Promita Bhowmik: ‘মাস্টারমশাইরা জানতে পারলে স্বপ্নদীপকে আগলে রাখতেনই’, নির্দ্বিধ পরিচালিকা তথা যাদবপুরের প্রাক্তনী প্রমিতা ভৌমিক
TV9 বাংলা Exclusive: TV9 বাংলার সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন বাঙালি পরিচালক প্রমিতা ভৌমিক।
স্নেহা সেনগুপ্ত
দক্ষিণ কলকাতার পাঠভবন স্কুলের ফার্স্ট গার্ল ছিলেন প্রমিতা ভৌমিক। মাত্র দু’মাস ডাক্তারি পড়ে অচিরেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলা বিভাগে। সিনেমা, সাহিত্য, নাটক—ভালবাসার বিচরণভূমি ছিল এই তিন। স্নাতকের পর স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি। কবিতা লেখা, অনুবাদ করা… ধীরে-ধীরে হয়ে ওঠে দোসর। যাদবপুরে ‘ম্যাম’ হিসেবেও সুখ্যাতি ছিল খুব। কলকাতার লোরেটো কলেজেও বছর দুই পড়িয়েছিলেন। তারপর সবকিছুকে পিছনে ফেলে স্বপ্নপূরণ করতে ছুটলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন সিনেমা তৈরি করবেন। করলেনও। বাংলা ভাষায় তৈরি তাঁর ছবিকে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে পারে শুধুমাত্র চলচ্চিত্র উৎসবগুলি। সেই প্রচেষ্টাই চালাচ্ছেন প্রমিতা। ইতিমধ্যেই তৈরি করে ফেলেছেন ‘পরিচয়’, ‘প্রবাহ’র মতো বেশ কিছু স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। সুদীপ্তা চক্রবর্তী, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন। আগামীতে তৈরি করতে চলেছেন তাঁর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র, অর্থাৎ ফিচার ফিল্ম। প্রমিতার সঙ্গে কথা বলল TV9 বাংলা।
প্রশ্ন: বাবার ইচ্ছেয় ডাক্তারি পড়তে ঢুকেছিলেন। ছেড়ে দেওয়ায় তিনি কষ্ট পাননি?
প্রমিতা: তা তো একটু পেয়েছিলেনই। কিন্তু এখন অনেকখানি সামলে উঠেছেন। আমি নিজের মতো কাজ করে সাফল্য পাচ্ছি, তাই-ই হয়তো। আরও একটা বড় বিষয়, আমি ভাল আছি দেখে হয়তো তাঁরা খুশি।
প্রশ্ন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়েছেন। সেখানে তো স্বর্ণপদক (গোল্ড মেডেল)-এর অধিকারী ছিলেন?
প্রমিতা: হ্যাঁ। তা ছিলাম। আমি পাঠভবনে পড়তাম। ক্লাসে প্রথম হতাম বলে বাড়ি থেকে সায়েন্স নিয়ে উচ্চশিক্ষা করার কথা বলেছি। ডাক্তারিতেও সুযোগ পাই আর জি কর-এ। কিন্তু আমি ভালবাসতাম সাহিত্য, নাটক… এসব। মাস দুই ক্লাস করে ছেড়ে দিয়ে যাদবপুরে ভর্তি হই। শেষমেশ পিএইচডিও করি।
প্রশ্ন: তা হলে সেই তো ডাঃ প্রমিতাই হলেন?
প্রমিতা: আমি আসলে একেবারেই ডাঃ প্রমিতা হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। পিএইচডি করেছিলাম একটা গবেষণা করব বলে। কলেজে পড়াতামও। কিন্তু সিনেমা তৈরি করব বলে সবটা ছেড়ে এসেছি।
প্রশ্ন: সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা নিশ্চয়ই ছবি তৈরিতে সাহায্য করেছে?
প্রমিতা: অবশ্যই করেছে। আমি কবিতা-গল্প লিখতাম। আমার বেশ কয়েকটা বইও আছে। লিখতে-লিখতে একটা সময় মনে হত চরিত্রগুলোকে দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে। ফটোগ্রাফি করতেও ভাল লাগে। কিন্তু এর মানেই কি সিনেমা তৈরি করতে পারব? বিষয়টা কিন্তু এতটাও সহজ নয়। বারবারই মনে হত, যাঁদের নিয়ে ভাবছি, তাঁদের দেখতে পাচ্ছি, তা হলে হয়তো দর্শককেও দেখাতে পারব।
প্রশ্ন: আপনি তো পরিচালক হিসেবে পরিবারের প্রথম প্রজন্ম। কী-কী প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে?
