Cholera Outbreak: কোভিড, ম্যাঙ্কিপক্সের পর এখন আবার কলেরা! জলবাহিত অসুখটির মহামারীর রূপ নেওয়ার আশঙ্কা কতখানি?

Water-borne Disease: দারিদ্রপীড়িত লেবাননে ইতিমধ্যেই কলেরা আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান মিলেছে। হিংসা জর্জরিত হাইতি ইতিমধ্যেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘কলেরা টাইম বোমের’ উপর। সেদেশে বেশিরভাগ হাসপাতালের অবস্থাই জীর্ণ কিংবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। সিরিয়াও ভুগছে কলেরা আতঙ্কে!

Cholera Outbreak: কোভিড, ম্যাঙ্কিপক্সের পর এখন আবার কলেরা! জলবাহিত অসুখটির মহামারীর রূপ নেওয়ার আশঙ্কা কতখানি?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 09, 2022 | 7:21 AM

কোভিড (COVID 19), ম্যাঙ্কিপক্সের (Monkeypox)পর এবার চোখ রাঙাতে শুরু করেছে কলেরার প্রাদুর্ভাব (Cholera Outbreak)। পৃথিবীর নানা দেশে ইতিমধ্যেই কলেরা ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ মিলছে। ১৯৯৩ সালের পর চলতি বছরে লেবাননে প্রথম কলেরা রোগীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে লেবাননের যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিরিয়া ইতিমধ্যেই কলেরার প্রাদুর্ভাবে সন্ত্রস্ত। তারা অসুখটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে! ইতিমধ্যেই সেদেশে কলেরার কারণে ৩০ টি প্রাণহানির ঘটেছে বলেই খবর। আরও একটি হিংসাকবলিত দেশ হাইতিও হয়ে উঠেছে কলেরা টাইম বোম। প্রশ্ন হল কলেরা কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়ারিয়া উপসর্গবিশিষ্ট অসুখ হল কলেরা। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে কয়েকঘণ্টার মধ্যে রোগীর প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। সুষ্ঠু পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার ঘাটতি, জীবাণুমুক্ত জলের অভাব এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার অপ্রতুলতাযুক্ত দেশে কলেরা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আর তার ভয়াল দৃশ্য চাক্ষুষ করছে একাধিক দেশের নাগরিকরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসাস এক ট্যুইটে জানিয়েছেন, ‘দ্বন্দ্ব এবং দারিদ্রকে ভিত্তি করেই কলেরা বহরে বেড়ে ওঠে। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনও কলেরার উপর প্রভাব ফেলেছে। বন্যা, সাইক্লোন, খরার মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলিও শুদ্ধ পানীয় জলের অভাব তৈরি করেছে। একইসঙ্গে সৃষ্টি করেছে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। কলেরার ঘটনা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছিল। তবে গত কয়েকবছর ধরে আমরা দেখতে পাচ্ছি উদ্বেগজনকভাবে কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যে সমস্ত এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাব থাকে, একটানা হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে সেখানেই মানবজাতির ভবিষ্যৎ পড়ে সঙ্কটের মুখে। এমনকী সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য যে সাহায্য পৌঁছনো দরকার তাও পাঠানো সম্ভব হয় না।

বিভিন্ন দেশে যেভাবে কলেরা ছড়াচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেখানে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া দরকার। আর্তকে দেওয়া দরকার ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড ও অ্যান্টিবায়োটিক। সমস্যা হল, কোনও দেশে শক্তপোক্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো না থাকলে সাধারণ অসুখও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। যেমনটি ঘটছে কিছু কিছু দেশে।

লেবাননের অবস্থা

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন গত এক দশকে এই প্রথম কলেরা আক্রান্তের খবর মিলেছে। লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী যখন এই ঘোষণা করছেন, তার অনেক আগে থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিরিয়ায় কলেরা তার করাল রূপ দেখাতে শুরু করেছে। সূত্রের সংবাদ অনুসারে লেবাননের সংক্রামিত ব্যক্তির বাস আক্কার প্রদেশে। সিরিয়া এবং লেবাননের সীমান্ত প্রদেশ আক্কার। সংক্রামিতর সন্ধান মেলার সঙ্গে সঙ্গে রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে যথাসম্ভব ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে লেবানন সরকার। সংক্রমণের পিছনে মূল কারণ সম্ভবত আন্তঃসীমান্ত সংক্রমণ। সমস্যা হল, দারিদ্র পীড়িত এই দেশটি বিদ্যুতের অভাব, জলাভাব এবং ভয়ঙ্কর মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে যুঝছে। ফলে কলেরার সঙ্গে লড়াই হয়ে উঠেছে কঠিন।

