Fatty Liver Diet: কফি, গ্রিন টি, রসুন, সয়াবিন… ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করতে কী-কী টিপস দিলেন পুষ্টিবিদ
Diet Tips: মোটা হলে চলবে না। ঘাম ঝরানো এক্সসারসাইজ করতে হবে। যোগা, প্রাণায়মে কাজ হবে না
হঠাৎ করে ওজন বাড়ছে, চর্বির স্তর জমছে শরীরে, ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, সামান্য হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাওয়া… এমন সব লক্ষণ থাকলে প্রথমেই ডাক্তারেরা বেশ কিছু রক্ত পরীক্ষার কথা বলেন। তার মধ্যে প্রথমেই থাকে LFT এবং লিপিড প্রোফাইল। এই ওজন বাড়া, শরীরে অস্বস্তি, খেতে না-পারা… এই সব সমস্যা থাকলেই ফ্যাটি লিভার হয়েছে ধরে নেওয়া হয়। বর্তমানে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরলের মতোই জাঁকিয়ে বসেছে এই সমস্যা। যাঁরা নিজেরা সতর্ক নন, তাঁরা উপসর্গ থাকলেও বুঝতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা করলে সেখান থেকে চরম বিপর্যয় হতে পারে। আজকাল আমাদের জীবনযাত্রায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। ফুড হ্যাবিট বদলে গিয়েছে। যে কারণে লাইফস্টাইল ডিজ়িজ এভাবে জাঁকিয়ে বসছে। কোনও রকম শরীরচর্চা না করা, বসে-বসে ফাস্ট ফুড খাওয়াই এর অন্যতম কারণ।
লিভার আমাদের শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। আমাদের শরীরে বাইল তৈরি করে লিভার। এছাড়াও নানা গুরুত্বপূর্ণ উৎসেচকও তৈরি করে লিভার। যে কারণে লিভারকে সচল রাখা খুবই প্রয়োজন। লিভারে ফ্যাট জমতে শুরু করলে সেখান থেকে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। আর এই ফ্যাট জমলে সেই অবস্থাকে বলে ফ্যাটি লিভার। এতে লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লিভারের যে কোনও সমস্যার বহিঃপ্রকাশ অনেক ধীর গতিতে হয়। ফ্যাটি লিভার থেকে পরবর্তীতে লিভার সিরোসিস আর ক্যানসারের সম্ভাবনাও কিন্তু অনেকখানি বেড়ে যায়। তাই এ বিষয়ে প্রথম থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
ফ্যাটি লিভার দু’রকমের হয়: অ্যালকোহলিক এবং নন-অ্যালকোহলিক। অতিরিক্ত পরিমাণ মদ্যপান, ওবেসিটি এবং ডায়াবেটিস থেকেও হতে পারে এই সমস্যা। যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাঁদের ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আজকাল যে কোনও মানুষেরই এই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হচ্ছে। যাঁরা কোনও দিন মদ ছুঁয়েও দেখেননি, তাঁদেরও এই সমস্যা হচ্ছে। ফুড হ্যাবিট, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি, ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া—এসবই হল ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণ।
কখন তা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়? লিভারের সমস্যা হলে চট করে বোঝা যায় না। পেটে ব্যথা, খিদে না থাকা, বমি-বমি ভাব অনেকেই এড়িয়ে যান। এই সমস্যা বাড়তে-বাড়তে লিভার ফাইব্রোসিস হয়। লিভার তখন তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। হতে পারে সিরোসিস অফ লিভারও।
ফ্যাটি লিভার হলে কী করবেন? প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেতে হবে ঠিকই, কিন্তু তার থেকেও আগে ডায়েট বেঁধে ফেলতে হবে। সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মোটা হলে চলবে না। ঘাম ঝরানো এক্সসারসাইজ করতে হবে। যোগা, প্রাণায়মে কাজ হবে না।
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করতে বিশেষ ডায়েট টিপস দিলেন পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে:
কফি, গ্রিন টি—সারাদিনে দু’কাপ চিনি ছাড়া কফি বা গ্রিন টি খেতে পারেন। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভারের ক্ষতিকারক এনজাইমের মাত্রা নষ্ট করে ফ্যাটি লিভারের সম্ভাবনা কমায়।
রসুন—বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গড়ে ১৫ সপ্তাহ নিয়মিত রসুন খেলে লিভারে ফ্যাটের পরিমাণ কমে। ফলে ফ্যাটি লিভার কন্ডিশনের মাত্রা কম হয় ও লিভার এনজাইমের মধ্যে ব্যালান্স থাকে।
সয়াবিন—সয়াবিনের মধ্যে থাকে Conglycenin নামের প্রোটিন। যা ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
জটিল শর্করা এবং ওটস—ওটসের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, যা লিভার ও পেটের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। ওটসের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস, ডালিয়া, হোল হুইট আটাও খাওয়া যেতে পারে।
সবজি—সবজির মধ্যে সবুজ শাকসবজি, পেঁপে, যে কোনও রকম লেবু, ব্রকোলি, কাঁচা হলুদ রোজ খান। এতে লিভারে ফ্যাট জমে না।
বয়স, BMI, শারীরিক সমস্যা এবং কো-মর্বিডিটির উপর নির্ভর করে প্রতিটি মানুষের ডায়েট চার্ট আলাদা হয়। তবুও যে ভাবে খেতে পারেন-
এইভাবে নিয়ম মেনে চলতে পারলেই যে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর হয়ে যাবে তা নয়, কিছুটা কমবে। শরীরের মোট ওজন থেকে অন্তত ১০% কমাতে পারলে ফ্যাটি লিভারের পরিমাম ৩-৫% কমানো যায়।