অতীত: সিনেমা হলের দৈনন্দিনের ‘ডিকশনারি’তে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত যা ছিল, তা হল ৫০ শতাংশের বেশি দর্শকাসন ভর্তি না-করে ছবি প্রদর্শন।
বর্তমান: ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে ১০০ শতাংশ দর্শকাসন নিয়ে সিনেমা প্রদর্শনের ছাড়পত্র মিললেও এখনও পর্যন্ত ‘ম্যাজিক’ দেখাতে পারেনি সিনে-ব্য়বসা।
ভবিষ্যৎ: ভ্য়ালেন্টাইনস-সপ্তাহে ‘প্রেম টেম’-এ মজে থাকা জনতা কতটা হলমুখী হবে, সে দিকেই এখন তাকিয়ে প্রযোজক-পরিচালক থেকে ডিস্ট্রিবিউটর-এগজ়িবিটর।
আজ, শুক্রবার বলিউডের কোনও ছবি রিলিজ না-করলেও তিন-তিনটে বাংলা ছবি রিলিজ করছে এ রাজ্য়ে। তবে আজকের শুক্রবারটা একটু আলাদা। কেন আলাদা? আলাদা কারণ ১০০ শতাংশ দর্শকাসনের ছাড়পত্র পাওয়ার পর তিনটে বাংলা ছবি রিলিজ হচ্ছে (পুজোর সময় যদিও ৫০ শতাংশ দর্শকাসন নিয়ে হল খোলার পর একই দিনে রিলিজ করেছিল এর দ্বিগুণেরও বেশি ছবি)। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রেম টেম’, অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার ‘ম্যাজিক’ এবং আবির-নুসরতকে নিয়ে ব্রাত্য বসুর পরিচলনায় ‘ডিকশনারি’।
কিন্তু প্রশ্ন তবু থেকেই যাচ্ছে, কতটা দর্শক টানতে পারবে ভ্য়ালেন্টাইনস-সপ্তাহের ত্রয়ী-ছবি?
অগ্রিম বুকিং শুরু হয়ে গেলেও কতটা সাড়া মিলছে? প্রশ্ন রাখা হয়েছিল নবীনা সিনেমা হলের মালিক নবীন চোখানিকে। তিনি স্পষ্ট বলেন, “এখনও পর্যন্ত দারুণ কিছু রেসপন্স কিছু পায়নি। আশাও করছি না। কাল যে তিনটে বাংলা ছবি রিলিজ করছে কোনওটাই ‘বিগ টিকিট’ সিনেমা নয়। যতদিন না কোনও ‘বিগ টিকিট’ সিনেমা, হিন্দি হোক বা বাংলা, রিলিজ করছে ততদিন পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।” তাঁর আরও সংযোজন, “আমি রেস্তোরাঁ খুললাম, কিন্তু ভাল-মন্দ খাবার মেন্য়ুতে রাখলাম না, তাহলে কি লোকজন আসবে রেস্তোরাঁয়? সিনেমা হলের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এক।”
বাংলায় এই মুহূর্তে সিঙ্গল স্ক্রিনের সংখ্য়া কমতে-কমতে ২০০-র কাছাকাছি। পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১০০ শতাংশ দর্শকাসন নিয়ে সিনেমা হলগুলো নতুন করে চালু হলেও দর্শক কতটা আসছেন? মিনার, বিজলী, ছবিঘর-এর কর্ণধার সুরঞ্জন পালের উত্তর, “টানা তিন মাস অনেক ক্ষতি স্বীকার করে সিনেমা হল চালিয়েছি। এখন যে সময় এসেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলার প্রযোজক-ডিস্ট্রিবিউটাররা যদি সবাইকে ছবি চালাবার সুযোগ না দেয়, তাহলে সারভাইভ করা খুব মুশকিল।”
