আমরা অনেক সময় এমন অনেক শারীরিক লক্ষণ এড়িয়ে যাই, যা পরবর্তী সময়ে বড় রোগ ডেকে আনে। ক্লান্তি, ঝিমুনিভাবের মতো লক্ষণগুলো সাধারণ এবং শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হয় বলেই মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু এই ‘সাধারণ’ উপসর্গই বড় রোগের ইঙ্গিত দেয়। ঠিক যেমন খিদে না হওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, সারাদিন ধরে ঝিমুনিভাব এগুলো হতে পারে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার লক্ষণ।
লোহিত রক্ত কণিকা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের ফুসফুস থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। সুতরাং, শরীরে লোহিত কণিকার ঘাটতি হলে জানবেন দেহে আয়রনের অভাব তৈরি হয়েছে এবং রক্তাল্পতার মতো রোগ দেখা গিয়েছে। আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে এবং সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে। সুতরাং, দেহে আয়রনের ঘাটতি তৈরি হলে, রক্তাল্পতার উপসর্গগুলো জোরাল হতে শুরু করে।
লাল লোহিত কণিকার মাত্রা কমে গেলেই দেহে রক্তাল্পতার উপসর্গগুলো দেখা দেয়। তখন রক্ত দেহে সব অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহও করতে পারে না। তখনই শরীরে ক্লান্তি দেখা দেয়। শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ে। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজকর্ম করতেও সমস্যা হয়। এমনকী ঘুমও ঠিক করে হয় না। তাই রক্তাল্পতার এই প্রাথমিক লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না।
রক্তাল্পতার আরও একটি লক্ষণ হল, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন। অর্থাৎ হার্টবিট অত্যধিক বেড়ে যায়। আসলে আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা লোহিত রক্তকণিকার প্রোটিন, যা শরীরে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। যখনই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়, তখনই হৃৎপিণ্ডকে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত শক্ত পাম্প করতে হয়। তখন হার্ট বিটও অস্বাভাবিক হয়ে যায়। আপনি এই উপসর্গকে হৃদরোগের লক্ষণ ভেবে ভুলও করতে পারেন। কিন্তু কখনওই এড়িয়ে যাবেন না।
ন্যাশনাল হার্ট, লাং এবং ব্লাড ইনস্টিটিউটের মতে, যাঁদের শরীরে প্রাথমিক পর্যায়ে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাঁরা সাধারণত রক্তাল্পতার লক্ষণগুলো চিনতে পারে না। কিন্তু রক্তাল্পতার অন্যতম উপসর্গ হল শ্বাসকষ্ট। নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হলে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিন। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই লক্ষণগুলো ছাড়াও এমন বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে, যা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। যেমন ফ্যাকাশে ত্বক, চুল পড়া, শুষ্ক ত্বক, ভঙ্গুর নখ, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, বারবার জিভে ঘা হওয়া, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। এই লক্ষণগুলো দেখেও আপনি বুঝতে পারবেন যে রক্তাল্পতায় আক্রান্ত কিনা। মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তা-ই ভুলেও এড়িয়ে যাবেন না এই লক্ষণগুলো।