সিনেমা হলের ‘স্টেটাস’ শেষ পর্যন্ত কী? জানা যাবে কি এ মাসেই

Dec 02, 2020 | 11:40 AM

বন্ধ, খোলা, ফের বন্ধ, ফের খোলা। না, ধর্মঘটের কারখানা নয়। পার্টনারের হোয়াটসঅ্যাপের ব্লক-আনব্লকের কিসসাও নয়। গত আট মাসে কলকাতা এবং শহরতলির নামজাদা কিছু সিঙ্গল স্ক্রিনের স্টেটাস আপডেট।

সিনেমা হলের স্টেটাস শেষ পর্যন্ত কী? জানা যাবে কি এ মাসেই
ফাইল চিত্র

Follow Us

বন্ধ, খোলা, ফের বন্ধ, ফের খোলা। না, ধর্মঘটের কারখানা নয়। পার্টনারের হোয়াটসঅ্যাপের ব্লক-আনব্লকের কিসসাও নয়। গত আট মাসে কলকাতা এবং শহরতলির নামজাদা কিছু সিঙ্গল স্ক্রিনের স্টেটাস আপডেট। (Cinema Hall)

করোনা-পর্বে সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত অক্টোবরেই খুলেছিল সিনেমা হল। ৫০% দর্শকের শর্ত মেনে আশায় বুক বেঁধেছিলেন হলমালিক এবং কর্মকর্তারা। পুজোর মরসুমে হইহই করে মুক্তিও পেয়েছিল একগুচ্ছ বাংলা ছবি। কিন্তু দেড় মাস যেতে না-যেতেই লাভের গুড় পিঁপড়ে খাওয়া তো দূর, আর হলমুখো হচ্ছেন না দর্শক। ফল, গত ২০ নভেম্বর থেকে প্রিয়া, মেনকা, অজন্তা, প্রাচী, ইন্দিরা, জয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোতে ঝুলল তালা। একযোগে ওই সব হল মালিকরা জানালেন, “আর পারছি না!”

এখানেই শেষ নয়। ‘কাহানি মে ট্য়ুইস্ট’ রয়েছে আরও। সূত্র বলছে, ওইসব হলমালিকদের একাংশ নাকি হলিউড (Hollywood)  ছবিকে হাতিয়ার করে এই আবহেই খুলতে চাইছেন হল, ডিসেম্বরের ৪ তারিখ থেকে। অন্যদিকে উল্লিখিত প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের একটা বড় অংশ নাকি এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারেননি। প্রিয়া, জয়ার মতো সিনেমা হল যেমন খুলে যাচ্ছে এই মাসেরই চার তারিখে। অন্য দিকে অজন্তা, ইন্দিরা কিন্তু আপাতত বন্ধ রাখারই পক্ষে।

কেন এই খোলা-বন্ধের নাটকীয় প্লট পরিবর্তন? কী হতে চলেছে সিঙ্গল স্ক্রিনের? সিঙ্গল স্ক্রিন কি উঠে যাবে? ফোনবুথ, টেলিগ্রাম এবং ফ্যাক্সের মতো সিঙ্গল স্ক্রিনও কী ক্রমশ জায়গা পাবে সিনেপ্রেমীদের নস্টালজিয়ায়? (Single Screen)

অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘লক্ষ্মী’ হলে মুক্তি পায়নি, পেয়েছে ওটিটিতে। ফাইল চিত্র।

পরিসংখ্যান বলছে, পুজোর ক’দিন সিনেমা দেখতে দর্শকদের ভগ্নাংশ ভিড় করলেও পুজোর পর থেকেই আর হলমুখো হচ্ছিলেন না সিনেপ্রেমীরা। হল মালিকদের মাথায় হাত পড়েছিল! এসি, ইলেক্ট্রিক বিল, গোদের উপর বিষফোঁড়া—শো শেষে স্যানিটাইজেশন। সঙ্গে রয়েছে কর্মচারীদের মাইনে, আনুষাঙ্গিক খরচ। লক্ষ্মীলাভ তো দূর, পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা। জয়া সিনেমার মালিক মনোজিৎ বণিক যেমন এ প্রসঙ্গে বললেন, “এ ভাবে পেরে উঠছিলাম না। কোথা থেকে এত খরচা আসবে বলুন তো? একে তো ৫০ শতাংশ দর্শকাসন, কিন্তু সে দর্শকও যদি হলমুখো না-হন, তা হলে কীভাবে কাজ চলবে? বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত। নিজের ব্যবসা কেউ স্বেচ্ছায় বন্ধ করতে চায়?”

আরও পড়ুন, বিয়ের দিন ঠিক করে ফেললেন অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা?

এ বার প্রশ্ন হল, করোনা আবহে ওটিটি রিলিজই যখন কার্যত ট্রেন্ড, তখন সিনেপ্রেমী বাঙালি হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কেন? করোনা-পরবর্তী জীবনে আর্থিক অবস্থার অবনতি নাকি ভাল ফিল্ম কনটেন্টের অভাব? দ্বিতীয় সমস্যাটিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মনোজিৎ। তাঁর কথায়, “পুজো গেল, দিওয়ালি গেল। বলিউডের কোনও ছ লে এল না। আশা ছিল অক্ষয় কুমারের ‘লক্ষ্মী’ হয়তো লক্ষ্মীলাভের আশা দেখাবে। কিন্তু তা-ও হল কই!”