প্রমিতা: আমার পরিবারের কেউ এই দুনিয়ার নয়। আমি নিজেও কোনওদিনও কোনও ফিল্ম স্কুলে যাইনি। মনে হত একজন সফল পরিচালক হতে পারব। কিন্তু পারতে গেলে শিখতে হয়, সেটা আমি বুঝিনি। এটাও বলব, সাহিত্যের সঙ্গে সিনেমার অনেকটাই মিল রয়েছে। কাজ শুরু করেছিলাম ছোট-ছোট চিত্রনাট্য লিখে।
প্রশ্ন: বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কতখানি সাহায্য করল?
প্রমিতা: যেহেতু লেখালিখি করতাম, অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। যে-যে টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে এ পর্যন্ত কাজ করেছি, তাঁরা খুবই সাহায্য করেছেন। আমি যেহেতু কবিতা লিখতাম, ‘পোয়েট্রি’ ফিল্ম তৈরি করেছিলাম। ওটার নাম ‘অপেক্ষা’। ইউটিউবে রয়েছে। ফেস্টিভ্যালেও গিয়েছিল। প্রশংসাও পেয়েছিলাম। মনে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয় যে, নাহ্… এবার ফিকশন তৈরি করতে পারি। করোনার পর ২০২১ সালে কনীনিকা (বন্দ্যোপাধ্যায়) ও সুদীপ্তার (চক্রবর্তী) সঙ্গে ‘পরিচয়’ শর্ট ফিল্মে কাজ করি। মেয়েদের নিয়ে গল্প। চিত্রনাট্য শুনেই কাজ করতে রাজি হয়ে যান ওঁরা। তারপর মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘প্রবাহ’তে কাজ করি। ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। চলচ্চিত্র উৎসবগুলো থেকে ডাক আসে। পুরস্কার পাই। বারবারই মনে হয় বাংলা ছবিকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে অনেক ভাল-ভাল নাটক হয়। সেগুলোও ইউটিউবেই রয়েছে। কোটি-কোটি ভিউজ়। ওখানকার কারও সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে হয়?
প্রমিতা: এখানে যে শিল্পীরা আছেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করা যায়। ওপার বাংলার শিল্পীদের নিয়ে ভবিষ্যতে ভাবব নিশ্চয়ই। তবে আমার নিজের ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ় করে গিয়েছে। এবার তো ফিচার ফিল্মও তৈরি করব। সেটা ফেস্টিভ্যালে পাঠানো হবে।
প্রশ্ন: শুটিং হয়েছে?
প্রমিতা: সবেমাত্র প্রি-প্রোডাকশন চলছে। তবে আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার হিসেবে কাজ করব। সবটাই নিজের জমানো টাকায়। অনেকদিন থেকেই চিত্রনাট্য নিয়ে বিভিন্ন প্রযোজকদের কাছে ঘুরেছি। কাউকে পাইনি।
প্রশ্ন: আপনি তো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী। স্বপ্নদীপ আপনারই বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ব়্যাগিংয়ের এই সাম্প্রতিক বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই…
প্রমিতা: দেখুন, আমি কোনও দিনও হস্টেলে থাকিনি। যাদবপুরে ব়্যাগিং নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নেই। তবে বন্ধুরা হস্টেলে থেকেছে। তাঁদের কাছেও এমন ঘটনার কথা কোনওদিনও শুনিনি। এটা যেন মাত্রা ছাড়া। ছেলেটি আমার বিভাগের ছিল। ও কিন্তু বেশিদিন পড়ার সুযোগ পায়নি। আমার বিভাগে ভীষণই ঘরোয়া পরিবেশ রয়েছে। মাস্টারমশাইরা জানতে পারলে স্বপ্নদীপকে আগলে রাখতেনই।
প্রশ্ন: আপনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাসে CCTV-র পক্ষে না বিপক্ষে?
প্রমিতা: আগে হলে বলতাম সমর্থন করি না। কিন্তু যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তার পর মনে হয় CCTV বসানোই উচিত।
গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