নভেম্বরের শেষে ওমিক্রন ( Omicron) প্রথম ধরা পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপর নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ( South Africa) তরফে রিপোর্ট করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) পরবর্তীতে এই ভ্যারিয়েন্টকে কোভিডেরই নয়া ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫৫টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বলা যায় সুনামি ঢেউয়ের আকারে আছড়ে পড়ে ওমিক্রন। তবে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই কিন্তু ক্রমস কমতে শুরু করে এই পজিটিভিটির রেট। তবুও দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় তা ভাবাচ্ছিল চিকিৎসকদের। তবে কোভিড পজিটিভিটি রেটও আগের তুলনায় কমেছে অনেকটাই। আগের ৭.৪২ শতাংশ থেকে সেই রেট কমে এসেছে ৭.২৫ শতাংশতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে যে বুলেটিন প্রকাশিত হয়েছে তাতেই বলা হয়েছে সুস্থতার হার আগের তুলনায় বেড়েছে অনেকখানি, ৯৬.১৬ %। যদিও গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুর খবর এসেছে ৮৬৫ জনের। এখনও পর্যন্ত দেশজুড়ে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫,০২,৮৭৪-এ। তবে কি আমরা সংক্রমণের এই শিখর পেরিয়ে এলাম? নিউজ নাইনের তরফে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র কনসাল্টট্যান্ট পালমোনোলজিস্ট এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ রাজেশ চাওলার কাছে। তিনি জানিয়েছেন, হয়তো আমরা খারাপ সময় পেরিয়ে এলাম। কিন্তু কোভিড অপ্রত্যাশিত।
‘মার্চের মধ্যে সংক্রমণ কমে যাবে আরও কিছুটা। কিন্তু এখনই ভাইরাসের অদৃশ্য হয়ে যাবার কোনও রকম সম্ভাবনা নেই। এটি মরশুম ভেদে হয় এমন কিন্তু নয়। কাজেই শীত হোক বা গ্রীষ্ম-সব সময়ই তা থাকে সংক্রমণের শীর্ষে। SARS CoV-2 কোভিডের এই ভাইরাসের কিন্তু যে কোনও সময় মিউটেশন ঘটতে পারে। ফলে সংক্রমণের জন্যে কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এবং কোভিডের ভাইরাস মিউটেশনের ফলে নতুন নতুন রূপ নিয়ে হাজির হয় আমাদের কাছে। ফলে তা কতদিন স্থায়ী হবে আর কী কী জটিলতা নিয়ে আসবে সেই বিষয়ে কিন্তু আমাদের মধ্যেও স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। চিকিৎসকরা, বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়টি নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছেন। তবে এই কোভিড ভাইরাসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে যাবে বেশকিছুদিন। এবং কিছুক্ষেত্রে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উদ্বেগজনকও’।
দিল্লির সাফদারজং হাসপাতালের চিকিৎসক নিখাল পাণ্ডাইয়া যেমন বলেন, ‘আমাদের কোভি়ডকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে। ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়তো থেকে যাবে। কিন্তু তা তেমন ভাবে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলবে না। আগামী দিনে হয়তো এই ভাইরাসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরও বাড়বে। হয়ত তেমন চিকিৎসার প্রয়োজন পড়বে না কিন্তু চারিদিক থেকেই আর্শ্চর্য কিছু সমস্যার কথা শোনা যেতে পারে। এই সব কিছুর জন্যই কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে’।
সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন অনুসারে, যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে কিন্তু একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। স্টকহোমের গবেষকরা ১০০ জনের উপর একটি সমীক্ষা চালান। সেখানেই দেখা গিয়েছে ২০২০ সালের মার্চ মাসে যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের অনেকেরই ক্ষেত্রে ঘ্রাণশক্তির সমস্যা হয়েছে। ১৮ মাস পরেও তাঁরা পুরোপুরি ঘ্রাণ ফিরে পাননি। এমনকী সুস্থ হয়ে যাবার ৬ মাস পর্যন্ত কোভিডের নানা উপসর্গ ছিল তাঁদের শরীরে। যাঁরা ২০২১ সালের মে মাসে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনও পুরোপুরি খাবারের স্বাদ পাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে সর্দি, কাশি, গলা ব্যথার সমস্যা লেগেই থাকছে। এইমসের চিকিৎসক ডাঃ এস শ্রীনিবাসন যেমন বলেন, ‘অনেকেই লং কোভিডের সমস্যায় ভুগছেন। অনেকের ওজন কমে যাচ্ছে। কিন্তু এই সমস্যা কতদিন পর্যন্ত থাকবে তা কিন্তু নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরাও’।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
আরও পড়ুন: Coronavirus: অতিমারীতে অবসাদে ভুগছেন গর্ভবতী মায়েরা, এমনটাই বলছে সমীক্ষা!