‘ড্রাকুলা স্যার’, ‘রক্তরহস্য’ কিংবা ‘এসওএস কলকাতা’-র মতো ছবি রিলিজের পর-পরই দেখে ফেলেছে দর্শক। তাই বাদবাকি ছবি নিয়ে মাথাব্যথা তাঁদের নেই। তাঁদের পছন্দ শীতের দুপুরে ড্রয়িংরুমে ইয়ারফোন, সঙ্গে ‘লুডো’ কিংবা ‘দ্য কুইন্‌স গ্যাম্বিট’। অরিজিৎ দত্ত, প্রিয়া সিনেমাগলের মালিক, বললেন, “হিন্দি ছবি মুক্তি পায়নি ঠিকই। কিন্তু হল খোলার পরেও যে প্রচুর দর্শক হচ্ছিল, এমনটা নয়। আমাদের কনস্ট্রাকশনের কিছু কাজও বাকি ছিল। সব দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” একই সুর বেহালার ‘অজন্তা’ সিনেমা হলের মালিক শতদীপ সাহার গলাতেও।

আরও পড়ুন, নতুন লড়াইয়ের গল্প নিয়ে আসছে ‘অপরাজিত অপু’

ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার্স প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (IMPAA)-এর সেক্রেটারি পিয়া সেনগুপ্ত অবশ্য সিনেমাহল বন্ধ করার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন শহুরে হলগুলোর অতিমাত্রায় হিন্দি ছবির উপর নির্ভরশীলতাকে। তিনি বলেন, “একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন, শহরতলির সিনেমহল, যেমন বেলঘরিয়ার রূপমন্দির বা মেদিনীপুরের সিনেমা হল এই অবস্থাতেও কিন্তু দিব্যি খোলা আছে।”
মনোজিৎ (জয়া সিনেমাহলের মালিক) অবশ্য পিয়ার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, শহরতলির সিনেমাহল এই অবস্থাতে খোলা রাখতে পারছে কারণ সে সব হলের মেনটেনেন্স কস্ট কম। তাঁর বক্তব্য, “বেশির ভাগ হলে এসি চালানোর কোনও খরচ নেই। এটা একটা বড় কারণ। তাই সে সব মালিকরা পেরেছেন হল খোলা রাখতে। আমরা পারিনি।”
তবে সূত্র বলছে, শহরতলির বেশ কয়েকটি হল খোলা থাকলেও পূর্ব মেদিনীপুর চণ্ডীপুরের এক সিনেমাহল ‘মণিহার’ কিছু দিন খোলার পরে হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, দর্শক হলমুখো হননি।
‘প্রিয়া’, ‘জয়া’ খুলছে ডিসেম্বরের ৪ তারিখ থেকে। কারণ, হলিউড ছবির আগমন। মুক্তি পাচ্ছে, ক্রিস্টোফার নোলানের ‘টেনেট’, মুক্তি পাচ্ছে ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’ও। অরিজিৎ (প্রিয়া-র মালিক) জানালেন, তিনি ‘টেনেট’ নিয়ে খুবই আশাবাদী। অন্যদিকে মনোজিতের তুরুপের দাস ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’।

 

 

 

‘টেনেট’ নিয়ে আশাবাদী ‘প্রিয়া’ সিনেমা হলের মালিক অরিজিৎ দত্ত।

বিদেশে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর সিনেমাহলে প্রথম মুক্তি পেয়েছিল ‘টেনেট’ ছবিটিই। দর্শকও নেহাতও কম হয়নি। তবে, কলকাতার বুকে হলিউড ছবি কেমন সাড়া পাবে, তা চিন্তার বিষয়।
অন্য দিকে ‘অজন্তা’, ‘ইন্দিরা’ ৪ তারিখে খুলবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে ঘোর সংশয়। বুধবার হল মালিকদের এক আভ্যন্তরীণ বৈঠক রয়েছে। আর সেখানেই ঠিক হবে ওই সব হলগুলির আগামী দিনের প্ল্যানিং। কিন্তু এত দিন ব্যবসা বন্ধ মানে তো বিরাট অঙ্কের লোকসান, কীভাবে সামাল দেবেন? শতদীপকে (অজন্তা সিনেমা হলের মালিক) এ প্রশ্ন করতেই তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “ডিস্ট্রিবিঊটাররা এখনও জানাননি সব হলে ‘টেনেট’ অথবা ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’-এর মতো ছবি দেওয়া হবে কিনা। ধরুন, আমি ৪ তারিখে হল খুললাম। এক সপ্তাহ আমার হলে ‘টেনেট’ চালানো হল। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যদি হলে ‘টেনেট’ চালানোর অনুমতি না থাকে সেক্ষেত্রে কী করব বলুন তো?”

এই গোটা ব্যাপারে ইম্পার (IMPAA)-র তরফে পিয়া সেনগুপ্তর বক্তব্য, “আমরা হল মালিকদের ব্যবসা চালু করতে বলতে পারি। কিন্তু কেউ যদি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন, সে ক্ষেত্রে ইম্পা আর কী করবে?”ধোঁয়াশা কাটছে না কিছুতেই। সিনেমা হল এবং তাঁকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর চিন্তা বাড়ছে ক্রমশ।

Next Article