হাইতির টাইম বোম

গ্যাং ওয়ারে বিধ্বস্ত হাইতি। ক্রমাগত লুঠতরাজ, খুনোখুনি, হিংসা জর্জরিত হাইতির নাগরিকরা দাঁড়িয়ে রয়েছে ভয়ানক সঙ্কটের মুখে। ইউনিসেফ-এর প্রতিনিধির মতে হাইতিতে কলেরার ছড়িয়ে পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। হাইতি বসে রয়েছে কলেরা টাইম বোমের উপর। ইতিমধ্যেই ৮ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে। সূত্রের খবর অনুসারে ওই দেশের রাজধানী পর্তোপ্র্যাঁসে ৫৪ টি নতুন কলেরার সংক্রমণ ঘটেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় ৮ লক্ষ ২০ হাজার লোক। মারা গিয়েছিলেন ১০ হাজার লোক।

চলতি বছরের প্রাদুর্ভাবে অসংখ্য লোকের আক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। কারণ ওদেশের রাজধানীতেই ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ অভুক্ত রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। রয়েছে পানীয় জলের ভয়ঙ্কর অভাব। জ্বালানিও অমিল। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর আকাল সর্বত্র। ইউনিসেফের তরফে জানানো হয়েছে, দেশের চার ভাগের তিন ভাগ হাসপাতাল তাদের পরিষেবা প্রদান করতে পারছে না সঠিকভাবে বা পরিষেবা কমিয়ে দিতে দিতে বাধ্য হয়েছে। কিছু হাসপাতালের দরজা ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দেশের অগণিত পরিবারের কাছে অশোধিত জল পান ভিন্ন অন্য কোনও বিকল্প নেই। মানুষ অসুস্থ হওয়ার পরে ঘরেই মারা যাচ্ছে।

অন্ধকারের কাছাকাছি সিরিয়া

সিরিয়ায় ইতিমধ্যেই কলেরার কারণে ৩৯টি জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে। অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে সংক্রামিতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে ৬০০তে। সিরিয়ার অবস্থা দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, অবস্থার খুব দ্রুত অবনতি ঘটছে। সূত্রের সংবাদ অনুসারে, ১৪ টি প্রদেশের মধ্যে ১১টিতে মোট ৫৯৪ টি কলেরা সংক্রমণের খবর মিলেছে। সবচাইতে বেশি রোগীর দেখা মিলেছে আলেপ্পোতে। সম্ভবত ইউফ্রেটিস নদীর জল থেকেই সংক্রমণের ঘটনাটি ঘটেছে। জাতিসঙ্ঘের তরফে জানানো হয়েছে, সিরিয়ার ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ এই নদীর জল পান করেই জীবন ধারণ করেন।

কখন কলেরা প্রাণঘাতী?

কলেরা সংক্রমণের কারণে অ্যাকিউট ডায়ারিয়ার মতো উপসর্গ তৈরি হয়। ভিব্রিও কলেরি নামে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত খাদ্য ও জল গ্রহণ করলে কলেরা হয়। এই রোদের প্রাদুর্ভাব জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যয়ের সঙ্গে আর্থসামাজিক পরিকাঠামোর অবনমনকেও নির্দেশ করে। কলেরার মৃদু বা মাঝারি উপসর্গ প্রাণঘাতী নয়। তবে প্রবল উপসর্গের রোগীর চিকিৎসা না করালে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। কারণ ঘনঘন পাতলা পায়খানার কারণে রোগীর দেহে দেখা দেয় জলশূন্যতা। একাধিক অঙ্গ বিকল হতে থাকে ও শেষে রোগী প্রাণ হারান।

মহামারীর আশঙ্কা?

সঠিক ব্যবস্থার অভাবে অসুখটি মহামারীর রূপ ধারণ করতে পারে। গত তিনবছরে যে অঞ্চলে নিশ্চিতভাবে কলেরা সংক্রমণের খবর মেলে, সেই অঞ্চলটিকে কলেরার প্রাদুর্ভাবযুক্ত অঞ্চল বলে মনে করা হয়। রোগটি মরশুমি হতে পারে আবার বিক্ষিপ্তভাবেও বছরের নানা সময়ে হানা দিতে পারে।

মানবজাতির সঙ্কট

সুষ্ঠু পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার ঘাটতি, পরিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবেই কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বস্তি এলাকা ও শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দাদের এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। কারণ এই ধরনের এলাকায় জীবাণমুক্ত পানীয় জলের অভাব থাকে। এছাড়া সাধারণ স্বাস্থ্য পরিষেবাও জোটে না সহজে। এছাড়া ছোট জায়গায় অসংখ্য লোক গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হয়। ফলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। এছা‌ড়া যে সব অঞ্চলে হিংসাত্মক ঘটনা বেশি ঘটে, দারিদ্র চরম অবস্থা ধারণ করে ও জ্বালানির অভাব দেখা যায় সেখানেও কলেরার প্রকোপ লক্ষ করা যায়।