দুলাল লাহিড়ী
স্নেহা সেনগুপ্ত
প্রশ্ন: অতীতে বহু দুষ্টুলোকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেই অর্থে এখন সংখ্যাটা অনেকটাই কমেছে… ‘এক্কা দোক্কা’য় আপনি ভাল দাদু। ‘খড়কুটো’য় ছিলেন ভাল জেঠু। আবার ‘মোহর’-এ ছিলেন বিরক্তিকর জেঠু। অনেক বছর আগে ‘কুয়াশা যখন’-এ ছিলেন ভয়ানক খারাপ একটা মানুষ…
দুলাল: হ্যাঁ ‘বালিঝড়’ও তো চলছে। ‘এক্কা দোক্কা’ চলছে।
প্রশ্ন: ‘বালিঝড়’-এ আপনি নেগেটিভ না পজ়িটিভ?
দুলাল: সেটা তো সারপ্রাইজ়। না দেখলে বলব না (হাসি)।
প্রশ্ন: অনেক-অনেক ‘খল’ চরিত্র করেছেন। সিনেমা, সিরিয়াল দু’জায়গাতেই। নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতেন বলে বিকাশ রায়ের গায়ে জুতো ছুড়েছিলেন পথচলতি মানুষ। আপনার সেই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে কখনও?
দুলাল: আপনারা ‘নেগেটিভ, নেগেটিভ’ করেন। আমি কিন্তু সেভাবে কিছুই বিচার করি না। আমি সব চরিত্রকেই পজ়িটিভ হিসেবে দেখি। কারণ, যে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করে, সে-ও ভাবে ‘আমি পজ়িটিভভাবেই এগিয়ে চলেছি’। তাঁর কাছে কিন্তু নেগেটিভ বলে কিছু নেই। যে লোকটা পজ়িটিভ চরিত্রে অভিনয় করছে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারাণ মানুষ তাঁকে নেগেটিভ মনে করছে। সুতরাং, ‘ভিলেন’ শব্দটাকে আমি খুব একটা মান্যতা দিই না। আমি একটা জিনিসই মানি, সেটা হল অভিনয়।
প্রশ্ন: নেগেটিভ চরিত্র করতে গিয়ে কোনও বিশেষ অনুভূতি?
দুলাল: এই ধরনের চরিত্র করতে গিয়ে আমার বারবারই মনে হয়েছে, নায়কের চেয়ে মানুষ খলনায়ককে বেশি পছন্দ করে। কারণ, খলনায়ক না থাকলে নায়ক কোনওদিনও ‘নায়ক’ হতে পারত না। সেটাই আসল কথা। খলনায়কের চরিত্র বিশ্বাসযোগ্য না হলে নায়ক জিতবে কী করে? এত বছর ধরে অভিনয় করে আমার এটাই মনে হয়েছে, মানুষ ধরেই নেয়, এই লোকটা ‘ভিলেন’ চরিত্রেই অভিনয় করে। তবে আমি কোনওদিনও জুতোর মার খাইনি। লোকের ভালবাসাই পেয়েছি। আমাকে দর্শক অনেক ভালবাসা, সম্মান, আশীর্বাদ দিয়েছেন। আসলে দর্শকের রাগও ক্ষণিকেরই। সিনেমা হল থেকে বেরোলেই মানুষ সব ভুলে যায়।
প্রশ্ন: পরবর্তী সময় কোন-কোন ভিলনকে ভাল লেগেছে?
দুলাল: সবাই ভাল।
প্রশ্ন: এটা তো ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর হয়ে গেল…
দুলাল: না না, সবাই ভাল। না হলে এত কাজ হচ্ছে কীভাবে?
প্রশ্ন: আপনাদের সময়কার ভিলেন আর এখনকার ভিলেন, দু’টো একই রকম মনে হয় কি?
দুলাল: এখন তো ভিলেন বলে কোনও বস্তুই নেই আর। আমরা যে সমস্ত ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম, সেই সব কনসেপ্ট এখন উঠে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছে। উত্তমকুমারের রোম্যান্টিকতা যেভাবে হারিয়ে গিয়েছে, সেভাবেই।
প্রশ্ন: সেটা ভাল হয়েছে না খারাপ?
দুলাল: তা তো সময় বলবে। প্রমথেশ বড়ুয়ার যুগ ভাল, আবার অনির্বাণ ভট্টাচার্যর যুগও ভাল। যে-যে সময় আসে, সেটাই আমার মনে হয় ভাল। সেটাই নতুন। আমার যা মনে হল তাই বললাম…