মা বলেছে, মন খুলে ভালবাস, পকেট খুলে নয়: শ্রীমান ‘সুকৃত’ পৃথ্বীরাজ
Sukrit Saha: এবারে হয়েছে এক কাণ্ড! বিদ্যা আর প্রেম মিলে মিশে এক! সরস্বতী মায়ের অঞ্জলি নাকি কিউপিডের তিরে 'জখম'! TV9 বাংলার সঙ্গে নিজের অজানা আখ্যানের ঝাঁপি খুললেন জেন-জি অভিনেতা সুকৃত সাহা, থুড়ি, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ।

ওই যে কবি লিখেছিলেন, ‘বেল পাকলে কাকের যা, আমার এখন সেই দশা, কাল যে পরীক্ষা’, নাহ… কাল আমার পরীক্ষা না-হলেও এই বছরই আমি উচ্চ-মাধ্যমিক দিচ্ছি। তাই বুঝতেই পারছেন, কীরকম চাপটা যাচ্ছে! আর ওই যে কী যেন বলে, ‘কপালের নাম গোপাল, না গোপালের নাম…’, ওই ব্যাপারটাই হয়েছে এবার! ভ্যালেন্টাইন্স ডে আর সরস্বতী পুজো এক দিনে। অবশ্য তাতে কপাল বা গোপাল, কাউকেই দোষ দিয়ে বিশেষ লাভ নেই। কেন বলুন তো? কারণ আমি যে সিঙ্গল! প্রতিবার ওই ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ মানেই আমার কাছে খাওন, দাওন আর ঘুম… ব্যস। তবে এবারটা একটু আলাদা…
সরস্বতী মাইকি…
না, ঘরে বসে কাটাতে হবে না। স্কুলে যাব, এই বছরই তো স্কুলে শেষ পুজো। তারপরেই তো, কলেজ। আর তা ছাড়া উচ্চ-মাধ্যমিকের ব্যাপারটাও তো আছে। বলার আছে মা’কে অনেক কিছু। তাই অঞ্জলি-টঞ্জলি দিয়ে বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে ঘুরে আসব ভেবেই রেখেছি।
আহারে প্রেম…
বাঙালিরা বরাবরই এগিয়ে। সবার একটা করে ভ্যালেন্টাইন। আর আমাদের দু’টো। এই ডে মানে আমি দিনের কথা বলছি। অন্য কিছু ভাববেন না যেন! আমি কিন্তু পাক্কা ওয়ান ওম্যান ম্যান। সরস্বতী পুজো মানেই হাত ধরে ঘোরা। ও দিকে, প্রেমদিবসও তো ঠিক তাই-ই। একটাই পার্থক্য: ভ্যালেন্টাইন্স ডে’তে ওই একটু ওয়ান পিস-টিস পরা সবাইকে দেখি, আর সরস্বতী পুজো মানেই শাড়ি। দেখুন, আমি আজ সিঙ্গল, কিন্তু তাই বলে আমারও যে হালকা প্রেম হয়নি, তা কিন্তু নয়। হ্যাঁ, টেকেনি, দ্যাট’স ডিফারেন্ট। বলতেই পারেন, আমরা জেন জ়ি, কমিটেমেন্টে সমস্যা আছে আমাদের। ব্যাপারটা না শুধু সেরকমও নয়। ‘তালি তো আর একহাতে বাজে না’—একটা সময় আমার কাছে হাত-ধরা মনে ছিল ভালবাসা, পরে দেখলাম পুরোটাই মিথ। সে যাই-ই হোক, এবার সরস্বতী মায়ের কাছের প্রেমদিবসে একটাই প্রার্থনা, ‘ও মা, একটা ভ্যালেন্টাইন জুটিয়ে দিও। পরীক্ষাটাও একটু দেখে নিও।’
View this post on Instagram
‘গাঁদা ফুল দিলেও যেন খুশি হয়’
এই, এই… আমি কিন্তু উপহার-টুপোহারে বিশ্বাসী নই। মা বলে, ‘মন খুলে ভালবাস, পকেট খুলে নয়।’ তাই আমার প্রেমিকা যদি গোলাপ না দিয়ে গাঁদাও দেয়, তাতেও আমি খুশি। ঠিক তেমনই… একটা পেন, একটা বই, বা একটা ছোট্ট চকোলেটও যেন তাকে খুশি করতে পারে। ভালবাসুক ভাই, সেটাই এনাফ!
প্রেমের বিড়ম্বনা
লোকজন আমায় অল্প-আধটু চেনে এখন। ‘কমলা ও শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ যখন শেষ হয়, তারপর পরই একটা ফোন পাই আমি। এক নারী কণ্ঠ। মন জুড়ে তাঁর অভিমানের বাসা। তার পরেই সে হট করে বলে, ‘তুমি এখন কিছু কেন কর না? তোমায় কেন দেখতে পাই না! আমি সুইসাইড করব।’ ভাবুন একবার! এ সব সময় মা-বাবার সহায় হই। ওঁরাই ব্যাপারটাকে সামাল দেন। এবারেও তাই হয়েছে। মায়ের কাছে ভ্যালেন্টাইন চেয়েছি, আমার পছন্দটাও তো জানিয়ে রাখা দরকার। ওভাবে কুমোরটুলি থেকে প্রেমিকা অর্ডারের স্বভাব আমার কোনওদিনই নেই। তবু তার হাসি, তার চোখ. আর তার সবার সঙ্গে, এমনকি আমার সঙ্গেও মিশতে পারার ক্ষমতার দিকে কিন্তু আমার পাক্কা নজর থাকবে।
কষ্ট হয় জানেন…
যাই হোক, কামিং ব্যাক টু মা সরস্বতী, একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি। আমাদের এই প্রজন্মের কাছে সরস্বতী পুজোর সেই উন্মাদনাটায় কোথাও গিয়ে ভাঁটা পড়েছে। ২০২০-র আগে আমি যদিও তখন বেশ ছোট। অপেক্ষা করতাম, কখন অঞ্জলি দেব, কখন স্কুলে যাব! এখন আমাদেরও দু’-তিন ক্লাস পরের সহপাঠীদের দেখি, রিলস বানাব, ইনস্টায় দেব। কষ্ট হয় জানেন! সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের সবাইকে খেয়ে নিচ্ছে। আমাকেও… এই যে আমি কখনও ভেবেছি ক্লাস ৯-এ হাতে ফোন পাব? পেয়েছি তো। যখন ২৪/২৫-এ পৌঁছব, তখন হয়তো সরস্বতী পুজো ইকুয়ালস টু সেলফি তোলা হয়ে যাবে। এখনই আমার বয়সি অনেককে দেখেছি, অঞ্জলি বলতে তাঁরা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ বোঝে। পুজোটা ইভেন্ট হয়ে গিয়েছে। সে যাই হোক, আপাতত পড়ায় মন দিই। মা নয়তো খুব বকবে! কে বলতে পারে? পিঠেও পড়তে পারে দুই তিন ঘা।
View this post on Instagram
(অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত) অনুলিখন: বিহঙ্গী বিশ্বাস