ছিল না। তবে ‘সতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য অফার দিয়েছিলেন নার্গিস। ছোট চরিত্র হওয়ায়, সত্যজিতের সেই অফার ফিরিয়ে দেন নার্গিস। এছাড়াও, নার্গিসের সঙ্গে তেমন কেমন যোগাযোগও ছিল না বলেই জানিয়ে ছিলেন সত্যজিৎ।
