ম্যাঙ্কিপক্স (Monkeypox Outbreak) নিয়ে তোলপাড় সারা বিশ্ব। ইতিমধ্যেই ৫১ টি দেশে মিলেছে ম্যাঙ্কিপক্সে আক্রান্তর খবর। ইউরোপ ও আমেরিকাতেও ম্যাঙ্কিপক্সে আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে বলেই জানা যাচ্ছে। সাধারণভাবে কোনও ব্যক্তি ম্যাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা জানার জন্য রয়েছে পিসিআর টেস্ট (PCR Test)। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির মুখের লালা কিংবা গায়ের ক্ষত থেকে নমুনা নিয়ে পিসিআর করা হয়। পিসিআর করে রোগীর দেহ থেকে মেলা ভাইরাসটি অর্থোপক্স ভাইরাস পরিবারের কি না তা দেখা হয়। উল্লেখ্য, এই একই পরিবারের ভাইরাস হল স্মলপক্স (Smallpox)। রিপোর্ট পজিটিভ এলে এরপর ভাইরাসটি মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস কি না তা নিশ্চিত করার জন্য রিয়েল টাইম পিসিআর করা হয়।
তবে রিয়েল টাইম পিসিআর পরীক্ষায় রেজাল্ট আসতে একটু বেশি সময় লেগে যায়। তাই দ্রুত এই রোগ নির্ণয় করা গেলে রোগীকে তাড়াতাড়ি আইসোলেশনে পাঠানো সম্ভব হবে। ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও অনেকখানি প্রশমিত হবে। এমনকী রোগীর চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সময়ও মিলবে বেশি। এই সমস্ত কথা চিন্তা করে ইউরোপে নির্মাণ করা হচ্ছে এক বিশেষ পরীক্ষা ব্যবস্থা যা ১০ মিনিটে ম্যাঙ্কিপক্স ভাইরাস চিহ্নিত করতে পারবে!
জানা গিয়েছে বিশেষ পরীক্ষা ব্যবস্থাটি ব্রিটেনের সিওর স্ক্রিন ডায়াগনোস্টিক সংস্থা এবং ইয়র্কশায়ারের টেস্টকার্ড সংস্থার যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে পরীক্ষা ব্যবস্থাটি নিয়ে। ট্রায়াল চালানো হচ্ছে লন্ডনের গায়েজ অ্যান্ড সেন্ট থমাস এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট-এ।
কীভাবে কাজ করবে পরীক্ষা ব্যবস্থাটি?
ম্যাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত সন্দেহ করা হচ্ছে এমন ব্যক্তির বা ম্যাঙ্কিপক্সের মতো উপসর্গ রয়েছ এমন মানুষের আঙুল থেকে এক বিন্দু রক্ত নিয়ে হবে এই পরীক্ষা। পরীক্ষার মাধ্যমে ১০ মিনিটেই জানা যাবে ম্যাঙ্কিপক্স ভাইরাসের অস্তিত্ব সম্পর্কে।
কেন এই পদক্ষেপ জরুরি?
ওয়াল্ড হেলথ অর্গ্যানাইজেশন (হু) বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, কিছু বিশেষ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ম্যাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়লে তা তাদের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে সন্তানসম্ভবা মহিলা ও বাচ্চাদের কথা বলা হয়েছে। এছড়া তালিকায় রয়েছে সেই সমস্ত ব্যক্তিরা যাঁদের কোনও অসুখের কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে।
ম্যাঙ্কিপক্সের লক্ষণ
আক্রান্তের জ্বর আসে। মাথা ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা, শরীরে দুর্বল বোধ এবং লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়াও হল মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ। জ্বর আসার ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ত্বকে র্যা শ বেরয়। কিছু ক্ষেত্রে র্যা শ ফোসকার আকার নিতে পারে ও তা ফেটে যাওয়ার ভয়ও থাকতে পারে। উপসর্গ ২ থেকে ৪ সপ্তাহ অবধি থাকতে পারে। গোটা সময় ধরে সংক্রামিত ব্যক্তি রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখেন।
ম্যাঙ্কিপক্স ও ভ্যাকসিন
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গ্যানাইজেশনের জুনোটিক ডিজিজ-বিভাগের নেতৃস্থানীয় মহামারী বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে স্মলপক্স ভ্যাকসিন প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্যকরী। জাতিসংঘের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা এমন একটি কার্যকরী উপায় বের করতে চলেছেন যাতে ন্যায়সঙ্গতভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা যায়। ব্রিটেন এবং আমেরিকার তরফে জাতিসংঘের কাছে প্রস্তাব এসেছে যে তারা তাদের কাছে থাকা স্মলপক্স ভ্যাকসিন দিতে পারে। কারণ এই ভ্যাকসিন ম্যাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও কার্যকরী। এদিকে হু-এর পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত ম্যাঙ্কিপক্সকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা না হলেও সামগ্রিক অবস্থার দিকে নজর দিয়ে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন, একেবারে চিন্তামুক্ত হওয়ার অবকাশ নেই।