বলিপাড়ায় মন্দা! কেন বক্স অফিসে প্রভাস, আল্লু অর্জুনদের রমরমা?
প্রাক করোনা এবং করোনা পরবর্তী সময়ের মাঝে দুটো বছরের ফারাক। মাত্র ২৪টা মাসেই বদলে গেল কত কিছু। এই ভাবেও যে যাপন করা যায় এর আগে কি কেউ ভাবতে পারত? করোনা ওলটপালট করে দিয়েছে সব কিছু। যেমন ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতীয় ছবির বক্স অফিসে দেখা গিয়েছে খান থেকে কাপুরদের রাজত্ব। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময় চিত্রটাই পুরো যেন বদলে গিয়েছে। নেপথ্য়ে কী কারণ?
প্রাক করোনা এবং করোনা পরবর্তী সময়ের মাঝে দুটো বছরের ফারাক। মাত্র ২৪টা মাসেই বদলে গেল কত কিছু। এই ভাবেও যে যাপন করা যায়, এর আগে কি কেউ ভাবতে পারত? করোনা ওলটপালট করে দিয়েছে সব কিছু। যেমন ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতীয় ছবির বক্স অফিসে দেখা গিয়েছে খান থেকে কাপুরদের রাজত্ব। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময় চিত্রটাই পুরো যেন বদলে গিয়েছে। খান, কাপুরদের জায়গায় এখন আল্লু অর্জুন, জুনিয়র এনটিআর, যশ, প্রভাসদের রমরমা। উল্টে বক্স অফিসে নিজেদের জায়গা করতে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে বলিপাড়ার তারকাদের। ‘বাহুবলী’, ‘পুষ্পা’, ‘আরআরআর’-এর মতো ছবিগুলো বদলে দিয়েছে বাণিজ্যিক ছবির সংজ্ঞা। ফলে দর্শকের প্রত্যাশাও পাল্টেছে নির্মাতাদের থেকে। মূলধারা আর আঞ্চলিক ছবির পার্থক্য অনেক দিন ধরেই ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। করোনা পরবর্তী সময় সব কিছুই যেন মিলিয়ে মিশিয়ে দিয়েছে। যশ, প্রভাস, আল্লুদের পাল্লা এখন অনেকটাই ভারী। যদিও এখন দুই ইন্ডাস্ট্রির আদান প্রদান বেড়েছে অনেকটাই। ‘কানতারা’, ‘আারআরআর’, ‘পুষ্পা’র সাফল্য এই ইঙ্গিতই দেয়। বলিউড ছবির মন্দার বাজারে কেন দক্ষিণী ছবির জয়জয়কার? নেপথ্যে রয়েছে কী কারণ?
করোনা পরবর্তী সময় বদলেছে দর্শকের স্বাদ
করোনা সত্যিই সাধারণের জীবনে অনেক ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এই সময়ই মানুষ উপলব্ধি করেছে কী ভাবে নিজের সঙ্গে সময় কাটানো যায়। অল্পতেও যে জীবন কাটানো যায় সেই শিক্ষাই দিয়েছে এই সময়। বিনোদন জোগাতে সিনেমা হলের পরিবর্তে মানুষ সন্তুষ্ট হয়েছেন অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। তাই তো দর্শক একটা গণ্ডির মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ছবি থেকে ওয়েব সিরিজ সব কিছুই দর্শক পেয়েছেন নিজের হাতের মুঠোয়। আর এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিই দর্শকের জন্য খুলে দিয়েছে একটা অন্য জগত্। অনেকেই মনে করেন দক্ষিণ ভারতীয় নির্মাতাদের সৃজনশীলতার ভাষা একেবারে স্বতন্ত্র। তাঁদের গল্প বলার একটা আলাদা ভঙ্গি রয়েছে। চরিত্র বিন্যাস থেকে দৃশ্যায়ন সব কিছু দর্শককে একটা আলাদা ঘোরের মধ্য়ে রাখে। যেখানে বলিউডের সিনেমায় চোখ রাখলে দেখা যায় সুন্দরী নায়িকা। সুপুরুষ নায়ক। সব দিকে থেকে ‘পারফেক্ট’ তাঁরা। অনেকেরই মনে হয় সেই বড় পর্দা হোক কিংবা মুঠোফোন— সর্বত্র এমন ঝাঁ চকচকে দৃশ্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত দর্শক। দক্ষিণী ছবির কাহিনি এই সাজানো পৃথিবীতে অনেকটা যেন অক্সিজেনের মতো। যেখানে খুব সহজে পর্দার কাহিনি, নায়ক-নায়িকার মধ্য়ে নিজেদের খুঁজে পান ক্যামেরার ওপারে থাকা মানুষ। যে কারণে অনেক বড় বাজেটের হিন্দি ছবিকেও বোল্ড আউট করছে দক্ষিণ।
কোন জাদুতে জমি পোক্ত হল দক্ষিণী সিনেমার!
