সাধারণত কোলন বা মলদ্বারে কোলোরেক্টাল বা রেকটাল ক্যানসার দেখা যায়। পরিপাকতন্ত্রের শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই অংশ কর্কট রোগে শিকার হলে তাকে রেকটাল ক্যানসার হিসেবে চিহ্নিত করে। সমীক্ষা বলছে, ভারতে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই মারণ রোগ ষষ্ঠ জায়গায় অবস্থান করে। এটি ঘটে যখন মলদ্বারের কোষগুলি পরিবর্তিত হয় ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা ক্যানসার রোগে পরিণত হয়। কর্কট রোগের অবস্থাকালীন মলদ্বারের ভিতরের দেওয়ালে কোনও এক স্থানে পলিপ নামক ছোট, ফুসকুড়ির মতো লক্ষণ দেখা যায়। এই ছোট ফুসকুড়িই পরবর্তীকালে ম্যালিগন্যান্সিতে পরিণত হয়।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বিকাশের পিছনে কোনও নির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অন্যতম কারণ। কর্কট রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে “মলদ্বারের ক্যানসার হওয়ার প্রধান ঝুঁকির কারণগুলি হল ধূমপান, অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণ করা, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার মধ্যে অতিবাহিত করলে কর্কট রোগের ঝুঁকি চেপে বসে। দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে বসে থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম না করা, সঙ্গে ক্রমাগত মেদ বেড়ে ওজন বৃদ্ধি হলে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, সঠিক ডায়েট মেনে চলা, নিয়মিত ব্যায়াম করলে কর্কট রোগ থেকে দূরে থাকতে পারেন।
রেকটাল ক্যানসার লক্ষণ:
রেকটাল ক্যানসারে ভুগছেন কিনা তা শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখলেই বোঝা যায়। সেইসব উপসর্গগুলি কী কী, তা জেনে নিন…
ক্লান্তি বা ওজন হ্রাস: ক্যানসার কোষগুলি শরীরের সব শক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম। যার ফলে রোগী দ্রুত দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অনেকসময় অন্য অসুখ নিরাময়ের জন্য ওষুধ খাওয়া হলে ক্লান্তি দেখা যায়। চিকিত্সার কিছু প্রতিকূল প্রভাব থেকেও ক্লান্তি হতে পারে, যেমন অ্যানিমিয়া, বমি বমি ভাব, বমি, অস্বস্তি, অনিদ্রা এবং মেজাজ পরিবর্তন।
পেটে ক্রমাগত অস্বস্তি: ফোলাভাব এবং ক্র্যাম্পগুলি ঘন ঘন হজমের সমস্যার কারণে হতে পারে। এই উপসর্গগুলি খুবই সাধারণ। কোলন বা মলদ্বার ক্যানসারের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে পেট ফুলে যাওয়া, ডিসটেনশন, ক্র্যাম্পিং বা পেট বা অন্ত্রের এলাকায় ক্রমাগত ব্যথা হওয়া। কোনও অসুস্থতা ছাড়াই ঘন ঘন সমস্যার সৃষ্টি করলে চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, আলসারেটিভ কোলাইটিস হলে ক্যানসার কোষ সৃষ্টি হতে পারে।
মলদ্বারে রক্তপাত: মলত্যাগ করার সময় হামেশাই যদি উজ্জ্বল লাল রক্ত পড়ে, তাহলে তা রেকটাল ক্যানসারের অন্যতম উপসর্গ। হেমোরয়েডের ফলে রেকটাল রক্তপাতও হতে পারে।
চিকিত্সকদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যানসারের কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। তবে গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে এই উপসর্গগুলি লক্ষ্য করা যায়। তাই সঠিক বয়সে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে মলদ্বারের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। তাতে দ্রুত শনাক্ত করা যায়। প্রতিদিন ব্যায়াম করা, ধূমপান ত্যাগ করা, অ্যালকোহল সেবন হ্রাস করা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস মেনে চললে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা যায়। রোজকার নিয়মে এগুলি পালন করলে ক্যানসারের মতো মারণ রোগও ঠেকানো সম্ভব।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।)