১৫ নভেম্বর, ২০২০। ছিল রবিবারের দুপুর। তার আগে কলকাতার বেলভিউতে চলছিল লড়াই। যমরাজ এসে দরজার কাছে ছিলেন দাঁড়িয়ে। তাঁকে নিয়ে যেতে চিরকালের মতো। চিকিৎসকরাও ছিলেন নাছোড়বান্দা। কিছুতেই হার মানতে নারাজ! যে মানুষটাকে নিয়ে চলছিল এত টানাটানি, তিনি চেয়েছিলেন বাঁচতে। পার করতে চেয়েছিলেন জীবনের আরও কয়েকটি বসন্ত। লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরা-অ্যাকশন শুনে শুরু করতে চেয়েছিলেন অভিনয়। মঞ্চের পর্দা ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন আপামর বাংলাও। তিনি নিশ্চয়ই ফিরবেন, বারবার তিনি ফিরে এসেছেন, এবারও তাই হবে, বিশ্বাস ছিল সক্কলের।
কিন্তু বয়স বাড়লে মনের উপর শরীর কথা বলে। ইঞ্জিন ঠিক না থাকলে ইচ্ছাশক্তিও কাজ করতে চায় না। ৮০ ঊর্ধ্ব বয়স। করোনার আক্রমণ। ক্যান্সারের মতো কোমর্বিডিটি। সবটাই বিরোধিতা করেছিল কোমর বেঁধে। সৌমিত্র হেরে গেলেন সেই প্রথম। কিন্তু তিনি তো হেরে যাননি আসলে। অমর হয়ে রয়ে গিয়েছেন অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে। আজ আরও একটা ১৫ নভেম্বর, ২০২১ সাল। এবছর হয়ে গিয়েছে সৌমিত্র চলে গিয়েছেন। তাঁর ফেলে রাখা অভিনয়, কবিতা, আঁকা আজও রয়েছে মানবমনে, সবটা জুড়ে। শেষ বয়সে একদা নায়িকা স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর সঙ্গে পাঠ করেছিলেন ‘বেলাশেষে’ ছবিতে। “আহ্ কী অভিনয়!”, বলেছিল বাংলা, বলেছিল গুজরাট, মহারাষ্ট্র… সেই ছবির সিক্যুয়েল ‘বেলাশুরু’। কিন্তু সৌমিত্র-স্বাতীলেখার কেউই আজ আর নেই। ২০২১-এ চলে গেলেন ‘বিমলা’। করোনাকালে দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ থাকার পর খুলে গেল। দর্শকও আসছেন হলে। এই পরিস্থিতিতে কি পারত না ‘বেলাশুরু’ রিলিজ় করতে? এই নিয়ে TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বলেন ‘বেলাশুরু’র পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
সৌমিত্রবাবু যে এক বছর আমাদের মধ্যে নেই, তার একটা বিরাট প্রভাব পড়েছে চলচ্চিত্র জগতে। জানিয়েছেন শিবপ্রসাদ নিজেই। TV9 বাংলাকে তিনি বলেছেন, “সামনের বছর রিলিজ করবে ‘বেলাশুরু’। উনি যে এই একবছর আমাদের মধ্যে নেই, এটার একটা প্রভাব পড়েছে আমাদের মধ্যে। ওঁর সঙ্গে অনেক কাজ করার পরিকল্পনা ছিল। সেগুলো আর কিছুই করা হল না। ‘বেলাশুরু’ সিনেমাটা নিয়ে যে ভাবনা রয়েছে, এখনও পর্যন্ত করে উঠতে পারিনি।”
একটা বছর চলে গেল, কবে মুক্তি পাবে ছবিটা। জিজ্ঞেস করায় শিবপ্রসাদ বলেন, “সবে সিনেমা হলে ৭০ শতাংশ দর্শকাসনের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। আমরা অপেক্ষা করছি কবে ১০০ শতাংশ অনুমতি মিলবে। সেটার জন্যই আমরা ছবিটা রিলিজ করিনি এখনও। আমরা চাই দর্শক ১০০ শতাংশ অনুমতিতে দেখতে আসুন। ‘বেলাশেষে’ যে জিনিসটা দেখেছে, আমরা চাইব, ‘বেলাশুরু’তে সেটাই দেখুক। তার জন্য আর একটু অপেক্ষা করা দরকার বলে আমরা মনে করি। এখনও পর্যন্ত এই জিনিসটা বজায় রাখতে পেরেছি, যে ছবিটা ওটিটি কিংবা স্যাটেলাইটে দিয়ে দিইনি।”
শিবপ্রসাদ বরাবরই মনে করেন, দর্শক হল বিমুখ নন। তাঁরা যে কোনও না-কোনও একদিন হলে এসে সিনেমা দেখতেনই, সে বিষয়ে ১০০ ভাগ নিশ্চিত ছিলেন পরিচালক-প্রযোজক। TV9 বাংলাকে শিবপ্রসাদ এও বলেছেন, “ঘরের মধ্যে থেকে দর্শক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। আজ সব জায়গায় যেমন ১০০ শতাংশ মানুষ যেতে পারছেন, থিয়েটারেই বা কেন হবে না।”
আরও পড়ুন: Soumitra-Poulami: ‘‘কাজ করে বাপিকে ট্রিবিউট দিচ্ছি, এটাই তিনি চাইতেন’’: পৌলমী