পিভিআর-এর প্রোগ্রামিং সিনিয়র এক্সিকিউটিভ উজ্জ্বল বিশ্বাস কিছুটা হলেও আশাবাদী। তাঁর কথায়, “একশো শতাংশ দর্শকাসন নিয়ে সিনেমা হলগুলো চললেও খুব একটা রেসপন্স পায়নি। তিনটে বাংলা ছবি যেহেতু রিলিজ করছে, তাই-ই আশা করছি এবার মানুষ আসবেন।” তবে যতই তিন-তিনটে বাংলা ছবি রিলিজ করুক না কেন, নবীন চোখানির মতো তিনিও যে বিগ টিকিট ছবির উপরই ভরসা রাখেন, তা স্পষ্ট জানালেন উজ্জ্বল। তিনি বলেন, “এই উইকএণ্ড-এর উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে একটা বড় ছবি রিলিজের খুব দরকার।”
ডানলপের সোনালি সিনেমা হলের মালিক দীপাঞ্জন দে অবশ্য় আশাবাদী। তিনি বলেন, “৫০ শতাংশ দর্শকাসনের ক্ষেত্রে যা লোক হচ্ছিল, ১০০ শতাংশের ক্ষেত্রেও আপাতত কোনও পরিবর্তন নেই চোখে পড়ার মতো। বিগ স্টারের ছবি না-এলে মনে হয় না অবস্থা বদলাবে। আমাদের হলে ‘ম্যাজিক’ এবং ‘প্রেম টেম’ দেখানো হবে। ‘প্রেম টেম’ বড় ব্যানারের ছবি, ‘ম্যাজিক’-এ অঙ্কুশ আছেন, তাই দেব বা জিতের মতো ভিড় না হলেও মোটামুটি লাভের আশা করছি। তা ছাড়া এটা ভ্যালেন্টাইনস উইক। সামনে সরস্বতী পুজোও রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে মনে হয় অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হবে।”
গলায় একই সুর জয়া সিনেমা হলের মালিক মনোজিৎ বণিকের। তিনি বলেন, “১০০ শতাংশ হওয়ার পর কিছুটা লোক সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের জয়া লেকটাউনে মোট আসন সংখ্যা ৭৭৪। আগে ২-৩% শতাংশ হচ্ছিল এখন সেটা বেড়ে হয়তো ৬-৭% গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘মন্সটার হান্টার’ যেহেতু থ্রি-ডিতে ছিল, তাই ওই ছবির ক্ষেত্রে রেসপন্স কিছুটা ভাল। কাল আমাদের হলে ডিকশনারি, ম্যাজিক এবং প্রেম টেম তিনটিই দেখানো হবে। নতুন কনটেন্ট। আশা করছি আগের থেকে লোক বেশি হবে।”
আরও পড়ুন:নতুন ইনিংস অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারির, লেখিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ‘বরেলি কি বরফি’-র পরিচালকের
অজন্তা সিনেমা হলের মালিক শতদীপ সাহা অবশ্য একটু অন্য দিকে আলো ফেললেন। তাঁর কথায়, “লোকজন আজকাল খুব একটা বাংলা ছবি দেখতে আসে না। সবাই অপেক্ষা করছে একটা বিগ বাজেট হিন্দি ছবির জন্য। যে বিগ বাজেটের বাংলা ছবিগুলো ভাবছে পরে রিলিজ করবে, তারা কিন্তু বিপদে পড়বে। একবার বিগ বাজেট হিন্দি ছবি রিলিজ করতে শুরু করলে বাংলা ছবিগুলো কিন্তু হলে আর জায়গা পাবে না।” তাঁর আর্জি, “আমি চাই মানুষ বাংলা ছবি দেখতে আসুক। দর্শক বাংলা ছবি না দেখলে বাংলা ছবি বাঁচানো যাবে না।”
বাংলা ছবিকে বাঁচানোর তীব্র চেষ্টা করে চলেছেন যে ‘সিনেমাওয়ালা’রা, তাঁদের জন্য় যেন শুধু থেকে যায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়ের লেখা, অরিজিৎ সিংয়ের গলার গান: “চাকায় চাকায় ঘোরে/কাহিনীর ছায়াবাজি খেলা/পর্দা মগ্ন হয়ে থাকে/অগুন্তি চোখে দুই বেলা।”
গ্রাফিক্স এবং অলঙ্করণ : অভীক দেবনাথ