কোভিডের মতই বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মাঙ্কিপক্সের প্রকোপ। এখনও পর্যন্ত ৮০ টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স। প্রচুর মানুষ আক্রান্তও হয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত। যে ভাবে মাঙ্কিপক্সের আতঙ্ক বাড়ছে তাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই মাঙ্কিপক্সকে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা হিসেবে জারি করেছে। মাঙ্কিপক্সের স্থায়ী কোনও চিকিৎসা নেই। নেই ভ্যাকসিন বা ওষুধ। তবে কিছুদিন আগে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, সাধারণ পক্সের ভ্যাকসিনেই কাজ হচ্ছে মাঙ্কিপক্সের। যদিও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই জানাননি চিকিৎসকেরা। প্রথমদিকে বলা হয়েছিল মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের মূল কারণ হল যৌন সংসর্গ।
যদিও পরবর্তীতে এই তত্ত্বে মান্যতা দেননি চিকিৎসকেরা। বরং গবেষণা চলছে কী ভাবে ছড়ায় এই মাঙ্কিপক্স। বর্তমানে গবেষকরা এই রোগের আরও নতুন কিছু উপসর্গ খুঁজে পেয়েছেন। যা আগে দেখা যায়নি। আদৌ এই সব উপসর্গ মাঙ্কিপক্সেরই কিনা সে নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। জ্বর, গলাব্যথা, ত্বকের সংক্রমণ, টনসিল এসব মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের লক্ষণ। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণা থেকেই উঠে এসেছে এই তথ্য।
আমেরিকায় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ১৯৭ জনের উপর এই সমীক্ষা প্রথম করা হয়। গবেষণা চলাকালীনই দেখা যায় মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ পরিবর্তিত হচ্ছে । সেই গবেষণাতেই দেখা যায় ৭১ জন রোগীর ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথা হচ্ছে, ৩১ জনের ক্ষেত্রে ইডিমার সমস্যা হচ্ছে, ২৭ জন ভুগছেন মুখের ঘায়ে, ২২ জনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত এবং ৯ জনের ক্ষেত্রে টনসিলের সংক্রমণ চরম পর্যায়ে গিয়েছে। সমকামী এবং উভকামীদের মধ্যেই প্রথম দিকে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলি প্রকট ছিল। এবং যাঁরা নিয়মিত ভাবে যৌনসংসর্গ করতেন তাঁদের মধ্যেও ছিল সংক্রমণের প্রবল সম্ভাবনা। মাঙ্কিপক্স থেকে যাঁদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত হচ্ছে তাঁদের পরবর্তীতে মেলানোমার মত প্রাণঘাতী ক্ষতও তৈরি হচ্ছে। এমনকী সিফিলিস এবং অন্যান্য যৌনরোগের লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছে।
মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে টনসিলের সমস্যাও থাকছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সেই সংক্রমণ আরও গুরুতর আকার ধারণ করছে। গলার টনসিল পেকে সেখান থেকে সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যা চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকদের।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে মাঙ্কিপক্স প্রাথমিক ভাবে ছড়ায় ত্বক, শরীরী ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা, পোশাক, ব্যবহার করা তোয়ালে, আলিঙ্গন, চুম্বন, বইয়ের পাতা হাঁচি, কাশির মাধ্যমেই ছড়ায় এই মাঙ্কিপক্স। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং তাঁর স্পর্শ এড়িয়ে চলা ভীষণ ভাবে জরুরি।