Monsoon Health Tips: বর্ষাকাল মানেই ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, কী বলছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক?
Expert Advice: মল পরীক্ষা করে তবেই সংক্রমণের ওষুধ দেওয়া হয়। কোনও ইনফেকশন হলে তখন এই মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট খান । নইলে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক
আকাশ মেঘলা, রোদের তেমন জোর নেই। কিন্তু কাটছে না গুমোট গরম। সঙ্গে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি, ঘাম এসব তো আছেই। উত্তরবঙ্গে ইতিমধ্যেই প্রবেশ করেছে বর্ষা। প্রবল বর্ষণের জন্য জারি করা হয়েছে কমলা সতকর্তকাও। তবে আপাতত বৃষ্টির দেখা নেই দক্ষিণবঙ্গে। আশা, পরের সপ্তাহের মধ্যেই বর্ষা আসবে শহরে। বর্ষাকাল মানেই জল জমা, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি। সঙ্গে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া আর পেটের সব অসুখ তো আছেই। ছোট থেকে বড় এই বর্ষায় সকলকেই সবথেকে বেশি ভুগতে হয় পেটের সমস্যায়। ফুড পয়জ়ন, ডায়রিয়া, বদহজম এসব লেগেই থাকে।
খাবারে একটু এ দিক থেকে ও দিক হলেই মুশকিল। বাইরের খাবার ও খাওয়ার সময়ের কারণে হওয়া বদহজমও কোপ বসাতে পারে যখন তখন। কৃমির প্রবণতা থাকলে পেটের যে কোনও সমস্যায় আরও কাহিল হয়ে পড়ে শিশুরা। তাই বর্ষায় বাড়ির খুদে সদস্যদের পেটের খেয়াল রাখাও বিশেষ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পেটের নানা সমস্যা এড়াতে কী-কী করণীয়।
এ বিষয়ে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের সঙ্গে। বর্ষায় পেটের অসুখ থেকে বাড়াবাড়ি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। সেই সঙ্গে ডঃ বিশ্বাস বিশেষ সতর্ক থাকতে বলেছেন মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং সাপের উপদ্রবের হাত থেকে। এছাড়াও বর্ষাতে পোকামাকড়ের উৎপাতও বাড়ে। তাই সতর্ক থাকা একমাত্র কর্তব্য।
বর্ষাকালের সাধারণ পেটের সমস্যা কী কী?
বর্ষাকালের সাধারণ পেটের সমস্যার মধ্যে রয়েছে পেট খারাপ, আন্ত্রিক, আমাশয়, ডায়রিয়া। এছাড়াও জলবাহিত যে কোনও রোগের প্রকোপও বেশি থাকে। হেপাটাইটিস A-হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ভাইরাল গ্যাস্ট্রোঅন্টেরাইটিস (Viral Gastroenteritis)-এর সমস্যা হয় বেশি। পেটে সংক্রমণ আর জ্বর এর প্রধান উপসর্গ। সালমোনেলা, ই-কোলাই, শিগেলা, ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিযার প্রকোপ বাড়ে বর্ষায়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বমি-পায়খানার জন্য দায়ী রোটা ভাইরাস আর বড়দের ক্ষেত্রে নরোভাইরাস।
কেন এই সময়েই বাড়ে পেটের সমস্যা ?
বর্ষাকালে পেটখারাপের সমস্যার মূল কারণ হল জল। এই সময় জলবাহিত রোগের প্রকোপ অনেক বেশি থাকে। অনেক জায়গায় বন্যা হয়। সেই সঙ্গে যদি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা না হয়, তাহলেই বাড়ে সমস্যা। তাই পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পরিষ্কার খাবার খাওয়া জরুরি। বারবার ORS, নুন-চিনির জল খান।
পেট খারাপ হলে প্রথমেই কি ওষুধ খেতে হবে?
অনেকেরই অভ্যাস আছে পেট খারাপ বা বার দুই-তিনেক পাতলা পায়খানা হলেই মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট খাওয়ার। কেউ আবার ওষুধ দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে আসেন। এই দুই অভ্যাসই খুব খারাপ। মল পরীক্ষা করে তবেই সংক্রমণের ওষুধ দেওয়া হয়। কোনও ইনফেকশন হলে তখন এই মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট খান। নইলে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। পরে যখন গুরুতর সমস্যা হবে, তখন আর এই ওষুধে শরীর সাড়া দেবে না।
পেটখারাপ হলে প্রাথমিক স্তরে ORS খান। ছোট থেকে বড় সকলেই তা খেতে পারেন। লোপেরামাইড ট্যাবলেট দেওয়া হয় পেটের সমস্যায়। তবে চিকিৎসক না বললে এই ট্যাবলেট নিজে থেকে খাবেন না। পরামর্শ নিয়ে তবেই খান। বেশিবার বমি-পায়খানা হলে শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়াম-ক্লোরাইডের মাত্রা কমে যায়। এই ভারসাম্য বজায় রাখা ভীষণ জরুরি। এবং তা রাখতেই বারেবারে ORS খান।
এই সময় কী জল ফুটিয়ে খাওয়া উচিত?
বর্ষাকালে জল ফুটিয়ে খেতে পারলে সবচেয়ে ভাল। যদি না পারেন, তাহলে খেয়াল রাখুন যে জল খাচ্ছেন, তা যেন পরিষ্কার হয়। বোতল পরিষ্কার রাখুন। বাইরের জল এড়িয়ে চলুন। সব সময় নজর দিন পরিচ্ছন্নতার উপরে। বাইরের খাবারও এড়িয়ে চলুন। তবে চা খাওয়া যেতে পারে। যেহেতু তা সবসময় ফুটছে, গরম থাকছে।
বর্ষা পড়লেই কি পেট খারাপের ওষুধের কোনও কোর্স করে রাখা জরুরি?
একেবারেই না। যাঁদের ক্রনিক পেটখারাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ খেতে হবে। সংক্রমণ বুঝে ডাক্তারবাবু ওষুধ দেন। কারণ ছাড়াই নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা। জ্বর আর পেটখারাপের সমস্যা হলে প্রথমেই বারে বারে ORS, জল খেতে থাকুন। এরপর পরামর্শ নিন চিকিৎসকের। তিনি যে ভাবে চলতে বলবেন, যে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেবেন, তাই-ই খান।