আজকাল অধিকাংশ মানুষই কাজ করার সময় দু’কানে গুঁজে রাখেন ইয়ারফোন (Earphone)। কাজের প্রয়োজনে প্রচুর মানুষকে দীর্ঘক্ষণ হেডফোন-ইয়ারফোন ব্যবহার করতে হয়। কারণ হেডফোন ছাড়া কোনও গতি নেই। এছাড়াও অফলাইনে ক্লাস হলেও অনলাইন ক্লাসের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। অনলাইনে কোচিং, টিউশনের এখন দেদার ঝোঁক। সেখানেও কাজ করতে হয় কানে হেডফোন গুঁজে। সারাক্ষণ কানে হেডফোন বা ইয়ার ফোন দিয়ে রাখা যে ঠিক নয়, এ কথা আমরা আগেও শুনেছি। যদিও লকডাউনে ভীষণরকম বেড়েছে সেই প্রবণতা। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ফলই বা কী? কী-কী সমস্যা নিয়ে আসছেন রোগীরা? এ বিষয়ে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় কান-নাক-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌমিত্র কুমারের সঙ্গে।
কাজের প্রয়োজনেই অনেককে দীর্ঘক্ষণ হেডফোন ব্যবহার করতে হয়। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী?
শরীরের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকারক টানা হেডফোন বা ইয়ারফোনের ব্যবহার। পেশার প্রয়োজনে অনেককেই হেডফোন ব্যবহার করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। ৩০ মিনিট অন্তর-অন্তর হেডফোন খুলে কানকে ৫ মিনিটের জন্য বিশ্রাম দিতে হবে। তবে সারা দিনে ৪-৫ ঘন্টার বেশি হেডফোনের ব্যবহার কোনও মতেই চলবে না। এর বেশি হলেই শ্রবণশক্তি হারানোর সম্ভাবনা থাকে। সেই সঙ্গে কানে ফাঙ্গাসও (Otomycosis) হতে পারে। বর্ষাকালে যার সম্ভাবনা বেশি।
কতজন রোগী আসছেন এই সমস্যা নিয়ে?
কোভিডের সময় এই সমস্যা প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছিল। আগের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ এখন কানের সমস্যা নিয়ে আসেন। কোভিডের সময়ে সকলেই গৃহবন্দি। ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতেন। অনেকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না থাকায় বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় কথা সারতে হত ফোন, ভিডিয়ো কলে। তাই সারাক্ষণ হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করতে হয়। পরবর্তীতে কানে ব্যথা, পুঁজ নিয়ে প্রচুর সংখ্যক মানুষ এসেছেন। কানে সংক্রমণও হয়েছে। কিছুজনের ক্ষেত্রে সাময়িক শ্রবণশক্তি হারিয়ে যাওয়া (Hearing Loss)-এর সমস্যাও হয়েছে।
এক্ষেত্রে কী করনীয়?
আজকাল সব ফোনেই Recommended Sound Level থাকে। তার তুলনায় বেশি হয়ে গেলেই ফোন কিন্তু তা জানান দেয়। তাই সেই লেভেলের বেশি কখনওই উঠবেন না। অনেকে জোরে গান শুনতে পছন্দ করেন। এই অভ্যাসে বদল আনতে হবে। সব সময় নির্দিষ্ট ডেসিবেল মেনে চলতেই হবে। নইলে বধিরতা আরও বাড়বে।
কোন বয়সের মানুষদের মধ্যে কানের সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে?
বয়সের কারণে ৬০ বছরের পর তো এই সমস্যা আসেই। তবে এখন ৫০ পেরোতে না পেরোতেই কানে কম শোনার সমস্যা হচ্ছে। যাঁরা ট্র্যাফিক পুলিশে কর্মরত বা কোনও কারখানায় রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ৪০ পেরোতে না-পেরোতেই কানে কম শোনার সমস্যা হচ্ছে।
আজকাল অনেক বাচ্চা কথা বলতে দেরি করছে। কথা বলতে অসুবিধে হচ্ছে। এটা কেন?
মূলত নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি-ই এর জন্য দায়ী। আজকাল বাচ্চাদের কথা বলার লোক নেই। আগে ভাই-বোন থাকত। এখন তা-ও থাকে না। কোভিডকালে বাচ্চারা স্কুলে যায়নি, দীর্ঘদিন গৃহবন্দি ছিল। যে কারণে তাদের মধ্যে কথা বলার প্রবণতা কম।