‘হারামজাদা’, সরস্বতী পুজোর দিন প্রসেনজিতের ওপর কেন মেজাজ হারান অনামিকা

Feb 13, 2024 | 3:00 PM

Anamika Saha: আমাদের সময় এসব কোথায়? আমরা তো এসব ভাবতেই পারি না। আমাদের শেখানো হয়েছিল মন দিয়ে মা সরস্বতীর কাছে কিছুটা সময় বসতে। মায়ের কাছে হাতজোড় করে প্রার্থনা করতে, বলতে: 'মা আমায় বিদ্যে দাও, বুদ্ধি দাও। আমি যেন বড় হতে পারি, আমাদের আশীর্বাদ করো।'

হারামজাদা, সরস্বতী পুজোর দিন প্রসেনজিতের ওপর কেন মেজাজ হারান অনামিকা

Follow Us

জয়িতা চন্দ্র

অনামিকা সাহা, টলিপাড়ার ‘বিন্দুমাসি’। না, এটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়, তবে কেরিয়ারে কিছু-কিছু চরিত্র দর্শকদের মনে দাগ কেটে যায়, সেই সময় দাঁড়িয়ে ‘বিন্দুমাসি’র দাপট পর্দায় আচ্ছা-আচ্ছা ভিলেনকে কাত করে দিয়েছিল, অনামিকা সাহা বলেই তা সম্ভব। বেড়েছে বয়স, পাল্টেছে সময়, তবুও বিন্দুমাত্র কমেনি ‘বিন্দুমাসি’র অভিনয়ের ধার। আজও পর্দায় তিনি সমান তালে জাঁদরেল চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন (স্টার জলসায় সম্প্রচারিত ‘কথা’ সিরিয়ালে)। আবার পজিটিভ চরিত্রতেও নজর কাড়ছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় জীবন জুড়ে অজস্র স্মৃতি… ফেসবুক মেমোরিজ়ের পৃথিবীতে সে সব স্মৃতিতে কোনও ফিল্টার দিতে হয় না… এডিট-ও করতে হয় না কোনও অংশ। তাই-ই তো শৈশব থেকে কৈশোর, কোনও গল্পই ফিকে হতে দেননি তিনি। আজও সরস্বতী পুজো তাঁর কাছে নস্ট্যালজিয়া, কখনও স্কুলের স্মৃতি, কখনও টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োর স্মৃতি, জীবনের নানা পর্বে সরস্বতী পুজো ফিরে দেখলেন অভিনেত্রী। TV9 বাংলাকে জানালেন, এখন আবার সরস্বতী পুজো মানে প্রেম। তখন ছিল ভয়—পাশ করতে হবে।

সরস্বতী পুজোর কথা মাথায় এলেই কোন ছবিটা ভেবে ওঠে?

সে তো আমাদের সময়ের সরস্বতী পুজো। তখন সরস্বতী পুজো মানে আমাদের কাছে দুর্গাপুজোর সমান। আমার মনে পড়ে, আমাদের প্রজন্মটার কাছে এই সরস্বতী পুজোর ফ্যাশন বলে তেমন কিছু ছিল না। তখন মায়ের শাড়ি গুটিয়ে পরা, সেফটিপিন দিয়ে ব্লাউজ পরাতেই খুশি। বিশ্বাস করুন, সাত দিন আগে থেকে চোখে ঘুম নেই। ঠাকুর দেখব, পুজো দেব, অঞ্জলি দেব, মন দিয়ে মন্ত্র পড়তাম। সেটা মুখস্থও থাকত। একসঙ্গে সকলে মিলে যখন সেই মন্ত্রটা বলতাম, গমগম করত পুজো ঘর। তখন দোয়াত-কলম দেওয়া হতো। সকলেই নিয়ে আসত। দোয়াত থাকত তিনটে, তার মধ্যে কলম দেওয়া হতো। মজার বিষয় হল, সেটা আমরা কপালে নিয়ে মন্ত্র পড়তাম।

এখনকার সরস্বতী পুজোয় সেই স্বাদ পান?

আরে না, না। একেবারেই না। আমরা তো সরস্বতী পুজোর দিন সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। খুব ছোট-ছোট আবদার। যেমন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কুল পাওয়া, আমরা তো কুল খেতাম না। সরস্বতী পুজোর দিন থেকে ছাড়পত্র পাওয়া যেত। সেদিন মা নুন-চিনি-কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মেখে দিত, সেটাই খেতাম। এখন সে সব স্বপ্নের মতো মনে হয়। আর এখনকার দিনে ছেলে-মেয়েদের দেখি, মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। ঘুরতে-ঘুরতে মোবাইল ঘাঁটবে, নেটে-ই (Internet) তো নজর। রাস্তার মাঝে রিলস (Reels) বানাবে, হিন্দি গান চালিয়ে নাচবে, এসবই এখনকার সরস্বতী পুজো। আমাদের সময় এসব কোথায়? আমরা তো এসব ভাবতেই পারি না। আমাদের শেখানো হয়েছিল মন দিয়ে মা সরস্বতীর কাছে কিছুটা সময় বসতে। মায়ের কাছে হাতজোড় করে প্রার্থনা করতে, বলতে: ‘মা আমায় বিদ্যে দাও, বুদ্ধি দাও। আমি যেন বড় হতে পারি, আমাদের আশীর্বাদ করো।’

তাহলে পোশাক নিয়ে খুব একটা মাতামাতি ছিল না আপনাদের?