যে কোনও হিন্দি ছবিতে দর্শক খোঁজে নয় রোম্যান্স, নয় অ্যাকশন কিংবা ভয়। এখানেই বলিউডকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিচ্ছে দক্ষিণ। তাঁদের মতো করে দর্শককে ভাবতে বাধ্য করছে। তা ‘কানতারা’ হোক কিংবা ‘কৈথি’ এই ধরনের ছবি রীতিমতো দর্শককে ভাবতে বাধ্য করেছিল। যে এভাবেও গল্প বলা যায়। সাধারণত বেশির ভাগ ইন্ডাস্ট্রিতেই তা সে বলিউড হোক কিংবা বাংলা চলচ্চিত্র জগত্ সব সময় বাজেটকে একটা বড় কারণ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। দক্ষিণী প্রযোজক থেকে পরিচালক কেউই বাজেটের জন্য ছবি তৈরিতে সমঝোতা করতে রাজি নন। দক্ষিণের সাফল্য যেন তারই প্রমাণ। বর্তমান ফিল্ম ক্রিটিকদের মতে এখনও দক্ষিণী ছবি এখনও নিজেদের কোনও নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলেনি। তাই নিজেদের মতো করে ফুলে ফেঁপে উঠছে। নির্মাতাদের কাছে নায়ক-নায়িকা যদি রাজ্যের রাজা-রানি হন তাহলে রাজ্য হল ছবি গল্প। তবে দক্ষিণকে টেক্কা দিয়ে বলিউডও যে কম চেষ্টা চালাচ্ছে না তার প্রমাণ হল ‘দৃশ্যম ২’, ‘কবীর সিং’-এর মতো ছবি।
ছবির নির্মাতাদের থেকে দর্শকের প্রত্যাশা
একটা সময় ছিল ইংরেজি, তেলুগু,তামিল ছবির রিমেকই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতেন দর্শক। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে দর্শক এখন আগের থেকে অনেকটাই স্মার্ট। হাতের মুঠোয় এখন গোটা বিশ্ব। ফলে জানার পরিসর বৃহত্ হয়েছে। দেশ বিদেশের ছবি দেখার প্রতি আগ্রহও বেড়েছে সকলের। শুধু ইংরেজি নয়, এখন দর্শকের হাতের মুঠোয় কোরিয়ান, জাপানি-সহ সব ধরনের সিনেমা। সাব-টাইটেলের সৌজন্যে কোনও ভাষার ছবি এখন আর বুঝতে অসুবিধা হয় না কারও। বরং কোন ইংরেজি গানের সুর কোন হিন্দি গানে ব্যবহার করা হয়েছে তা বোঝার কান তৈরি হয়েছে দর্শকের। অন্য দিকে ছবির ক্ষেত্রেও সেই একই বিষয়। দর্শক আর রিমেক ছবি দেখতে রাজি নন। কারণ, রিমেক ছবির আগে তৈরি হওয়া গল্পগুলো আগেই দেখে ফেলছেন অনেকে। তাই মাঝে বক্স অফিসে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বলিউডকে। যদিও ২০২৩ সালে জওয়ান, পাঠানের দৌলতে হারানো জৌলস কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে বলিউড। কিন্তু পথ এখনও অনেকটা বাকি। প্রভাস, আল্লু অর্জুনদের ক্যারিশ্মা ছাপিয়ে যাচ্ছে বরুণ ধওয়ান, টাইগার শ্রফদের প্রজন্মকে। তাই তো এখনও শাহরুখ, সলমন, হৃত্বিকদেরও উপরই বাজি ধরছেন হিন্দি ছবির নির্মাতারা। দক্ষিণী ছবির রমরমায় বলিপাড়ার হাল কি ধরতে পারবেন টিনসেন টাউনের নতুন প্রজন্ম। শুধুই এখন সময়ের অপেক্ষা।