এখন তো দেখি ছোট-বড়-মাঝারি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। ব্লাউজও সব মানানসই বিক্রি হচ্ছে। বাবা-মা সেগুলো কিনে এনে দিচ্ছেন, কেউ-কেউ তা পছন্দ করে পরে, কেউ-কেউ আবার পরেই না। জিনস পরেই বেরিয়ে পড়ছে। নতুন প্রজন্ম এসবের ধার ধারে না। আমরা সকাল সকাল উঠেই কাঁচা হলুদ খেয়ে, গায়ে মেখে স্নান করতাম। সে দিন ভাল করে শ্যাম্পু করতাম। আর সারা দিন চুল খোলা রাখতাম।

আর আপনাদের সময় সরস্বতী পুজোর প্রেম? 

প্রেম হতো না, এমনটা বলব না। তবে তখনকার দিনের প্রেম এত ঘন ঘন ব্যক্তি পাল্টে যেত না। প্রেম কেউ করছেন, মানে করছেন। সরস্বতী পুজো মানেই যে কাউকে ভাল লেগে গেল, এসবের চল তখন ছিল না।

কর্ম জীবনে পা রেখে সরস্বতী পুজো কি সঙ্গে চলল? না হারিয়ে গেল? 

হারাবে কেন, উল্টো আরও বড় হয়ে উঠল। আমি তো কলেজের প্রথম বর্ষে থাকতে থাকতেই অভিনয়ে এসেছিলাম। তাই অভিনয় জগতেই বরং বেশি পাওয়া, কলেজে যত না পেয়েছি। সরস্বতী পুজোর দিনে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বড় আয়োজন হতো। এখনও হয়। এই দেখুন না, একগাদা বিল পাচ্ছি। আমি মজা করে বললামও, ‘এই এতগুলো চাঁদা তো আমরা কোনওদিনও দিইনি। আমরা একটাই দিতাম, টেকনিশিয়ানে (টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো)। সেখানে বসিয়ে খাওয়ানো হতো’। সে যে কী আনন্দ, সমস্ত শিল্পীরা সেদিন আসতেন। যাঁরা শুটিং করতে আসতেন, তাঁরা যেমন খেতেন, যাঁদের শুটিং থাকত না, সেদিন তাঁরাও এসে যেতেন সময় করে। বেঞ্চ পেতে খাওয়া চলত, সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দীপঙ্কর দে, রঞ্জিত মল্লিক সকলে মিলে হাত লাগাতেন।

চাঁদা কত দিতে হত? 

দেখুন তখন তো টাকার মূল্য বেশি ছিল। প্রথম দিকে আমি যে ধরনের শিল্পী ছিলাম ১০০ দিলেই চলত। তারপর যখন শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ হিট হল, তখন টাকার দাবি বাড়ল। তখন সবাই বলত, ‘একটু বাড়িয়ে দিন না দিদি, আপনার ছবি তো হিট করছে।’ দিতে শুরু করলাম ৩০০ টাকা। এখন ১০০০ টাকাতেও হয় না গো। কালই দিলাম (NT 1-এ, প্রতিবেদককে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগের দিন) ছেলে গুলো হেঁসে বলে, ‘আরও একটু বেশি আশা করেছিলাম দিদি’। আসলে আমি তো জানতাম না, সেদিন বিল দেবে, যা ছিল তাই দিয়েছি।

সরস্বতী পুজোর কোনও বিশেষ স্মৃতি আছে…? 

আছে তো, একবার  আমার এক ছবির মহরৎ পড়ল সরস্বতী পুজোর দিন। সেই ছবিতে ছিল বুম্বা (প্রজেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আরও অনেকে। সেদিন আমরা সবাই ছিলাম সেটে। সেদিন মজার বিষয় হয় কী, আমার একটা দৃশ্য শুট করেই মহরৎ হবে স্থির হল। আর সেই চরিত্রটা ছিল বেশ ঝাঁঝাঁলো। মানে আমি যেমনটা করে থাকতাম। এর আগে পুজো হল, খাওয়া দাওয়া হল। তারপর মেকআপে বসলাম আমি। কলটাইম ছিল ৫টা। আমার সংলাপটা ছিল, ‘হারামজাদা, বুদ্ধি আক্কেল জীবনে হবে না? এমন একটা মেয়ের সঙ্গে তুই মিশছিস?‘ আমি শটটা দিলাম, সেটা ‘ওকে’ হল। আমি এটা বুম্বার উদ্দেশে বলেছিলাম। শটটা হয়ে যাওয়ার পর বুম্বা আমায় বলল: ‘ছিঃ, ছিঃ, অনামিকাদি, আজ সরস্বতী পুজোর দিন তুমি এভাবে আমায় গালাগাল করলে?’ আমি না, সেই মুহূর্তে ভেবেছিলাম ‘ও সত্যিই হয়তো মন থেকে বলছে’।

আপনি এখন কী করেন সরস্বতী পুজোর দিন? 

আমার বাড়িতে তো পুজো হয়। আমার মেয়ে হওয়ার পর থেকে শুরু করি। ২৬ বছর হল। ঠিক মেয়ে হওয়ার পর নয়, ও যখন একটু বড় হল, ৯-১০ বছর বয়স হল, তখন আমায় একবার প্রশ্ন করল, ‘মা, আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পুজো হবে না?’ তখন থেকেই শুরু। আজও হয়। তবে এখন আর আগের মতো পারি না। তবে পুজো হয়।

 

Next Article